খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতেপন্ডিত কনফুসিয়াস চীনের ইতিহাসের একজন বিখ্যাত চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদ । তার সৃষ্ট রু সম্প্রদায়ের তত্ব চীনের সংস্কৃতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে । চীনের সুদীর্ঘ সামন্ততান্ত্রিক সময়পর্বে শাসকরা রু সম্প্রদায়ের চিন্তাধারার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন । কনফুসিয়াস ও তার পরিবার চীনের বিখ্যাত পরিবার , তার উত্তরসূরীদের মধ্যে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন । তার বিংশতিতম নাতী খোং রোন তাদের মধ্যে একজন । চীনা প্রবাদ ‘ সিয়াও শি লিয়াও লিয়াও , তা উই পি চিয়া ’তে খো রোন সম্পর্কিত একটি কাহনী বর্ণনা করা হয়েছে ।
এই কাহিনী প্রাচীণ চীনের বিখ্যাত গল্পসংগ্রহ ‘ সি সুও সিন ইয়ু ’ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে ।
খোন রোন খৃষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর সময় চীনেরহান রাজবংশের একজন পন্ডিত । পরিবারের প্রভাবে ছোট বেলা থেকেই খোন রোনতার বুদ্ধির পরিচয় দেখিয়েছিলেন । তিনি কথা বলতে বিশেষ পটু , তাই অল্প বয়সেই তিনি একজন বিখ্যাত ব্যক্তি হয়েছিলেন ।
খোন রোনের বয়স যখন ১০ বছর , তিনি বাবার সঙ্গে রাজধানী লোইয়ানে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসক লি ইউয়ান লির সঙ্গে দেখা করেন । লি ইউয়ান লি একজন অহংকার মানুষ । তার সঙ্গে দেখা করার লোক বেশী বলে তার নির্দেশ অনুসারে আগত লোকের কোনো খ্যাতি না থাকলে দারোয়ান তাকে জানাতেন না ।
দশ বছর বয়সের খোন রোন এই বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে চান। একদিন খোন রোন লি ইউয়েন লির বাসার সামনে গিয়েদারোয়ানকেতার আসার খবর দিতে অনুরোধ জানালেন । দারোয়ান খোন রোনকে দেখে ভাবলেন , নিজের মালিক একজন ছোট বাচ্চার সঙ্গে দেখা করবেন না , তাই খোন রোনকে চলে যেতে বললো । এই কথা শুনে খোন রোন দারোয়ানকে বললেন , আমি লি ইউয়ান লির আত্মীয় । আপনি এই কথা তাকে বললে তিনি অবশ্যই আমার সঙ্গে দেখা করবেন ।
দারোয়ানের কথা শুনে লি ইউয়েন লিরমনে প্রশ্ন জাগল ,তার আত্মীয়দের মধ্যে খোন রোন নামে কোনো ব্যক্তি নেই । তবুও তিনি খোন রোনের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলেন ।
খোন রোনকে দেখে লি ইউয়েন লি তাকে জিজ্ঞেস করেন , আমার সঙ্গে তোমার কোনো আত্মীয়ের সম্পর্ক আছে ?
খোন রোন উত্তরে বললেন , আমি কনফুসিয়াসের উত্তরসুরী , আপনি লাও চির উত্তরসুরী ।পৃথিবীর সব লোকই জানেন যে কনফুসিয়াস লাওচিকে শিষ্টাচার সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছিলেন , তাই তাদের দুজনের সম্পর্ক হলো শিক্ষক ও ছাত্রের সম্পর্ক , তাই আমি ও আপনার মধ্যেও সুগভীরসম্পর্ক আছে ।
চীনের ইতিহাসে কনফুসিয়াসের একই যুগেলাও চি নামে আরেকজন বিখ্যাত দার্শনিক ছিলেন । লাও চির আসল নাম লি তান । তিনি তাও সম্প্রদায়ের তত্বের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন । জানা গেছে কনফুসিয়াস মাঝেমধ্যেছাত্র হিসেবে লি তানকে প্রশ্ন করতেন ।
সেদিন লি ইউয়েন লির বাসায় অনেক মেহমান ছিলেন । সবাই দশ বছর বয়সের খোং রোংয়ের বুদ্ধি ওজ্ঞানেরপ্রশংসা করেন ।
ঠিক এই সময় ছেন উয়েই নামে একজন ব্যক্তিলি ইউয়েনলির সঙ্গে দেখা করতে আসেন । ছেন উয়েই তখনকার একজন বিখ্যাত পন্ডিত । উপস্থিত অতিথিরা খোন রোনের কথা তাকে জানালেন ।ছেন উয়েই খোন রোনের কথা শুনে আপত্তি করে খোন রোনকে বললেন , সিয়াও সি লিয়াও লিয়াও , তা উই পি চিয়া । তার এই কথার অর্থ হলো ছোট বেলায় বুদ্ধিমান হলেও বড় হলেযোগ্য ব্যক্তি নাও হতে পারে । বুদ্ধিমান খোন রোন তত্ক্ষনাত তার এই কথা খন্ডন করে বললেন , আমি ভাবছি ছোটবেলায় আপনিও বুদ্ধিমান ছিলেন । খোন রোনের এই কথার অর্থ হলো ছেন উয়েইয়ের উক্তি অনুসারে এখন ছেন উয়েই কোনো বুদ্ধিমান পন্ডিত নয় । খোন রোনের এই কথা শুনে ছেন উয়েই অনেকক্ষণউত্তর দেওয়ার কথা খুঁজে পান না ।
এই কাহিনী ছাড়া খোং রোংয়ের নাশপাতি বিলির কাহিনীও চীনে সবাই জানেন । এই কাহিনীতে বলা হয়েছে , ছোটবেলায় খোং রোং পরিবারের সকল সদস্যের সঙ্গে নাশপাতি খান । খোং রোং সব সময়ই বড় নাশপাতি বয়োবৃদ্ধদের দিতেন , ছোট নাশপাতি নিজে খেতেন ।
বড় হওয়ার পর খোং রোংএকজন পন্ডিত হন । তিনি একজন স্থানীয় প্রশাসকের কাজ করতেন ।সেই আমলে চীন এক একত্রিত দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে । ইতিহাসে এই সময়পর্বকে ‘ তিন রাজ্য যুগ ’ বলা হয়।খোং রোং একজন ঐতিহ্যিক পন্ডিত ছিলেন , তিনি তার কথাবার্তা ও রচনায়দেশের বিচ্ছিন্ন অবস্থার প্রতি উদ্বেগ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন । শেষে চীনের ইতিহাসের আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছাও ছাও খোং রোংকে হত্যা করেন ।
|