ভ্যানাভাত ও পিকল ভাগ করার কাহিনী


       ফান চুন আন চীনের ইতিহাসের একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যিক । তিনি শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ অবদান রাখেন নি , সাহিত্য ও সামরিক ক্ষেত্রেওদক্ষতা দেখিয়েছিলেন । তার লেখা সবচেয়ে নামকরা প্রবন্ধের নাম হলো ‘ ইউয়ে ইয়ান লৌ চি ’ । তার এই প্রবন্ধের কথাগুলো এখনও চীনাদের মুখে মুখে । ভ্যানাভাত ও পিকল ভাগ করার কাহিনীছোট বেলাফ্যান চুন আনের কঠোরভাবে অধ্যয়নের একটি কাহিনী। 

  খৃষ্টীয় দশম শতাব্দীতে ফান চুন আন জন্মগ্রহন করেন । তার বয়স যখন তিন বছর , তার বাবা রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন । পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ । ফান চুন আন পনেরো-সোলো বছর বয়সে একা পড়াশুনার জন্য বাড়ী ত্যাগ করেন । তিনি ‘ইন থিয়েন ফু ’ নামে একটি বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন । খাবার কেনার পয়সা কম বলে ফান চুন আনকে দীর্ঘসময় প্রতিদিন ভ্যানা ভাত খেতে হয়েছিল ।প্রতি দিন সকালে তিনি ভ্যানাভাত তৈরী করেন । ভ্যানাভাত ঠান্ডা হয়ে জমে থাকার পর তিনি ভ্যানা ভাতও পিকলগুলো তিন ভাগে ভাগ করেন , প্রতি দিন ফান চুন আন ভ্যানাভাত ও পিকল খেতেন । 

  একদিন ফান চুন আন তার ভ্যানাভাত খাচ্ছিলেন । তার এক বন্ধু তাকে দেখতে আসেন ।টেবিলের ভ্যানাভাত দেখে বন্ধুর মনে কষ্ট হলো । তিনি টাকা বের করে ফান চুন আনকে কিছু ভালো খাবার কেনার অনুরোধ জানালেন।কিন্তু ফান চুন আন দৃঢভাবেপ্রত্যাখ্যান করেন । তার বন্ধু কোনো উপায় না দেখে পরদিন অনেক খাবার নিয়ে তাকে উপহার দিলেন , ফান চুন আন বন্ধুর সদ্দিচ্ছা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন না , তাই খাবারগুলো গ্রহণ করলেন ।  

   কিছু দিন পর তার এই বন্ধু আবার তার বাসায় গেলেন । তিনি তার বাসায় দেখলেন তার উপহার দেয়া মাছ ও মাংস পচে গেছে , এগুলোর উপর ছাতা ধরেছে । ফান চুন আন তার উপহার দেওয়া এই সব সুস্বাদু খাবার কিছুই খান নি । এই দৃশ্য দেখে তার বন্ধু ভীষণভাবে রেগে গিয়ে ফান চুন আনকে বললেন , তুমিসত্যিই একজন অহংকার মানুষ , বন্ধুর কিছু খাবার পর্যন্ত গ্রহণ করো না । আমি দুঃখিত ।

  ফান চুন আন হেসে বললেন , আপনার ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে । আমি যে এই সব ভালো ভালো খাবার খাই নি , তার কারণ নিজের মুখ রক্ষার জন্য নয় , আমার এই সব খাবার খাওয়ার সাহস পাই নি ।আমি চিন্তা করছি এই সব খাবার খেয়ে আমি আর ভ্যানাভাত ও পিকল খেতে পারবো না । আপনার সদিচ্ছার জন্য আমি কৃতজ্ঞ , আপনি রাগ করবেন না । তার বন্ধু এই কথা শুনে ফান চুন আনকে আরো শ্রদ্ধা করতে শুরু করেন । 

  একবার একজন ব্যক্তি ফান চুন আনের আকাঙ্খা জিজ্ঞেস করেন । ফান চুন আন বললেন , আমার আকাঙ্খা দুটি , একটি হলো একজন ডাক্তার হয়ে রোগীদের চিকিত্সা করা , আমার আরেকটি আকাঙ্খা হলো ভালো প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ পরিচালনা করা । পরে ফান চুন আন প্রধানমন্ত্রী হয়ে সুং রাজবংশের একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ হয়েছেন । 

  ফান চুন আন শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করা আর আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংস্কারকে দেশকে শক্তিশালী করার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য মনে করেন । দেশের জন্যযোগ্য ব্যক্তিত্ব তৈরীর জন্য তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং শিক্ষকদের মান উন্নত করার চেষ্টা করেন । তিনি দক্ষ ব্যক্তিদের সাহায্য করেন । চীনের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যিক ও-ইয়ান -সিউ , সাহিত্যিক চৌ তুন ই আর দার্শনিক চান চাই প্রমুখ ফান চুন আনের সাহায্য পেয়েছিলেন । 

  প্রশাসনের কাজের ফাকে ফাকে ফান চুন আন রচনার কাজও করেছিলেন । সাহিত্য রচনায় তিনি ফাকা কথা লেখার ঘোর বিরোধী । তিনি মনে করেন সাহিত্য সমাজের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সমাজের উন্নয়ন তরানিত করা উচিত । তার এই দৃষ্টিকোন পরবর্তীকালের সাহিত্য উন্নয়নকে তরান্বিত করেছে ।