চীনের রুপকথাগুলোর মধ্যে গণ কল্যানের জন্য অনেক বুদ্ধিমান ও সাহসী বীর আছে , সুইরেন তাদের মধ্যে একজন ।
প্রাচীনকালে লোকেরা আগুনের
কথা জানতো না , তারা আগুন ব্যবহারের
পদ্ধতিও জানতো না । রাতে সর্বত্রই
অন্ধকার । বন্য পশুর ভয়ঙ্কর
ডাক শুনে তারা ভয়ে একসঙ্গে
গুটিয়ে থাকতো । প্রচন্ড শীতে
তারা কাঁপতে থাকতো । আগুন নেই
বলে তারা কাঁচা খাবার খেতো
, তাই সহজেই অসুস্থ হতো বলে
তাদের আয়ু কম ছিলো।
স্বর্গে ফুসি নামে এক দেবতা
ছিলেন । তিনি পৃথিবীর মানুষের
কষ্টকর জীবন দেখে দুঃখ পেতেন
। তিনি আশা করেন , পৃথিবীর
মানুষ আগুনের ব্যবহার আয়ত্ত
করতে পারে । তাই ফুসি মন্ত্র
পড়ে পৃথিবীর বন অঞ্চলে ঝড়ঁ
বৃষ্টি পড়ার আদেশ দিলেন । বজ্রপাতে
একটি গাছে আগুন ধরে জ্বলতে
শুরু করে । অল্পক্ষণের মধ্যে
আশেপাশের গাছপালাও জ্বলতে শুরু
করে । স্থানীয় অধিবাসীরা বজ্রপাত
ও আগুন দেখে ভয়ে পালাতে থাকে
। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি থেমে
গিয়ে , অন্ধকার ঘনিয়ে আসলো
। বৃষ্টির পর অধিবাসীরা আরো
বেশী শীত অনুভব করেন , তাই
তারা এক সঙ্গে ঠাসাঠাসিভাবে
বসে জ্বলতে থাকা আগুনের দিকে
তাকাতে শুরু করেন । এই সময়
একজন যুবক আবিষ্কার করলেন বজ্রপাত
ও আগুনের পর বন্যপশুর ডাক আর
শোনা যায় না । তিনি নিজেকে
প্রশ্ন করেন , বন্যপশুরা কি
এই অদ্ভুদ লাল জিনিসকে ভয় করে
? তাই তিনি সাহসের সঙ্গে আগুনের
কাছে গেলেন । অল্পক্ষণ পর তিনিও
গায়ে গরম অনুভব করেন । তাই
তিনি সবাইকে ডেকে বলেন , তোমরা
এসো ,এই আগুনকে ভয় করার কিছু
নেই , আগুন আমাদের জন্য আলো
ও উষ্ণতা নিয়ে এসেছে । এই সময়
তারা আবিষ্কার করলো পাশাপাশি
আগুনে পোড়ানো বন্য পশুর মাংস
খেতে মজা । তারা আগুনের পাশ
ঘিরে বসে পশুর মাংস খেতে শুরু
করেন , এর আগে তারা কখনও এই
ধরনের সুস্বাদু মাংস খান নি
। তারা মনে করেন , আগুন খুব
মূল্যবান জিনিস , তাই তারা
গাছের ডাল জ্বালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে
রাখার ব্যবস্থা করেন এবং এই
আগুন যাতে নিভে না যায় , তার
জন্য পালাক্রমে পাহারা দিতে
শুরু করেন । কিন্তু একদিন তাদের
মধ্যে একজন পাহারা দেয়ার সময়
ঘুমিয়ে পড়ে বলে আগুন নিভে গেলো
। লোকেরা আবার অন্ধকার ও শীতে
জীবনযাপন করতে শুরু করেন ।
স্বর্গের ফুসি পৃথিবীর মানুষের
এই অবস্থা দেখে সর্বপ্রথম আগুনের
গুন আবিষ্কারকারী সেই যুবককে
স্বপ্নে গিয়ে বলেন , সুদুর
পশ্চিমে সুইমিং নামে একটি রাজ্য
আছে , সেখানে আগুন পাওয়া যায়
। তুমি সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ে
আসতে পারো । জেগে উঠে ওই যুবক
স্বপ্নের দেবতার কথা স্মরণ
করে পশ্চিমের সুইমিং রাজ্য
থেকে আগুন নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত
নিলেন ।
যুবকটি উচ্চ পর্বত পার হয়ে
বনাঞ্চল অতিক্রম করে সুইমিং
রাজ্য পৌছালেন । কিন্তু সেখানে
কোনো সুর্য্যের আলো নেই , দিনেই
হোক ,রাতেই হোক সব সময়ই চারপাশ
অন্ধকার । সেখানে তিনি আগুনও
দেখেন নি , তাই যুবকটি অত্যন্ত
হতাশ হয়ে পড়েন । তিনি ‘ সুইমু
’ নামে একটি গাছের নীচে বসে
বিশ্রাম নিতে শুরু করেন । হঠাত্
তিনি আবিষ্কার করেন তার সামনে
কোনো কিছু ঝলক দিচ্ছে । যুবক
উঠে সেই ঝলক খোঁজার চেষ্টা
শুরু করেন । তিনি দেখলেন সুইমিং
গাছে কয়েকটি বড় পাখি তাদের
কঠিন ঠোট দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে
গাছের পোকা খাচ্ছে । গাছ খুঁটানোর
সময় গাছে উজ্জ্বল ঝলক দেখা
যায় । সেই যুবক একটা গাছের
ডাল দিয়ে গাছ খুঁটানোর চেষ্টা
করেন , সঙ্গে সঙ্গে তিনিও আগুনের
ঝলক দেখলেন । কিন্তু ডাল জ্বলে
না। তিনি আবার বিভিন্ন গাছের
ডাল সংগ্রহ করে গাছে খুঁটানোর
চেষ্টা করেন। অবশেষে ডালে ধোঁয়া
বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুন
জ্বলে উঠে । যুবকটি খুব খুশী
হলেন ।
যুবকটি নিজের জন্মস্থানে ফিরে
গেলেন । তিনি অধিবাসীদের কাঠ
খুঁটিয়ে আগুন সংগ্রহের পদ্ধতি
শেখালেন । এই পদ্ধতি পেয়ে তাদের
আর আগুন নেভার ভয় রইলো না ।
এই সময় থেকে চীনাদের আর শীতে
ও ভয়ে থাকতে হয় না । স্থানীয়
অধিবাসীরা ওই বুদ্ধিমান ও সাহসী
যুবককে সর্দার নির্বাচণ করেন
এবং তাকে ‘ সুইরেন ’ অথার্ত্
আগুন অন্বেষণকারী বলে ডাকতে
শুরু করেন ।
|