পৃথিবীতে যেসব ভাষার শব্দ ব্যবহারের সময় সবচেয়ে দীর্ঘ এবং ব্যবহারকারীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী চীনের হান জাতির ভাষা সেগুলোর অন্যতম । হান জাতির ভাষার শব্দের সৃষ্টি ও ব্যবহার যে শুধু চীনা জাতির সংস্কৃতির বিকাশকে তরান্বিত করেছে তা নয় , বিশ্ব সংস্কৃতির বিকাশের উপরেও সুদুর প্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছে ।
আজ থেকে ছ হাজার বছর আগেকার
যে বানপো ধ্বংসাবশেষ আবিস্কৃত
হয়েছে তা থেকে পঞ্চাশাধিক প্রকার
খোদাই করা চিহ্ন পাওয়া গেছে
। নিয়ম অনুসারে সাজানোসেই চিহ্নগুলোর
আছে সহজ শব্দের বৈশিষ্ট্য ।
খৃষ্টপুর্ব ষোড়শ শতাব্দীতে
চীনের সাং রাজত্বকালে চীনের
হান জাতির ভাষার শব্দগুলো ধারাবাহিকভাবে
সৃষ্টি করা হয় ।প্রত্বতাত্ত্বিক
গবেষনায় প্রমান পাওয়া গেছে
যে , সাং রাজত্বকালের প্রথম
ভাগে চীনা সভ্যতা যে উচ্চতর
পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল কচ্ছপের
খোলের উপরে খোদিত চীনা শব্দের
অভ্যূদয় তার প্রধান বিশিষ্টতা
। সাং রাজত্বকালে রাজা কোনো
কাজ করার আগে ভাগ্যপরীক্ষা
করতেন , কচ্ছপের খোল ছিল ভাগ্যপরীক্ষার
হাতিয়ার ।কচ্ছপের খোলের উপরে
খোদিত চীনা শব্দকে বলা হয় এক
ধরনের পরিপক্ক বিন্যাস্ত শব্দ
। তার ভিত্তিতেই পরবতীকালের
হান জাতির শব্দের বিকাশ হয়েছে
।
কচ্ছপের খোল ব্যবহারের আগে
খোলে লেগে থাকা কচ্ছপের রক্তমাংস
সাফ করতে হবে এবং ঘষে মসৃন
করতে হবে । অত:পর ছুরি দিয়ে
কচ্ছপের খোল বা বন্যপশুর হাড়ে
মিয়মমাফিক অবতল কাটতে হবে ।
জ্যোতিষী বা ইন্দ্রজালিক নিজের
নাম ,গননার তারিখ ও প্রশ্ন
কচ্ছপের খোলে খোদাই করার পর
আগুন দিয়ে কচ্ছপের খোলের অবতল
সেঁকে দিতেন।তপ্ত অবতল ফেটে
যে ফাটল দেখা দেয় তাকে লক্ষণ
বলা হত ।ইন্দ্রজালিক ফাটলের
আকৃতি বিচার বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতবাণী
করেন ।ভবিষ্যতবাণী সফল হয় কিনা
তাও কচ্ছপের খোলে খোদাই করা
হয় । ভবিষ্যতবাণী সফল হলে কচ্ছপের
খোল সরকারী দলিল হিসেবে সংরক্ষিত
হয় ।
ইতিমধ্যে ইনশু থেকে এক লক্ষ
ষাট হাজার কচ্ছপের খোল পাওয়া
গেছে। এগুলের মধ্যে কোনো কোনো
খোল অক্ষত অবস্থায় রয়েছে ,তবে
কোনো কোনো খোলের উপরে কোনো
শব্দ খোদাই করা হয় নি ।একটি
পরিসংখ্যান অনুযায়ী আবিস্কৃত
কচ্ছপের খোলগুলোর উপরে চার
হাজারেরও বেশী শব্দখোদাই করা
হয়েছে ।চীনের পন্ডিতরা প্রায়
তিন হাজার শব্দ নিয়ে গবেষণা
করেছেন এবং এক হাজারেরও বেশী
শব্দের অর্থ বুঝতে পেরেছেন
।বাকী শব্দগুলোর অর্থ হয় বোধগম্য
নয় ,নয় এদের অর্থ নিয়ে পন্ডিতদেরমধ্যে
বিরাট মতপার্থক্য আছে । তা
সত্বেও এই এক হাজারেরও বেশী
শব্দের অর্থ বুঝলে সাং রাজত্বকালের
রাজনীতি ,অর্থনীতি , সংস্কৃতি
ইত্যাদি ক্ষেত্রের অবস্থা মোটামুটি
জানা যায়।কালক্রমে জিন ,সিয়াও
জুয়ান,লি ও খাই প্রভৃতি আকৃতিতে
হান জাতির শব্দ লেখা হয় । বর্তমানে
খাই আকৃতিতে হান জাতির শব্দ
লেখা প্রচলিত ।
হান জাতির শব্দের আকৃতি ও গঠন
ধাপে ধাপে স্থিরকৃত হয়েছে ।
প্রতিটি শব্দের আঁচড়ের সংখ্যা
ও আঁচড়ের ক্রমিকতাও নির্দ্ধারিত
হয়েছে । গত এক হাজারেরও বেশী
সময়ে খাই আকৃতিই হান জাতির
শব্দের স্ট্রান্ডার্ড আকৃতি
।
হান জাতির অর্থজ্ঞাপক শব্দ
আকৃতি অনুকরণের ভিত্তিতে উদ্ভূত
হয়েছে ।হান জাতির শব্দের সংখ্যা
প্রায় দশ হাজার , সচরাচর ব্যবহৃত
শব্দের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার
। এই তিন হাজার শব্দ দিয়ে অসংখ্য
শব্দ-গ্রুপ গঠন করা যায় এবং
তারপর নানা রকম বাক্য গঠন করা
যায়।
হান জাতির শব্দ উদ্ভূত হওয়ার
পর চীনের আশেপাশের দেশগুলোর
উপরে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে
। হান জাতির শব্দের ভিত্তিতেই
জাপান ,ভিয়েতনাম,কোরিয়া প্রভৃতি
দেশের শব্দ সৃষ্টি করা হয়েছে
।
|