নিউলান ও চিনুইর কাহিনী


       নিউলান এক গরীব কৃষক । তার আছে শুধু এক বুড়ো গরু ও একটি লাঙল । প্রতিদিন নিউলান জমি চাষ করেন । বাড়ি ফিরে তাকে নিজে রান্না করতে হয় এবং কাপড় কাচঁতে হয় । তাই নিউলান প্রতিদিন ক্লান্ত বোধ করেন। তিনি ভাবতেও পারেনি যে একদিন তার জীবনে এক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটবে ।  

  একদিন নিউলান ক্ষেত থেকে বাড়ী ফিরে আবিষ্কার করলো তার ঘর পরিষ্কার পরিছন্ন । তার ময়লা জামা-কাপড়গুলো পরিষ্কার করা হলো , টেবিলে গরম ও সুস্বাদু খাবার রাখা আছে । এইসব দেখে নিউলান অবাক হলো । ব্যাপারটা কি ? কে এইসব করেছে ? নিজেকে হাজার প্রশ্ন করেও নিউলান উত্তর পান না ।  

  সেইদিন থেকে পর পর কয়েক দিন একই ঘটনা ঘটে । নিউলান আর নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন না । তিনি লুকিয়ে তার বাসায় ঘটা এই অদ্ভুত ব্যাপার নিজের চোখে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন । সেদিন ভোর বেলায় নিউলান প্রতিদিনের মতো বাড়ী থেকে বের হলেন । তিনি বাড়ীর অদূরে একটি জায়গায় লুকিয়ে পড়লেন , সেখান থেকে বাড়ীর দরজা দেখা যায় । 

  কিছুক্ষণ পর একটি সুন্দরী মেয়ে নিউলানের বাড়ীতে ঢুকলেন । মেয়েটি প্রবেশ করেই ঘরকন্নার কাজ করতে শুরু করেন । নিউলান তার লুকানো জায়গা থেকে বের হয়ে বাসায় ঢুকে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেন , আপনি কে ? কেন রোজ রোজ আমাকে সাহায্য করেন ? মেয়েটি নিউলানকে দেখে অবাক হলেন , তার মুখ লাল হলো । মেয়েটি বললেন , আমার নাম চিনুই , আমি দেখেছি আপনি একা থাকেন , পাশে সাহায্য করার কোনো লোক নেই , তাই আপনাকে সাহায্য করতে এসেছি । নিউলান খুব খুশি , সাহসের সঙ্গে চিনুইকে বলেন , তাহলে আপনি আমার সঙ্গে বিয়ে করেন , আমরা একসঙ্গে থাকি । চিনুই সায় দিলেন । সেদিন নিউলান ও চিনুইয়ের বিয়ে হলো । প্রতিদিন নিউলান তার বুড়ো গরু নিয়ে জমি চাষ করতে যান , চিনুই বাড়ীতে কাপড় বুনেন ও ঘরকন্নার কাজ করেন , তাদের জীবন সুখী ।  

  কয়েক বছর পর নিউলান ও চিনুইয়ের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে হলো , এতে তাদের জীবন আরো সুখী হলো । 

  কিন্তু তাদের সুখী জীবন স্থায়ী হয়নি । একদিন হঠাত আকাশে কালো মেঘ ভেসে উঠে । প্রবল বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে দুজন স্বর্গীয় সৈনিক নিউলানের বাড়ীতে আসে , তারা নিউলানকে বলেন , চিনুই স্বর্গীয় রাজার নাত্নী । কয়েক বছর আগে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আসেন , গত কয়েক বছর ধরে স্বর্গীয় রাজা তার এই নাত্নীকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন । এই কথা বলে ওই দুজন স্বগীয় সৈনিক চিনুইকে নিয়ে গেলো ।  

  কিন্তু তাদের সুখী জীবন স্থায়ী হয়নি । একদিন হঠাত আকাশে কালো মেঘ ভেসে উঠে । প্রবল বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে দুজন স্বর্গীয় সৈনিক নিউলানের বাড়ীতে আসে , তারা নিউলানকে বলেন , চিনুই স্বর্গীয় রাজার নাত্নী । কয়েক বছর আগে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আসেন , গত কয়েক বছর ধরে স্বর্গীয় রাজা তার এই নাত্নীকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন । এই কথা বলে ওই দুজন স্বগীয় সৈনিক চিনুইকে নিয়ে গেলো ।  

  নিউলানের দুঃখ দেখে তাকে সাহায্য করার জন্য বুড়ো গরু নিউলানকে বলেন , আপনি আমাকে জবাই করে আমার চামড়া গায়ে পরে স্বর্গের রাজপ্রাসাদে যেতে পারবেন । বুড়ো গরু সব সময় নিউলানের সঙ্গে থাকে । তাই নিউলান গরুকে জবাই করতে চান না । কিন্তু বুড়ো গরু তার কথায় জেদ ধরে । অবশেষে নিউলান বুড়ো গরুর কথা অনুসারে গরু জবাই করলেন । 

  নিউলান গরুর চামড়া গায়ে পরে তার দুটি বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে স্বর্গের রাজপ্রাসাদে পৌছঁলেন । স্বর্গের রাজপ্রাসাদে গিয়েও নিউলান তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান না । স্বর্গীয় রাজা নিউলানের তার নাত্নীর সঙ্গে দেখার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন । 

  নিউলান ও তার দুটি বাচ্চা স্বর্গীয় রাজাকে বার বার মিনতি করেন । শেষে স্বর্গীয় রাজা তার অনুরোধ গ্রহণ করলেন । স্বর্গের জেলখানায় বন্দী অবস্থায় থাকা চিনুই নিজের স্বামী ও ছেলেমেয়ে দেখে খুব খুশি । কিন্তু স্বর্গীয় রাজার দেয়া সময় খুব কম । এই সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিনুইকে আবার জেলখানায় নেয়া হলো । নিউলান ও তার দুটি বাচ্চা স্ত্রীর পিছনে ছুটতে লাগলেন । পথে নিউলান বেশ কয়েকবার হোঁচট খেয়ে পড়েছেন , তিনি উঠে আবার ছুটতে শুরু করেন । দৌড়তে দৌড়তে নিউলান চিনুইয়ের পিছনে এসে পড়লেন । ঠিক এই সময় স্বর্গীয় রানীর চুল থেকে একটি সোনালী হেয়ার-পিন বের করে নিউলান ও চিনুইয়ের মধ্যে একটি রুপালী নদী সৃষ্টি করেন । তখন থেকে নিউলান ও চিনুই শুধু এই রুপালী নদীর দুই তীরে দাড়িয়ে দেখা করতে পারেন । প্রতি বছরের সপ্তম মাসের সপ্তম দিন নিউলান ও চিনুই একবার মিলনের সুযোগ পান । সেই দিন হাজার হাজার পাখি রুপালী নদীর উপরে দাড়িয়ে একটি পাখির সেতু তৈরী করে , নিউলান ও চিনুই সেই পাখির সেতুতে মিলন করেন ।