প্রাচীনকালে উত্তর চীনে একটি বড় পাহাড় ছিলো , পাহাড়ের পিছনে এক উপজাতি থাকতো । এই উপজাতির সর্দারের দুই কানে দুটি ও দুই হাতে দুটি সোনালী রংয়ের সাপ , এই সর্দারের নাম খুয়াফু । তাই এই উপজাতির নামও দেয়া হয়েছে খুয়াফু জাতি । খুয়াফু জাতির লোকেরা সবাই জোয়ান , তারা পরিশ্রমী ও দয়ালু , তারা পাহাড়ী এলাকায় শান্তিতে বসবাস করেন ।
এক বছর আবহাওয়া খুবই গরম । প্রখর রোদে গাছগুলো মরে যায় , নদীর পানি শুকিয়ে যায় , খুয়াফু জাতির অনেক অধিবাসী প্রচন্ড গরমে মৃত্যুবরণ করে । এই অবস্থা দেখে সর্দার খুয়াফু খুবই দুঃখ পান । তিনি সুর্যের দিকে তাকিয়ে অধিবাসীদের বলেন , প্রখর রোদে আমরা কিভাবে দিন কাটাবো ? আমি সুর্যের পিছু ধাওয়া করবো , আমাকে অবশ্যই সুর্যকে আমার নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে । খুয়াফুর কথা শুনে কেউ কেউ বলেন , আপনি যাবেন না , সুর্য আমাদের থেকে অনেক দূরে থাকে , তার পিছু ধাওয়া করলে আপনি ক্লান্ত হয়ে মরে যাবেন । কেউ কেউ বলেন , সুর্যের আলো এতো প্রখর , আপনি তার রোদে ছাই হয়ে যাবেন । কিন্তু খুয়াফু সুর্যের পিছু ধাওয়া করতে বদ্ধপরিকর । তিনি অধিবাসীদের বলেন , আমাদের সবার সুখী জীবনের জন্য আমাকে যেতেই হবে ।
খুয়াফু উপজাতির অধিবাসীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওয়ানা হলেন। তিনি সুর্য উঠার দিকে পা বাড়ালেন । সুর্য আকাশে দ্রুত গতিতে নড়ছে । খুয়াফুও মাটিতে দৌড়াতে দৌড়াতে সুর্যের পিছু ধাওয়া শুরু করেন । তিনি অজস্র পাহাড় ও নদী অতিক্রম করে বিরামহীনভাবে ধাওয়া করেন । পথে ক্লান্ত হয়ে খুয়াফু মাটিতে বসে তার জুতার ভিতরের বালু ও মাটি পরিষ্কার করেন । সঙ্গে সঙ্গে সেইসব বালু ও মাটি একটি বড় মাটির পাহাড়ে পরিণত হয় । রান্নার সময় খুয়াফু তিনটি পাথর দিয়ে এক সংক্ষিপ্ত চুলো তৈরী করেন । এই পাথর তিনটি কয়েক হাজার মিটার উচু বড় পাহাড়ে পরিণত হয় ।
খুয়াফু সুর্যের পিছনে ধাওয়া করতে থাকেন । যতই সুর্যের কাছে যায় ,তার সংকল্প ততই দৃঢ হয় । সুর্যাস্তের সময় খুয়াফু সুর্যের সামনে হাজির হলেন । সুর্য এক লাল আগুনের মতো দেখায় । সুর্যের অসংখ্য কিরণ খুয়াফুর গায়ে পড়ে , খুয়াফু দুই বাহু বাড়িয়ে সুর্যকে কোলে নেয়ার চেষ্টা করেন । কিন্তু সুর্যের প্রচন্ড তাপ খুয়াফু সহ্য করতে পারেন না । তিনি পিপাসা ও ক্লান্তি বোধ করেন , তাই হলুদ নদীর তীরে গিয়ে নদীর সব পানি খেয়ে ফেলেন । তিনি আবার উয়ে নদীর তীরে গিয়ে সেই নদীর পানিও শেষ করেন । দুটি নদির পানি খাওয়ার পরও খুয়াফুর পিপাসা মেটে না । তাই তিনি উত্তর দিকে যেতে লাগলেন । উত্তর দিকের তাচে নামে একটি নদীতে প্রচুর পানি ছিলো , সেই নদীর পানি খেলে খুয়াফুর পিপাসা দূর হবে । কিন্তু খুয়াফু তাচে পৌছার আগেই মাঝপথে তৃষ্ণায় মৃত্যুবরণ করেন ।
মুমূর্ষু অবস্থায় নিজ জাতির অধিবাসীদের কথা মনে করে খুয়াফু খুব কষ্ট বোধ করেন । তিনি হাতের ছড়ি ছুড়ে দিলেন । যেখানে ছড়ি পড়ে , সেখানে সঙ্গ সঙ্গে এক পিচ ফলের বাগানে পরিণত হয় , এই পিচ বাগান সারা বছর যাত্রীদের ছায়া দেয় । যাত্রীরা পিচ গাছের নীচে বসে পিচ ফল খেয়ে পিপাসা দূর করে আবার চলতে পারে ।
খুয়াফু সুর্য ধাওয়ার গল্প থেকে প্রাচীন চীনের অধিবাসীদের খরা জয় করার আকাঙ্খা প্রতিফলিত হয়েছে । যদিও মাঝপথে খুয়াফুর মৃত্যু হলো , কিন্তু তার নিরলস প্রচেষ্টা চালানোর মনোভাব চিরকাল চীনা জগনকে অনুপ্রেরণা দেয় । চীনের অনেক প্রাচীণ পুথিপত্রে খুয়াফুর সুর্য ধাওয়ার কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । খুয়াফুর স্মৃতির জন্য চীনের কোনো কোনো জায়গায় পাহাড়ের নাম দেয়া হয়েছে খুয়াফা পাহাড় ।
|