মানব জাতির প্রতিষ্ঠাতা নুইউও
মানুষ তৈরীর পর পৃথিবী দীর্ঘদিন
শান্ত ছিলে। হঠাত একদিন আকাশ
ও মাটির বড় আঘাত হলো , আকাশে
এক বড় ফাটল ধরলো , মাটিতেও
ফাটল ধরলো । মাটির নীচের আগুন
উপরে উঠে বনের গাছগাছড়া পুড়িয়ে
দেয় । বন্যার পানি সবকিছু ডুবিয়ে
দেয়। সুযোগে নানান ধরনের দৈত্যদানব
ও হিংস্র পশু বের হয়ে আসে ।
মানবজাতি দুঃখদুদর্শায় দিন
কাটাতে শুরু করে ।
মানবজাতির প্রতিষ্ঠাতা নুইউও মানব জাতিকে বাচাঁনোর জন্য দৈত্যদানব ও হিংস্র পশু হত্যা করেন এবং বন্যার পানি নিয়ন্ত্রন করেন । তারপর তিনি আকাশের ফাটল জড়ো দেওয়ার চেষ্টা করেন ।
নুইউও প্রচুর খাগড়া আকাশের ফাটলে জমা করেন , তারপর আকাশের মতো নীল রংয়ের পাথর খুঁজতে শুরু করেন । কিন্তু নীল রংয়ের পাথর কম বলে তিনি নীল রং ছাড়া সাদা , হলুদ , লাল ও কালো রংয়ের পাথরগুলো খাগড়ার উপর রাখেন । তখনও মাটির নীচ থেকে উঠা আগুন পুরোপুরি নিভে নি । নুইউও গাছের একটি ডাল দিয়ে খাগড়া জ্বালিয়ে দিলেন। অল্পক্ষনের মধ্যেই জমা করা খাগড়া জ্বলে উঠলো । আগুনে গোটা আকাশ আলোকিত হয় । খাগড়ার উপরের নানান রংয়ের পাথর ধীরে ধীরে গলতে থাকে । গলে যাওয়া পাথর চিনির রসের মতো আকাশের ফাটলে পড়ে । খাগড়ার পাহাড় ছাই হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশের বড় ফাটলও জোড়া লেগে যায় ।
যদিও নুইউও আকাশের ফাটল পূরণ করেছেন , কিন্তু আকাশ আর আগের মতো হয়নি । আকাশের উত্তর-পশ্চিম দিক একটু টেরা , কাজেই সুর্য ও চাঁদ প্রায়ই ওখানে থাকে । আর পৃথিবীর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি বড় গর্ত সৃষ্টি হয় । তাই ছোট-বড় নদী দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় । প্রচুর পানি জমে থাকার দরুণ সেখানে সমুদ্র সৃষ্টি হয় ।
পো সাগরের পূর্বে একটি গভীর
পরিখা আছে । তার নাম ‘ কুইসুই
’। মাটির নদনদীর পানি আর সমুদ্রের
পানি সবই এই পরিখায় যায় । কিন্তু
এই পরিখার পানি সব সময় একই
অবস্থায় বজায় থাকে । কম হয়
না , বেশীও হয় না। তাই ‘ কুইসুইয়ের
’ পানি কখনও মানব জাতির ক্ষতি
করে না ।
পরিখা ‘কুইসুইয়ে ’ পাঁচটি পাহাড়
আছে । এই পাঁচটি পাহাড়ের নাম
হলো তাইইয়ু , ইয়েনছিয়াও , ফানহু
, ইনচৌ ও ফেনলাই । প্রতিটি
পাহাড়ের উচ্চতা ১৫ হাজার কিলোমিটার
। দুটি পাহাড়ের ব্যবধান ৩৫
হাজার কিলোমিটার। এইসব পাহাড়ে
সোনার তৈরী রাজপ্রাসাদ ও দামী
পাথর দিয়ে তৈরী বারান্দা আছে।
অনেক দেবতা এইসব প্রাসাদে থাকেন
।
এই পাঁচটি পাহাড়ের সব পশুর চামড়া ও পাখির লোমের রং সাদা । পাহাড়ের গাছগুলোর ফলগুলোও সব দামী পাথর বা মুক্তা , ফলগুলো মিষ্টি , মানুষ খেলে চিরজীবী হবেন । দেবতারা সাদা রংয়ের পোশাক পরেন , পিঠে এক জোড়া ছোট পাখা , তারা পাখির মতো ডানা মেলে স্বাধীনভাবে সমুদ্র ও আকাশে উড়ে বেড়াতে পারেন এবং পাঁচটি পাহাড়ের মধ্যে আসা-যাওয়া করে তাদের আত্মীয়সজনের সঙ্গে দেখা করতে পারেন । দেবতারা এই পাঁচটি পাহাড়ে সুখী জীবনযাপন করেন ।
কিন্তু দেবতাদের সুখী জীবনে একটি ছোট অসুবিধাও আছে । এই পাঁচটি পাহাড় সমুদ্রের উপর ভাসে বলে প্রবল বাতাসে পাহাড় পাঁচটি স্থিরভাবে দাড়াঁতে পারে না । এটা দেবতাদের জীবনে অসুবিধা সৃষ্টি করে । তাই দেবতারা স্বর্গীয়রাজার কাছে তাদের অভিযোগ তোলেন । স্বর্গীয় রাজার চিন্তা হলো , প্রবল বাতাসে এই পাঁচটি পাহাড় আকাশে ভেসে আসলে দেবতারা পৃথিবীতে কোথায় থাকবেন ? তাই স্বর্গীয় রাজা সমুদ্র দেবতা ‘ইয়ুচিয়ানকে ’ পনেরোটি কাছিম পাঠিয়ে এই পাঁচটি পাহাড় বহন করার আদেশ দিলেন । এই ১৫টি বড় কাছিম তিন দলে ভাগ করা হয় । প্রতি দলের তিনটা কাছিমের মধ্যে একটি কাছিম একটি পাহাড় বহন করে , বাকী দুটো পাহাড়ের দুই পাশে পাহারা দেয় । প্রতি ৬০ হাজার বছর পর পর তাদের দায়িত্ব বদল হয় । এই ভাবে পাঁচটি পাহাড় স্থিরভাবে থাকতে পারে । পাহাড়ে থাকা দেবতাদের অসুবিধা দূর হলো ।
একদিন লুনপো রাজ্যের এক ব্যক্তি মাছ ধরার জন্য কুইসুইয়ে গেলো । লুনপো রাজ্য থেকে আসা ওই ব্যক্তির উচ্চতা পাহাড়ের মতো । এই ব্যক্তি ছিপ ফেলে পর পর সমুদ্র থেকে ছয়টি বড় কাছিম তোলেন । ওইগুলো ছিলো পাহাড়বহনকারী পনেরোটি কাছিমের মধ্যে ছয়টি । লুনপো রাজ্যের ওই মানুষ ছয়টি কাছিম নিয়ে ফিরে গেলো । কাছিম ছাড়া পাহাড় তাইইয়ু ও ইউয়েনছাও সমুদ্রের পানিতে দাড়াতে না পেরে প্রবল বাতাসে উত্তর মেরুতে ভেসে সমুদ্রের তলদেশে ডুবে গেলো , এই দুটি পাহাড়ে থাকা দেবতারা আকাশে উড়তে উড়তে নতুন বাড়ী খোঁজার চেষ্টা করেন ।
সর্গীয় রাজা এই ঘটনার কথা শুনে রেগে গেলেন । তিনি লুনপো রাজ্যের অধিবাসীর উচ্চতা কমিয়ে দেয়ার আদেশ দিলেন । কুইসুইতে অবস্থানরত বাকী তিনটি পাহাড় কাছিমের উপর থাকে বলে আজ পর্যন্ত পূর্ব চীনের উপকুলীয় অঞ্চলে দাঁড়িয়ে আছে ।
|