চীনের পেইচিংয়ের দাজং মন্দিরে
ইয়ংলে নামে একটি ঘন্টার ওজন
ছচল্লিম দশমিক পাঁচ টন । এই
ঘন্টা ছয় দশমিক সাত পাঁচ মিটার
লম্বা, তার ব্যাস তিন দশমিক
তিন মিটার । ইয়ংলে ঘন্টা পাঁচ
শো বছর পুরনো। ইতিহাস গ্রন্থে
লিপিবদ্ধ করা হয়ছে যে , ইয়ংলে
ঘন্টা তৈরীর জন্য বিশ তিরিশটি
চুল্লীতে আগুন জ্বালিয়ে তামা
গলানো হয় , উত্তপ্ত তরল তামা
একসংগে মাটির ছাঁচে ঢেলে দেয়া
হয়।একবারই ঘন্টাটি যে তৈরী
হয় তার কলাকৌশল যথেষ্ট উন্নত।
ইয়ংলে ঘন্টা ঢালাইয়ের পর একাধিক
স্থানে স্থানান্তরিত হয় । ছিংরাজবংশের
ছিয়ানলং অব্দীতে জিয়েসেং মন্দিরে
তা স্থাপিত হয় ।ইয়ংলে ঘন্টার
জন্য জিয়েসেং মন্দিরের নতুন
নাম হয়েছে ‘তাজং’ মন্দির ।১৭৫১
শালে সেখানে আনার পর ইয়ংলে
ঘন্টা আর অন্যত্র স্থানান্তরিত
হয় নি ।
ইয়ংলে ঘন্টার ধ্বনি শ্রুতিমধুর
,চীনের বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায়
জানা যায় ,তার ধ্বনির ফ্রিকোয়েন্সি
সংগীতের স্ট্যান্ডার্ড ফ্রিকোয়েন্সির
সমান বা তার কাছাকাছি । সামান্য
আঘাত করলে তার ধ্বনি মধুর আর
সুললিত , জোরে আঘাত করলে তার
ধ্বনি গম্ভীর আর জোরালো । ধ্বনিতরঙ্গ
আন্দোলিত হওয়ার সময়ে তাল স্পষ্ট
ও মার্জিত । তার ধ্বনি ৪৫কিলোমিটার
দূরে বিস্তৃত হতে পারে । ধ্বনির
শেষাংশ প্রায় দু মিনিট স্থায়ী
হয় , তা শুনে শ্রোতারা আপনাআপনি
সাবাসি দেন ।
প্রতিবছরের নববর্ষ আগমনের শুভ
লগ্নে ইয়ংলে ঘন্টা বেজে উঠে
।পাঁচ শো বছর ধরে বেজে আসলেও
ইয়ংলে ঘন্টা আজ অক্ষয় রয়েছে
। চীনের বিজ্ঞানীরা ইয়ংলে ঘন্টার
ধাতু বিশ্লেষণ করে আবিস্কার
করেছেন যে , তামা , লোহা, আঠারো
দশমিক ছয় কিলোগ্রামসোনা ও আত্রিশ
কিলোগ্রামরৌপ্যও আছে । বিশেষজ্ঞদের
মতে , তামার ঘন্টায় সোনা মিশে
থাকায় ঘন্টার উপরে মরচে পড়ে
না , রৌপ্য মিশে থাকায় ঢালাইয়ের
সময়ে গলানো ধাতু স্বাভাবিকভাবে
প্রবাহিত হয় । এটাই গত পাঁচ
শো বছরে ইয়ংলে ঘন্টা অক্ষয়
থাকা আর ঘন্টার ধ্বনির প্রাবল্য
বজায় থাকার কারণ ।
বিদেশের ধাতু ঢালাই শিল্পের
একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন , ইয়ংলে
ঘন্টা যে সার্থকভাবে তৈরী করা
হয়েছে তা বিশ্বের ধাতু ঢালাই
শিল্পের ইতিহাসের একটা বিস্ময়
। শিল্পোন্নত বর্তমান যুগেও
হুবহু এমন একটি ঘন্টা ঢালাই
করা কঠিন ।
|