প্রতিভাশালী কবি সু শি

       সু শি(১০৩৭-১১০১) সি ছুয়ান প্রদেশের মেসানে জন্ম গ্রহণ করেন । তার পিতা ছিলেন একজন বিখ্যাত প্রাচীন ভাষাবিদ। সুশি পরিবারের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বড় হয়েছেন । ছোটোবেলা থেকেই তিনি জনকল্যাণ সাধনের মহত্ স্বপ্ন দেখতেন । রাজকর্মচারী হওয়ার পর রাজনৈতিক ব্যবস্থার ত্রুটি দূর করা ও সংস্কার করার ব্যাপরে তার উত্সাহের অন্ত ছিল না । স্থানীয় সরকার ও রাজদরবারে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি দেশের স্বার্থে সংস্কারের পক্ষে খোলাখুলিভাবে মত প্রকাশ করতেন । 

  দিল-খোলা সু শি প্রকাশ্যেরাজদরবারেরপারিষদদেরঅন্যায়অবিচার উদঘাটনকরার জন্য রাজদরবারেরদলাদলিরবলিতেপরিণত হন । জীবনের দ্বিতীয়ার্ধে তিনি রাজনৈতিকনিপীড়নেছটফট করতেন। ৪৩ বছর বয়স থেকে তিনি একাধিকবারনির্বাসিত হন। রাজধানী থেকে তাঁর নির্বাসনের স্থান দূর থেকেদূরতরহয় এবংজীবনযাপনের পরিবেশওক্রমশইকঠিন হতে থাকে।কিন্তুকঠিনজীবন সংগ্রামের মধ্যেও তিনি চীনের কনফুসিয়াসবাদী তত্ত্ব,বৌদ্ধ ধর্ম ও তাও ধর্মেরদার্শনিক তত্ত্ব গভীরভাবে অধ্যয়ন করতেন । বৌদ্ধ ধর্ম ও তাও ধর্মেরদার্শনিক তত্ত্ব তাঁকে নানাদিকথেকে সামাজিক সমস্যা পর্যবেক্ষণ করতেএবংজীবনের ক্লেশ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করেছে । কনফুসিয়াসবাদী তত্ত্ব আয়ত্ত করায় তিনিতাঁরআদর্শ , স্বপ্ন ও সৌন্দর্য-পিপাসায় অবিচল থাকতে পেরেছেন , সেই সঙ্গে তাঁরঅনন্য বক্তিত্ব ও মহত্ চরিত্রঅক্ষুন্ন রাখা এবংবাইরেরনির্মম আঘাত ঠেকানোও সম্ভব হয়েছে । 

  সুশি সর্বদাই মনে যা ভাবতেন মুখে তাই বলতেন , অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন অনড়-অটল । তবে তিনি প্রাণচঞ্চল ও মুক্তমনা , তাঁর স্বভাবে লেশমাত্র গোড়ামী নেই । তার এই অসাধারণ প্রকৃতি ও মনষ্যত্বের জন্য তিনি ছিলেন চীনের সামন্ততান্ত্রিক সমাজের শেষভাগের বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধার পাত্র । আট শো বছর ধরে তাঁকে দৃষ্টান্ত হিসেবে অনুসরণ করা হত । 

  সুশির পাণ্ডিত্য ছিল অতুলনীয় । কবিতা , গদ্যকাব্য ও প্রবন্ধ রচনায় তিনি শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত ছিলেন । তাঁর একাধিক স্টাইলের কবিতার বিষয়বস্তু অতি ব্যাপক, কল্পনা বিচিত্র , উপমা-উতপ্রেক্ষা অভিনব ,ভাষা চিত্রকল্পময় । সু শির গদ্য কবিতার রয়েছে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য । তিনি গদ্য কবিতাকে অলংকার-বাহুল্যের কবল থেকে মুক্ত করে লৌকিক জীবন ও বিশাল সমাজে এনে দিয়েছিলেন ।সু শির প্রবন্ধ প্রতিভা-দীপ্তিতে সমুজ্জ্ব এবং রচনাশৈলীতে সমৃদ্ধ । চীনের থাং রাজত্ব ও সং রাজত্বকালের আটজন বিখ্যাত লেখকের মধ্যে তাঁর কৃতিত্বই সর্বাধিক । তিনি অভাব-অনটনে দিন কাটাতেন ,কিন্তু সমসাময়িক বুদ্ধিজীবীরা তার রচনাশৈলীর অনুকরণে সাহিত্যচর্চা করতেন ।  

  প্রবন্ধ সাহিত্য-জগতে তার লেখা ভ্রমনবৃত্তান্ত সর্বশ্রেষ্ঠ। যেমন ‘ছে পি’ নামে তাঁর দুটো প্রবন্ধ । প্রথমোক্তটিতে শরত্কালের মর্মর বাতাস , পূর্ণচন্দ্র , নীল আকাশ ও স্বচ্ছ নদী বর্ণনা করা হয়েছে এবং শেষোক্তটিতে শীতকালের উচু পর্বত ,অর্ধচন্দ্র , শীর্ণ নদীতে মাথা চাড়া দিয়ে উঠা চর চিত্রিত হয়েছে । কাব্যরস , রুপকল্প ও দার্শনিক তত্ত্বের সুষম সমন্বয়ে প্রবন্ধ দুটো সং রাজত্বকালের উত্কৃষ্ট রচনা বলে অভিহিত করা হয়েছে ।