ফানকুর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির কাহিনী


       চীনের একটি উপকথায় বলা হয়েছে , হাজার হাজার বছর আগে কোনো আকাশ ও পৃথিবী ছিলো না । গোটা মহাকাশ একটি বড় ডিমের মতো ছিলো । ডিমের ভিতরে গাঢ অন্ধকার , কোনো উপর-নীচ ,বাম-ডান , পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণ-উত্তর ছিলো না। কিন্তু এই ডিম এক মহান বীর তৈরী করেছেন । এই বীর হলেন ফানকু । ফানকু বড় ডিমে ১৮ হাজার বছর ছিলেন । একদিন ফানকু ঘুম থেকে জেগে চোখ খুলে দেখলো চার পাশে অন্ধকার । তিনি প্রচন্ড গরমে শ্বাস নিতে পারেন না , তিনি দাড়াতে চান , কিন্তু ডিমের খোসায় তিনি হাত পা নাড়তে পারেন না । ফানকু রাগ করে ডিমের মধ্যে রাখা একটি কুঠার তুলে ডিমের খোসা ভেঙ্গে দিলেন । এক প্রচন্ড শব্দে এই ডিমের হালকা তরল পদার্থ উপরে উঠে আকাশে পরিণত হয় আর বাকী ভারী জিনিস নীচে পড়ে পৃথিবীতে পরিণত হয় ।  

  ফানকু কুঠার দিয়ে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করে আনন্দবোধ করেন । তিনি ভয় করেন , আকাশ ও পৃথিবী আবার এক হয়ে যাবে । তাই তিনি আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে দাড়িঁয়ে মণ্ত্র পড়ে নিজের শরীর আরো লম্বা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । প্রতিদিন তার শরীরের উচ্চতা তিন মিটারের বেশী বাড়ে । এর সঙ্গে সঙ্গে আকাশ ও পৃথিবীর দূরত্বও তিন মিটার বাড়ে । এই ভাবে ১৮ হাজার বছর পর ফানকুয়ের শরীরের উচ্চতা আর আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব ৪৫ হাজার কিলোমিটার হয় , এই সময় ফানকু নিশ্চিন্ত হলেন যে আকাশ ও পৃথিবী আর এক হতে পারবে না । এই কাজ করে এই বীরের গায়ে আর কোনো শক্তি অবশিষ্ট থাকে না । তিনি মাটিতে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন । 

  মৃত্যুর আগে ফানকুর বাঁ চোখ লাল সুর্যে পরিণত হয় , ডান চোখ রুপালী চাঁদে পরিণত হয় । তার শেষ নিশ্বাস বাতাস ও মেঘে পরিণত হয় , তার শেষ ডাক বজ্রপাতে পরিণত হয় । তার চুল ও দাড়ী আকাশের তারায় পরিণত হয় , মাথা ও হাত-পা পৃথিবীর চার মেরু ও পাহাড়ে পরিণত হয় । তার রক্ত পৃথিবীর নদী ও হ্রদে পরিণত হয় । তার গায়ের হাড়ের সঙ্গে জড়িত শিরাগুলো রাস্তায় পরিণত হয় । তার মাংসপেশী উর্বর চাষের জমিতে পরিণত হয় । তার গায়ের চামড়া ফুল ,ঘাস ও গাছে পরিণত হয় । তার দাঁত ও হাড় সোনা, রুপা , তামা ও লোহা ও দামী পাথরে পরিণত হয় । তার ঘাম বৃষ্টিতে পরিণত হয় । সেই থেকে পৃথিবীর সুচনা হয় ।