নাট্য বিশারদ লি ইয়ু

       চীনের সহস্রাধিক বত্সরের প্রাচীন সাহিত্যের ইতিহাসে বহুসংখ্যক বিখ্যাত কবি, নাট্যকার ও গল্পকার আবির্ভূত হয়েছেন কিন্তু নাট্যকার ,পরিচালক, নাট্যতত্ত্ববিদ ও গল্পকারের গুণের সমাবেশ যাদের মধ্যে ঘটেছে তাঁরা সংখ্যায় অল্প। প্রাচীন সাহিত্যিক লি ইয়ু তাঁদের মধ্যে একজন । 

  ১৬১০ সালে অর্থাত চীনের মিং রাজত্বকালে লি ইয়ু জন্ম গ্রহণ করেন ।তাঁর বয়স যখন তিরিশ বছর পূর্ণ হয় তখন রাজবংশের পরিবর্তন ঘটে । চীনের সর্বশেষ সামন্ততান্ত্রিক রাজবংশ -- ছিং রাজবংশ বলপ্রয়োগ করে মিং রাজবংশকে উচ্ছেদ করে । চীনের সমাজে আলোড়ন চলছিল কয়েক দশক ধরে।১৬৮০ সাল মৃত্যু পর্যন্ত লি ইয়ু অস্থির সমাজে জীবনযাপন করেছিলেন ।  

  লি ইয়ু ছোটোবেলায় ঐতিহ্যিক কনফুশিয়াস চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে যুগ যুগ ধরে চীনের বুদ্ধিজীবীদের অনুসৃত পথ অর্থাত পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে রাজকর্মচারী হওয়ার পথ বেয়ে চলেছিলেন ।কিন্তু গোলোযোগপূর্ণ যুগান্তরকালে তিনি নানা কারণে একাধিক রাজপরীক্ষায় পাশ করতে পারেন নি । এরপর যশ অন্বেষণ থেকে বিরত হয়ে তিনি নিজের বাড়িতে বইয়ের দোকান খুলে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং নাটক রচনায় মনোনিবেশ করেন । 

  নাটক রচনা ও নাট্য গবেষণাই লি ইয়ুর সর্বপ্রধান কৃতিত্ব।“ ফ্লাউন্ডার মাছ”, “ কাল্পনিক পক্ষী ফেং ও হুয়াংয়ের প্রেম”, “ জেড পাথরের কাঁটা ”, “ করুনাময়ী সখী ” সহ লি ইয়ুর রচিত দশটি নাটক এখনো চীনের পাঠাগারে সংরক্ষিত । নরনারীর প্রেম তাঁর নাটকের প্রধান উপজীব্য । বাস্তব জীবনের অবলম্বনে রচিত তাঁর নাটকে নরনারীর প্রেম-পিপাসার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়। নাটকের কাহিনী চিত্তাকর্ষক,হাস্যরসপূর্ণ আর জটিল বলে তাঁর নাটক মঞ্চায়নের বিশেষ উপযোগী ।তবে তাঁর নাটক নিছক চিত্তবিনোদনের উপকরণ নয় । সমাজের গম্ভীর বিষয়ও তাঁর নাটকের উপজীব্য হয়েছে । যেমন তাঁর নাটকে বংশকুলমান রক্ষার ধ্যানধারনা ও পূণ: বিবাহ প্রথার সমালোচনা করা হয়েছে ।তাঁর নাটক সমসাময়িক সমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছিলো এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ জাপান ও দক্ষিণপূর্ব এশিয় দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল । চীনের ঐতিহ্যিক নাটক হিসেবে তাঁর নাটক এখনো চীনের মঞ্চে অভিনীত হচ্ছে । 

  লি ইয়ুর গঠিত নাট্যদল তাঁর নাটকে অভিনয় করত ।নাটক পরিচালনা ছাড়া তিনিও নাটকের চরিত্রে অভিনয় করতেন । চীনের প্রাচীনকালে সমাজের উঁচু স্তরের মানুষ নাটকে অভিনয়কে নীচু পেশা বলে গন্য করতেন এবং গোঁড়া বুদ্ধিজীবীরা নাট্য শিল্পীদের অবজ্ঞা করতেন । কিন্তু লি ইয়ু নাট্যশিল্পের পুজারী । বিশাধিক বছর ধরে তিনি তাঁর নাট্যদল নিয়ে চীনের দশাধিক প্রদেশে নাটক পরিবেশন করতেন।  

  নাটক রচনা ও অভিনয়ের দীর্ঘকালীন অনুশীলনে লি ইয়ুর পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছিল ।