চীনের বিভিন্ন জায়গায় দশ হাজারেরও বেশি বৌদ্ধ প্যাগোডা আছে । চীনের বৌদ্ধধর্ম ভারত থেকে আসে , কিন্তু চীনের বৌদ্ধ প্যাগোডাগুলোর স্থাপত্য রীতি চীনের ঐতিহ্যিক প্যাভিলিয়নের নকশার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে ।
উত্তর চীনের সানসি প্রদেশের ফোকোন মন্দিরের শাক্যমুনি প্যাগোডা একটি বিখ্যাত প্যাগোডা , এই প্যাগোডার আরেক নাম ইং জেলার কাঠের প্যাগোডা । ১০৫৬ সালে লিয়াও রাজবংশ থেকে এই প্যাগোডা নির্মাণের কাজ শুরু হয় । ১৪০ বছর পর এই প্যাগোডার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় । এই কাঠের তৈরি প্যাগোডা চার মিটার উচু একটি মঞ্চের উপর নির্মিত হয় । প্যাগোডাটির উচ্চতা প্রায় ৭০ মিটার , তার তলার ব্যাস ৩০ মিটার । এই প্যাগোডা নির্মাণের জন্য মোট তিন হাজার ঘন মিটার কোরিয়ান পাইন গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছিলো , আর এর মোট ওজন তিন হাজার টন ।
ইং জেলার কাঠের প্যাগোডা চীনের হান ও থান রাজবংশের হান জাতির ঐতিহ্যিক স্থাপত্য শৈলী ও বৌদ্ধ প্যাগোডার স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয় করে তৈরি করা হয়েছে ।অষ্টকোনী এই প্যাগোডার বাইরে দেখতে পাঁচ তলা ,তবে ভিতরে প্রতি তলা আবার দুই ভাগে বিভক্ত । তাই এই প্যাগোডা আসলে নয় তলার একটি স্থাপত্য । প্রতি তলার বাইরে ও ভিতরে কাঠের থাম আছে । বাইরে ২৪টি কাঠের থাম , ভিতরে আটটি কাঠের থাম ।প্রতি তলা একটি অষ্টকোনী ঘর । প্যাগোডার চুড়ায় বৌদ্ধধর্মের প্রতীক ---পদ্মফুল আকারের আসন , চাকা ,বৌদ্ধ বোটল ও জপমালা রাখা । প্যাগোডার প্রতিটি তলায় বাতাসের ঘণ্টা আছে । মৃদু বাতাসে এইসব ঘণ্টা থেকে মনোহর আওয়াজ হয়। গোটা প্যাগোডা এক বৈশিষ্ট্যময় স্থাপত্য ।
এই কাঠের প্যাগোডা নির্মাণের পর নয় শ বছরে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্পের পরও এর ক্ষতি হয়নি । প্রাচীন পুথিপত্রে বলা হয়েছে , এই প্যাগোডা স্থাপনের তিন শ’বছর পর ইং জেলায় সাড়ে ছয় মাত্রার ভূকম্প ঘটেছিলো , ভূকম্পের পর একটানা সাত দিন ধরে পুনরায় ছোট ছোট ভূকম্প হয়েছিলো । আশপাশের সব বাড়ীঘরধ্বসে পড়েছিলো , কিন্তু এই প্যাগোডার কোনো ক্ষতি হয়নি । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইং জেলার আশেপাশে ঘটিত প্রচন্ড ভূমিকম্পের সময়প্যাগোডার কম্পন স্পষ্টভাবে অনুভব করা যায় । কম্পনের সময় ঘণ্টাগুলোর আওয়াজ বেড়ে যায় , কিন্তু এতে প্যাগোডার কাঠামোর কোনো ক্ষতি হয় নি । চীনের গৃহযুদ্ধের সময় দু শরও বেশি গোলা এই প্যাগোডায় পড়েছিলো , কিন্তু তাতেও প্যাগোডাটি নষ্ট হয়নি । চীনের অনেক প্যাগোডা ঝড় বাতাসের দিনে বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে , কিন্তু ইং জেলার এই কাঠের প্যাগোডা প্রচন্ড বজ্রপাতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি । অনেকে জানতে চান এই কাঠের প্যাগোডা কেনো নানা বিপদেও নষ্ট হয় নি ?
বৈজ্ঞানিকরা আবিষ্কার করেছেন ইং জেলার এই কাঠের প্যাগোডার কাঠামো ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতে পারে । কেননা এই প্যাগোডারর বহু তলার কাঠামো প্যাগোডাকে রক্ষা করেছে । তাছাড়া এই প্যাগোডা কাঠ দিয়ে তৈরি , কাঠের তৈরি স্থাপত্য বাইরের আঘাতে সহজে নষ্ট হয়না । এই প্যাগোডার উপরের লোহার চূড়ার উচ্চতা ১৪ মিটার । প্যাগোডার পক্ষে এই লোহার চূড়া শুধু প্যাগোডাকে সুন্দর করে তুলেছে তাই নয় , এই লোহার চূড়ার মাঝখানে একটি লোহার দণ্ড আছে , তাই এই লোহার চুড়ার ভূমিকা আধুনিক দালানের বজ্রবহের মতো । তাছাড়া এই প্যাগোডার চার পাশে আটটি লোহার চেন সহজেই বজ্রপাতের বিদ্যুত মাটির নীচে নিয়ে যেতে পারে । এইসব ব্যবস্থার কারণে ইং জেলার এই কাঠের প্যাগোডা এখনো অক্ষত অবস্থায়রয়েছে ।
ইং জেলার কাঠের প্যাগোডা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে অক্ষত ও সুদর্শনএকটি বহুতলীয় প্রাচীন প্যাগোডা । এই প্যাগোডা থেকেপ্যাগোডার কাঠামো, ভূমিকম্প প্রতিরোধ আর বজ্রপাতের ক্ষতি প্রতিরোধ ক্ষেত্রেপ্রাচীন চীনের মিস্ত্রিদের অনন্যসাধারণ দক্ষতা প্রতিফলিত হয়েছে ।
|