ইয়াংসি নদীর তিন গিরিখাতের কাহিনী


       ইয়াংসি নদী চীনের দীর্ঘতম আর এশিয়ার তৃতীয় দীর্ঘতম নদী । ইয়াংসি নদীর উপর ও মধ্য ভাগে তিনটি গিরিখাত আছে , এই তিনটি গিরিখাত হলো ছুথান গিরিখাত , উ গিরিখাত ও সিলিন গিরিখাত । এই তিনটি গিরিখাতই চীনের বিখ্যাত তিন গিরিখাত । এই তিন গিরিখাতের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় দু শ’ কিলোমিটার । তিন গিরিখাত বরাবর অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্য মনোরম , এই অঞ্চল বিশ্ববিখ্যাত দর্শনীয় এলাকা । 

  তিন গিরিখাতের পশ্চিম দিকে অবস্থিত ছুথান গিরিখাতে ‘ পাইতিনছেন ’ নামে একটি দর্শনীয় স্থান আছে । ‘ পাইতিনছেন ’ সম্পর্কে একটি কাহিনীও আছে , কাহিনীর নায়কের নাম কোনসুনসু । 

  খৃষ্টীয় ২৫ সালে চীন বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিলো । কৃষকরা অভুত্থান চালিয়ে পশ্চিম হান রাজবংশের পতন ঘটিয়েছে । কিন্তু নতুন রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।স্থানীয় সামরিক কমান্ডার কোনসুনসু দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে অবস্থান করেন , তিনি আশা করেন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির নতুন পরিবর্তন দেখা দেবে । 

  একদিন কোনসুনসু রাত্রে একটি স্বপ্নদেখলেন । স্বপ্নে একজন লোক তাকে বললেন , আপনিআগামী বারো বছরের মধ্যে রাজা হবেন । জেগে উঠে কোনসুনসু এই অদ্ভুত স্বপ্নের কথা চিন্তা করেন । পরদিন সকালে কোনসুনসু নিজের উঠানে হাটাহাটির সময় দেখলেন বাগানের কুয়ো থেকে সাদা রংয়ের হাওয়া বের হচ্ছে , যেন একটি সাদা রংয়ের ড্রাগনআকাশে উঠছে । কোনসুনসু মনে করেন রাত্রের স্বপ্ন ও সামনের এই সাদা ড্রাগন তার রাজা হওয়ার ইংগীত । তাই কোনসুনসু একটি অনুষ্ঠানে নিজেকে পাইতি বলে রাজা করলেন এবং ছুথান গিরিখাত কাছের ছোট শহরকে পাইতি শহর নাম দিলেন । 

   কোনসুনসুর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নাম মা ইউয়েন । মা ইউয়েন এক বুদ্ধিমান ও দক্ষ ব্যক্তি । কোনসুনসু রাজা হয়েছেন শুনে মা ইউয়েন দূর থেকে কোনসুনসুর কাছে গেলেন । তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধুর রাজ্যে কাজ করতে চান । কিন্তু কোনসুনসু নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর প্রতি আগের মতো ভালো ব্যবহার করেন নি । তিনি মা ইউয়েনের জন্য এক সেট সুতিকাপড়ের সাধারণ পোশাক তৈরির নির্দেশ দিলেন। তার পর রাজ্যের একটি বিরাটাকার অনুষ্ঠানে কোনসুনসু মা ইউয়েনকে তার দেওয়া এই সাধারণ পোশাক পরেতার সঙ্গে দেখা করার আদেশ দেন । সেই অনুষ্ঠানে কোসুনসু মা ইউয়েনকে তার সামরিক বাহিনীর কমান্ডারের পদ দিলেন । যারা মা ইউয়েনের সঙ্গে কোনসুনসুর কাছে গিয়েছেন , তারা সবাই খুশি । তারা আশা করেন মা ইউয়েনের সঙ্গে কোনসুনসুর জন্য কাজ করবেন । কিন্তু মা ইউয়েন তাদের বলেছেন , এখন সমগ্র দেশ বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে।কে সমগ্র দেশ একত্রিত করতে পারেন , তার কোনো ঠিক নেই । এই অবস্থায় কোনসুনসু বিনয়ের সঙ্গে দক্ষ ব্যক্তিদের সংগ্রহ না করে, বরং নিজেকে বড় লোক হিসেবে মনে করে শুধু গায়ে কি ধরনের কাপড় পরা উচিত--এমনছোটখাট ব্যাপারকে গুরুত্ব দেন । কোনসুনসু দেশশাসনের বড় কাজ কিছুই জানেন না । এই ধরনের লোক কিভাবে দক্ষ লোককে রাখতে পারবেন । এই কথা বলে মা ইউয়েনবিদায় নিয়ে চলে গেলেন । 

  এই সময় মধ্য-চীনের লিউসিউ ইতিমধ্যে লোইয়াং শহরে পূর্ব হান শাসন প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি কোনসুনসুকে চিঠি লিখে দেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তাকে আত্মসমর্পনের পরামর্শ দেন । কোনসুনসু মনে করেন , আমি রাজা হয়েছি , কিভাবে আত্মসমর্পন করবো ? তাই তিনি লিউসিউয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন । খৃষ্টীয় ৩৭ সালে লিউসিউয়ের বাহিনী কোনসুনসুর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায় । কোনসুনসু লিউসিউয়ের সৈন্যের হাতে নিহত হন । 

  কোনসুনসু সত্যি বারো বছরের রাজা হয়েছিলেন । তিনি দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে মোট ২৮ বছর স্থানীয় শাসক ছিলেন । এই ২৮ বছরে দক্ষিণ পশ্চিম চীনে অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল ছিলো । রাজাহিসেবে কোনসুনসু কৃষি ও জলনিস্কাসনের উপর গুরুত্ব দিয়ে জনগনের কল্যানে অনেক হিতকর কাজ করেছিলেন । তাই কোনসুনসুর মৃত্যুর পর স্থানীয় অধিবাসীরা তার স্মৃতির জন্য পাইতিছেনে পাইতি মন্দির নির্মাণ করেন ।  

  ইয়াংসি নদীর তিন গিরিখাত বরাবর অঞ্চলে পাইতিছেন ছাড়া আরো অনেক দর্শনীয় স্থান ও উপকথা আছে । যেমন তিনগিরি খাত অঞ্চলের পাহাড়ে বারোটি সুন্দর চূড়া আছে , স্থানীয় অধিবাসীরা এই বারোটি চূড়াকে ‘ সেননুইচূড়া ’ ডাকেন এবং প্রতি চূড়ার একটি নাম দিয়ে সুন্দর সুন্দর রুপকথা প্রণয়ন করেন । 

  বতর্মানে পৃথিবীর বৃহত্তম জলবিদ্যুত প্রকল্প তিন গিরিখাত অঞ্চলে নির্মিত হচ্ছে । এই প্রকল্প নিমার্নের জন্যতিন গিরিখাত অঞ্চলে ইয়াংসি নদীর পানি বাধা দিয়ে এক বিরাটাকার জলাধার নির্মিত হয়েছে । এই জলাধারের পানির উচ্চতা ১১০ মিটার আর সমুদ্র সমতলের ১৭৫ মিটার উচু। প্রকল্পটির নিমার্ণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর তিনগিরিখাত অঞ্চলের কিছু পুরাকীর্তি ও প্রাকৃতিক দৃশ্য পানিতে ডুবে যাবে, তবে কিছু নতুন দৃশ্য দেখা দেবে ।