পাঁচ তৌ চাউলের জন্য মাথা নত না করার কাহিনী


       থাও ইউয়েন মিং প্রাচীন চীনের একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক । তাঁর লেখা কবিতা ও প্রবন্ধগুলোছাড়া তারসাধারণঅধিবাসী অত্যাচারকারী সরকারী কর্মচারী ও ধনী ব্যক্তিদের তুচ্ছ করার মনোভাবও প্রশংসার যোগ্য । 

  খৃষ্ট ৩৬৫ সালে থাও ইউয়েন মিং জন্মগ্রহণ করেন , তিনি চীনের সবচেয়ে আগেকার লোক-কবি । থাও ইউয়েন মিংয়ের আমলে রাজবংশ বার বার পরিবর্তনের দরুণসমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় , জনসাধারণের জীবন শোচনীয় । খৃষ্ট ৪০৫ সালের শরত্কালে জীবীকার জন্য থাও ইউয়েন মিং নিজের জন্মস্থান ছেড়েফেন চে জেলার জেলাপ্রশাসক হন । এই বছরের শীতকালে তার উপরওয়ালাফেন চে জেলা পরিদর্শনের জন্য একজনপদস্থ কর্মচারী পাঠিয়েছেন । এই পদস্থ কর্মচারী এক কুত্সিত ও অহংকার ব্যক্তি । ফেন চে জেলায় এসেই তিনি জেলা প্রশাসক থাও ইউয়েন মিংকে ডেকে পাঠানোর আদেশ দিলেন । 

  খবর পেয়ে থাও ইউয়েন মিং মনে মনেউপরওয়ালার নামে তার উপর আদেশজারীর জন্য এই কমর্চারীকে তুচ্ছ করেন , তবুও তিনি তার সঙ্গে দেখা করার প্রস্তুতি নিয়েছেন । এই সময় তার একজন সহকারী তাকে বললো ,এই কমর্চারীর সঙ্গে দেখা করার সময় আপনাকে সাবধানে থাকতে হবে , আপনাকে ভালো কাপড় পরতে হবে এবং বিনয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে , তা’ নাহলে এই কমর্চারী উপরওয়ালার সামনে আপনাকে দোষারোপ করবেন ।  

  সহকারীর এই কথা শুনেথাও ইউয়েন মিং আর সহ্য করতে পারেন না । তিনি দীর্ঘশাসন ফেলে বললেন , আমি ক্ষুধায় মরে গেলেও পাঁচ তৌ চাউলেরউপার্জনের জন্য এই ধরনের লোককে তোষামদ করতে পারবো না। এই কথা বলে তিনি একটি পদত্যাগপত্র লিখে জেলাপ্রশাসকের পদ ছেড়ে দিলেন । তখন থেকে তিনি আর সরকারী কমর্চারীর কাজ করেন নি । এই পদে তিনি মাত্র আশি দিন ছিলেন । উল্লেখ করা যেতে পারে যে , তখনকার জেলাপ্রশাসকের বেতন মাত্র পাঁচ তৌচাউল , অথার্ত ৫০ কিলোগ্রামচাউল । 

  সরকারী চাকরী ছেড়েদেওয়ার পর থাও ইউয়েন মিং নিজের জন্মস্থানে ফিরে চাষাবাদের কাজ করতে শুরু করেন । তিনি জমি চাষ করার সঙ্গে সঙ্গে অনেক কবিতা লিখেন । তিনি তার কবিতায় কৃষকদের স্বাধীন জীবন , নিজের পরিশ্রমের অভিজ্ঞতা আর কৃষকদের কষ্ট বর্ণনা করেন ।থাও ইউয়েন মিংয়ের এই সব গ্রামীণ কবিতা‌ সবচেয়ে বিখ্যাত । 

  গ্রামের জীবন স্বাধীন হলেও কষ্টকর । পরিশ্রম না করলে খাওয়া পরার সমস্যা হবে । কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে সারা বছর পরিশ্রম করেও কোনো লাভ হবে না । কাজেই জীবনের শেষ বছরগুলোতেথাও ইউয়েন মিংয়ের জীবন কষ্টকর । বিশেষ করে এক অগ্নিকান্ডে তার সমস্ত সম্পত্তিছাইহওয়ার পরতারজীবন আরো কষ্টকর হয় । ৬৩ বছর বয়সে থাও ইউয়েন মিং দারিদ্র ও অসুখে জর্জরিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন । 

  থাও ইউয়েন মিংয়ের সবচেয়ে বিরাট অবদান হচ্ছে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কৃষকের পরিশ্রম ও গ্রামীণ জীবন সম্পর্কিত প্রচুর কবিতা লিখেছেন । তার কবিতাগুলোতে তুঁত গাছ , পাট , মুর্গী ও কুকুর ইত্যাদি সাধারণ জিনিসেরমজার মজার বাক্য আছে । তিনি তার কবিতাগুলোতে প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা দর্শকদের মনে স্বচোখে এই সব দৃশ্য দেখার স্বপ্ন সৃস্টি করে । 

   কবিতা ছাড়া থাও ইউয়েন মিং প্রচুর প্রবন্ধও লিখেছিলেন । তার সবচেয়ে বিখ্যাত প্রবন্ধের নাম হলো ‘থাও হুয়া ইউয়েন সি পিন চি ’ । তিনি এই প্রবন্ধে ইউটোপিয়া ধরনের একটি সমাজের বণর্না করেছেন । এই সমাজে বিশৃঙ্খলানেই , বংশের পরিবর্তন নেই , রাজা ও মন্ত্রী নেই , কর ও খাজনা নেই , জনসাধারণ সানন্দে সুখী জীবন যাপন করেন । লেখকের সুন্দর ভাষা এই প্রবন্ধকে আরো আকর্ষীয় করে তুলেছে । আজকের লোকেরা এই ধরনের ইউটোপিয়া সমাজকে ‘ থাও হুয়া ইউয়ান ’ বলেন । 

  যদিও থাও ইউয়েন মিংয়ের পদত্যাগের দরুণ তখনকার রাজকীয় সরকারে একজন সরকারী কর্মচারী কমেছিলো , কিন্তু চীনের সাহিত্য মহলে একজন সাহিত্যিক বেড়েছে । থাও ইউয়েন মিংয়ের পাঁচ তৌ চাউলের জন্য নতজানু না হওয়ার কাহিনী চীনের বুদ্ধিজীবীদের ন্যায্যতা ও ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের প্রতি নতি স্বীকার না করার গুনের প্রতীক হয়েছে । দৈনন্দিন জীবনে যদি একজন সত্ লোক সুবিধা পাওয়ার জন্য নিজের নৈতিকতা হারাতে চান না , তাহলে তিনি বলবেন , আমি পাঁচ তৌ চাউলের জন্য নতজানু হবো না ।