হুয়ান পাহাড়ের কাহিনী


       মধ্য ও দক্ষিণ চীনে অবস্থিত হুয়ান পাহাড় চীনের একটি বিখ্যাত দর্শনীয় এলাকা ও বিশ্ব উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর অন্তর্ভূক্ত একটি নামকরা পর্যটন স্থান । হুয়ান পাহাড়ের আগের নাম ছিলো ই পাহাড় , ই’র অর্থ কালো , এই পাহাড়ের পাথর কালো বলে পাহাড়ের নাম ই পাহাড় ছিলো । পরে কেন এই পাহাড়ের নাম হুয়ান পাহাড়ের পরিবর্তিত হয়েছে ? 
  চীনের উপকথায় বলা হয়েছে হুয়ানতি চীনা জাতির প্রতিষ্ঠাতা । জীবিতকালে হুয়ানতি রাজা ছিলেন , তার শাসনাধীনে অধিবাসীরা সুখে জীবন যাপন করতেন । তাই তারা হুয়ানতিকে শ্রদ্ধা করতেন । বয়স বেশি হয়েছে বলে হুয়াংতি রাজার আসন সাওহাও নামে এক যুবককে দিলেন । হুয়াংতি এক প্রাণবন্ত ব্যক্তি ছিলেন । তিনি মৃত্যু বরণ করতে চান না , তাই দীর্ঘজীবী হওয়ার জন্য হুয়ানতি তাও ধর্মের শিক্ষক রোনছেনচি ও ফোছিউকোনের সঙ্গে অমরত্বের ওষুধ তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন ।  

  তাও ধর্ম চীনা জাতির একটি ধর্ম । এই ধর্মের ইতিহাসে অমরত্বের ওষুধ তৈরির ঐতিহ্য আছে । তাও ধর্মের মতে সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জায়গায় কেবল অমরত্বের ওষুধতৈরি সম্ভব । তাই হুয়াংতি ও তার দুজন শিক্ষক এই ধরনের মনোরম দৃশ্যের জায়গা খুঁজতে শুরু করেন। 

  তারা দেশের অনেক অঞ্চলে বেড়াতে গিয়েছেন । শেষে মধ্য ও দক্ষিণ চীনের ই পাহাড়ে পৌছেন । সেখানকার পাহাড়েরউচু চুড়া দেখতে ভারী সুন্দর । আকাশের সাদা মেঘ রেশমী কাপড়ের মতো চুড়াগুলোর চারপাশে ভাসে । চুড়াগুলোর উপত্যকাগুলো সুগভীর ,উপত্যকায় মেঘ ও কুয়াসা মিশে একাকার হয় । হুয়াংতি মনে করেন , ই পাহাড় অমরত্ব তৈরি সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান । 

   তারা প্রতিদিন কাঠ কেটে কাঠকয়লা তৈরি করেন এবং ভেষজ ওষুধের সঙ্গে নানা ধরনের পাথর সিদ্ধ করেন । যে কোনো খারাপ আবহাওয়ার দিনেও তারা তাদের পবিত্র কাজ বন্ধ করেন না । তারা জানেন , অমরত্বের ওষুধ তৈরির জন্য বার বারভেষজ পাতা সিদ্ধ করতে হয় ।চার শ’ আশি বছর পর তারা সোনালী রংয়ের অমরত্বের ওষুধ তৈরির কাজ সম্পন্ন করেন । হুয়াংতি একটি ওষুধ খেয়ে মুহুর্তের মধ্যে তিনি পাখির মতো হালকা মনে করেন । অল্প দিন পর তার পাকা চুল আবার কালো হলো , কিন্তু তার মুখের ভাঁজগুলোর কোনো পরিবর্তন হয়নি । 

  ঠিক এই সময় দুটি পাহাড়ের সংযোগস্থল থেকেলাল রংয়ের ঝরনার পানি বের হলো । এই ঝরনার পানি গরম ও সুগন্ধ । ফুছিউকোন হুয়াংতিকে এই লাল রংয়ের পানিতে গোসল করতে বলেন । হুয়াংতি এই পানিতে সাত দিন সাত রাত ছিলেন । এক সপ্তাহ পর হুয়াংতির গায়ের ও মুখের পুরানো চামড়া পানির সঙ্গে ভেসে অদৃশ্য হলো । ঝরনার পানি থেকে উঠে হুয়াংতির মুখ লাল , গায়ের চামড়া মসৃণ , হুয়াংতিদেবতায় পরিণত হলেন , তার কখনও মৃত্যু হবে না । হুয়াংতি এই পাহাড়ে দেবতা হয়েছেন বলে ই পাহাড়ের নাম হুয়ান পাহাড়ে পরিবর্তন করা হয়েছে । 

  হুয়াং পাহাড়ের এক সবচেয়ে বিখ্যাত দৃশ্যের নাম হলো ‘ মুনপিসেনহুয়া ’ । পাহাড়ের উপত্যকায় একটি পাথরের থাম খাড়া হয়ে দাড়িয়ে আছে । থামের নীচের অংশচিকন , যেন একটি কলম , থামের সবচেয়ে নীচু অংশ দেখতে প্রাণীর লোম দিয়ে তৈরি তুলির মতো । থামের উপরে এক পাইন গাছ , যেনএকটি কলমের উপর ফুল ফুটে আছে । এই থাম সম্পর্কে একটি কাহিনী আছে ।  

  একটি উপকথায় বলা হয়েছে , প্রাচীন চীনের বিখ্যাত কবি লিপাই একদিন গভীর রাত্রে স্বপ্ন দেখছিলেন । তিনি স্বপ্নেকবিতা আবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের সঙ্গে সমুদ্রের একটি পাহাড়ে উঠেন । এই পাহাড়ের চার পাশে সাদা মেঘ , মাঝখানেসবুজ গাছগাছড়া । কবি এই সুন্দর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন । ঠিক এই সময় শুভ্র মেঘের মাঝখানে একটি মস্ত বড় প্রাণীর লোম দিয়ে তৈরি তুলির মতো একটি কলম বের হয় । তিন মিটার উচু এই কলম দেখতে পাথরের থামের মতো । লি পাই চিন্তা করেন , আমি যদি এই বড় কলম দিয়ে নীল আকাশকে কাগজ হিসেবে ব্যবহার করে পৃথিবীর সুন্দর সুন্দর দৃশ্যের কবিতা লিখতে পারি , তাহলে কতো ভালো হত !  

   ঠিক এই সময় দূর থেকে মধুর সুর ভেসে আসে এবং কলমথেকে আলো বের হয় । তারপর কলমের মাঝখানে একটি উজ্জ্বল লাল ফুল ফুটে । এই ফুল ফুটা কলম তার দিকে আসতে শুরু করে ।এই উজ্জ্বল কলম ক্রমেই কাছে আসছে দেখে লিপাই হাত বাড়িয়ে তা’ ধরার চেষ্টা করেন । এই বড় কলম ধরার সঙ্গে সঙ্গেই লিপাই জাগলেন । 

   স্বপ্ন থেকে জেগে উঠার পর লিপাই বার বার নিজেকে প্রশ্ন করেন স্বপ্নে দেখা এই মনোরম দৃশ্য কোথায় ? এই সুন্দর দৃশ্য খুঁজে বের করার জন্য লিপাই দেশের বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করেন । একদিন হুয়াং পাহাড়ে গিয়ে পাথরের থামের নীচ অংশের তুলি ও থামের উপরের পাইন গাছ দেখে তিনি বুঝতে পেরেছেন তার স্বপ্নের সুন্দর দৃশ্য হুয়াং পাহাড় । 

  জানা গেছে ,স্বপ্নে এই মস্ত বড় কলম দেখার পর লিপাই প্রচুর কবিতা লিখেছেন , এই বড় পাথরের কলম তার কবিতার উত্সে পরিণত হয়েছে ।