প্রাচীন গ্রীক রুপকথায় প্রমিখিউসের মানুষ তৈরীর কথা আছে । প্রাচীন মিশরের রুপকথায় বলা হয়েছে , দেবতাদের অনুরোধে মানুষের সৃষ্টি হলো । ইহুদিদের রুপকথায় বলা হয়েছে মানুষের সৃষ্টিকর্তা যীসু । প্রাচীন চীনের রুপকথায় মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে কি লেখা আছে ? এতে বলা হয়েছে মানুষের সৃষ্টিকর্তা নুইওয়ো নামে এক মানুষের শরীর ড্রাগনের লেজসম্পন্ন এক দেবী ।
চীনের প্রাচীন রুপকথায় বলা হয়েছে , বীর ফানকু আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পর নুইউও আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে ঘুরে বেড়ায় । তখন পৃথিবীতে পর্বত-পাহাড় , নদনদী ও গাছ ঘাস আর পাখি , পশু , পোকা ও মাছ থাকা সত্বেও পরিবেশ নিস্তেজ ছিলো । কারণ পৃথিবীতে কোনো মানুষ নেই । একদিন নুইউও পৃথিবীর নির্জীব মাটিতে হাটার সময় নিসঙ্গ বোধ করেন , তিনি আকাশ ও মাটির মধ্যে কিছু জীবন্ত জিনিস যোগাতে শুরু করেন ।
নুইউও পৃথিবীর গাছ , ঘাস ও ফুলগুলো পছন্দ করেন । তবে তিনি প্রাণশক্তিতে ভরপুর পাখি , পশু , পোকা ও মাছকে বেশী পছন্দ করেন । নুইউও মনে করেন , ফানকুর সৃষ্ট এই পৃথিবী পরিপূর্ণ নয় , কারণ পৃথিবীর এইসব প্রাণীর বুদ্ধি কম । তিনি তাদের চেয়ে আরো উন্নত প্রাণী সৃষ্টি করতে চান।
নুইউও হলুদ নদীর তীরে হাজির
হলেন । নদীর পানিতে নুইউও নিজের
সুন্দর মুখ দেখতে পেলেন ,এই
জন্য তিনি আনন্দবোধ করেন ।
তিনি নদীতীরে বসে নরম মাটি
দিয়ে অনেক প্রাণী তৈরী করেন
। এইসব মাটির প্রাণী তার মতো
সুন্দর , তবে নুইউও লেজের পরিবর্তে
তাদের গায়ে দুটি হাত ও দুটি
পা তৈরী করেন । তারপর নুইউও
তার তৈরী এইসব প্রাণীর গায়ে
ফুঁ দিয়ে প্রাণ শক্তি যুগিয়ে
দেন । এইসব প্রাণী তত্ক্ষনাতই
জীবন্ত প্রাণীতে পরিণত হয় ।
তারা উঠে দাড়াঁতে পারে , হাটতে
পারে , কথা বলতে পারে , নুইউও
তাদেরকে মানুষ বলেন। তারপর
নুইউও কিছু লোকের গায়ে পুরুষ
হরমৌন আর বাকী লোকের গায়ে নারী
হরমোন দিলেন , যারা পুরুষ হরমোন
পান ,তারা পুরুষ হলো আর যারা
নারী হরমোন পান , তারা নারী
হলো । এইসব নারী পুরুষ নুইউওর
চার পাশে দাড়িঁয়ে উল্লাস প্রকাশ
করে এবং পৃথিবীকে আরো জীবন্ত
করে তোলে ।
নুইউও আরো বেশী মানুষ তৈরী করতে চান । কিন্তু মাটি দিয়ে মানুষ তৈরী করা সময়সাপেক্ষ কাজ । তাই তিনি একটি ঘাসের তৈরী দড়ি নদীর তলদেশে ফেলে নাড়তে থাকেন । যখন এই দড়ি কাদায় মাটিপূর্ণ হয় , তখন নুইউও এই কাদাপূর্ণ দড়ি উঠিয়ে দড়ির কাদা চার পাশে ছিটকানোর চেষ্টা করেন । যেসব জায়গায় কাদা পড়েছে , সেইসব জায়গার ছোট ছোট কাদা এক একটি মানুষে পরিণত হয় । এইভাবে নুইউও পৃথিবীতে প্রচুর মানুষ তৈরী করেন ।
নুইউও পৃথিবীতে মানব জাতি সৃষ্টি করার পর আরেকটি কথা চিন্তা করতে শুরু করেন । সেই চিন্তা হলো মানব জাতি কিভাবে বংশ বাড়াতে পারে ? কারণ সব প্রাণীর আয়ু সীমিত । মানুষের মৃত্যুর পর যদি তাকে আবার নতুন মানুষ তৈরী করতে হয় , তাহলে ঝামেলা বেশী । তাই নুইউও একজন পুরুষ মানুষ ও একজন মেয়ে মানুষকে একসঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করেন। বাচ্চা হওয়ার পর পুরুষ মানুষ ও মেয়ে মানুষ তাদের দেখাশোনার দায়িত্ববহন করে । এইভাবে মানব জাতি নিজে বংশ বাড়ার কাজ করে এবং গোটা পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে ।
|