খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর সময় ছিন রাজবংশ ছিলো চীনের ইতিহাসে প্রথম একত্রিত সামন্ততান্ত্রিক রাজবংশ । চীনের মহাপ্রাচীর ছিন রাজবংশের সময় প্রতিষ্ঠিত হয় । কিন্তু ছিন রাজবংশের দুজন রাজা প্রজাদের পীড়নমূলক শাসন চালিয়েছিলেন বলে ছিন রাজবংশ মাত্র ১৫ বছর স্থায়ী ছিলো । ছিন রাজবংশের শেষ আমলে কৃষক আন্দোলনে অনেক বীর দেখা দিয়েছিলো , হান সিন তাদের মধ্যে একজন বিখ্যাত সামরিক কমান্ডার ।
হান সিন প্রাচীন চীনের একজন বিখ্যাত সামরিক কমান্ডার । তিনি গরীব পরিবারের ছেলে , অল্পবয়সেই তার বাবা-মার মৃত্যু হয় । তিনি ব্যবসা করতে পারেন না , চাষাবাদের কাজও করতে চান না । তাই তিনি কষ্টকর জীবন যাপন করেছিলেন , তার পক্ষে পেট ভরে খাওয়া একটি বড় সমস্যা । একজন স্থানীয় কমর্চারীর সঙ্গে হান সিনের সম্পর্ক ভালো , তাই হান সিন প্রায়ই এই কমর্চারীর বাড়ীতে খেতে যেতেন । বার বার খাওয়ার দরুন এই কমর্চারীর স্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেন । হান সিনকে বাধা দেওয়ার জন্য তিনি নির্দিষ্টসময়ের আগেই খাওয়া-দাওয়া শেষ করেন , হান সিন এর জন্য রাগ করে এই কমর্চারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন ।
জীবনের জন্য হান সিন হুয়াই নদীর তীরে মত্স শিকার করতে যেতেন । পাশে কাপড়-ধোয়া একজন বুড়ীমা নিজের ভাত ও তরকারী হান সিনকে খেতে দেন । একটানা কয়েক মাস এই বুড়ীমাহান সিনকে খাবার দেন । হান সিন এই অপরিচিত বুড়ীমার কান্ড দেখে মুগ্ধ হয়ে বললেন , এমন একদিন আসবে আমি আপনার উপকারের প্রতিদান করবো । তার এই কথা শুনে বুড়ীমা রাগ করে বললেন , তুমি একজন পুরুষ , কিন্তু নিজের জন্য খাবার যোগাড় করতে পারছো না । আমি দয়া করে তোমাকে খাবার দিয়েছি । আমি তোমার প্রতিদানের জন্য তোমাকে সাহায্য করিনি । হান সিন বুড়িমার কথা শুনে লজ্জা বোধ করেন , তিনি সময় নষ্ট না করে কিছু তাত্পর্যপূর্ণ কাজ করতে দৃঢ সংকল্পবদ্ধ ।
হান সিনের জন্মস্থান হুয়াং ইং শহর । এই শহরের কিছু যুবক হান সিনকেতুচ্ছ করে । একদিন একজন ছেলে সাস্থ্যবান হান সিনের গায়ে একটি তলোয়ার দেখে মনে করেন হান সিন একজন কাপুরুষ । তাই হান সিনকে বললো , তোমার সাহস থাকলে তুমি কোমরের তলোয়ার দিয়ে আমাকে মেরে ফেলবে , কাপুরুষ হলে আমার দু পায়ের মধ্য দিয়ে পার হও । হান সিন তার কথা শুনে কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন , তার পর হান সিন সেই ছেলের দুই পায়ের মধ্যে পার হলেন । এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবাই হেসে উঠলো । তারা মনে করে হান সিন একজন কাপুরুষ । এটাই হান সিনের অপমান সহ্য করার কাহিনী ।
আসলে হান সিন একজন ধীশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি । তিনি লক্ষ্য করেছেন তখন সমাজ এক পরিবর্তনশীল সময়পর্বে রয়েছে । তাই তিনি সমরবিদ্যা অধ্যয়ন করেন এবং শরীর চর্চা করেন । তিনি বিশ্বাস করেন , তার প্রচেষ্টা একদিন না একদিন কাজে লাগবে । খৃস্টপূর্ব ২০৯ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিন রাজবংশ বিরোধী কৃষক আন্দোলন শুরু হয় । হান সিন এক সবচেয়ে শক্তিশালী দলে যোগ দিলেন । এই দলের প্রধান ছিন রাজবংশের পতনের পর প্রতিষ্ঠিত রাজবংশের প্রথম রাজা লিউ পান । প্রথম দিকে হান সিন মাত্র লিউ পান দলের খাবার ওজ্বালানী কাঠ পরিবহন বিভাগের একজন নিম্ন শ্রেণীর কর্মী ছিলেন । পরে হান সিন লিউ পানের উপদেষ্টা সিয়াও হোর সঙ্গে পরিচিত হন । তারা দুজন একসঙ্গে দেশের পরিস্থিতি ও সমরবিদ্যা আলোচনা করেন । সিয়াও হো মনে করেনহান সিন একজন দক্ষ ব্যক্তি এবং হান সিনকে লিউ পানের কাছে সুপালিশ করেন।কিন্তু লিউ পান হান সিনকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেন নি ।
একদিনহান সিন হতাশ হয়ে গোপনে লিউ পানের দল ত্যাগ করেঅন্য দলে যোগ দিলেন । হান সিনের ত্যাগের খবর পেয়ে সিয়াও হো লিউ পানকে না জানিয়ে ঘোড়ার পীঠে চড়ে বসে তাকে ধাওয়া করতে গেলেন । লিউ পান সিয়াও হো ও হান সিনকে দেখতে না পেয়ে মনে করেন দুজন পালিয়েছে । দুদিন পর সিয়াও হো ও হান সিন একসঙ্গে ফিরে এলেন । লিউ পান সিয়াও হোকে দুদিন অদৃশ্য হয়ে আবার ফিরে আসার কারণ জিজ্ঞেস করেন । সিয়াও হো বললেন , আমি আপনার জন্য হান সিনের পিছু ধাওয়া করতে গিয়েছি । লিউ পানের মনে প্রশ্ন জাগলোঃসৈন্য দল থেকে পালিয়ে যাওয়া কমান্ডারহান সিন একা নয় । সিয়াও হো একবারও তাদের পিছু ধাওয়া করেন নি , কেন তাকে না জানিয়ে একা হান সিনের পিছু ধাওয়া করতে গেলেন । সিয়াও হো বললেন , আগে পালিয়ে যাওয়া কমান্ডাররা সব সাধারণ কমান্ডার , কিন্তু হান সিন এক দুলর্ভ ব্যক্তি । আপনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পেতে চাইলে হান সিনের চেয়ে যোগ্য উপদেষ্টা আর পাবেন না । লিউ পান সিয়াও হোকে বললেন , তাহলেআপনি হান সিনকেআপনার অধীনেকাজ করার ব্যবস্থা করুন। সিয়াও হো বললেন , সাধারণ কমান্ডারের দায়িত্ব দিলে হান সিনগ্রহণ করবেন না ।লিউ পান বললেন , তাহলে আমি তাকে সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব দেবো । এইভাবে হান সিন একজন খাবার পরিবহন অফিসার থেকে লিউ পান দলের সর্বাধিনায়ক হলেন । রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের সংগ্রামে হান সিন বিরাট অবদান রেখেছিলেন ।
|