মানুষ জন্মগ্রহণের পর নিজের
নাম পায় । নিজের নাম নিয়ে মানুষ
সমাজে প্রবেশ করে । মানুষের
নাম ব্যক্তি বিশেষের পরিচায়ক
, বস্তুত:নামই একজন মানুষকে
থেকে আরেকজন মানুষকে পৃথক করার
ভুমিকা পালন করে। কিন্তু চীনের
প্রাচীন সমাজে নামের আরো গভীর
তাত্পর্য ছিল ।
চীনের সুদীর্ঘ ইতিহাসে চীনাদের
নাম বিষয়ক সংস্কৃতি ছিল চীনা
জাতির বৈষয়িক জীবন ও মানসিক
জীবনের অন্যতম প্রধান যুগসূত্র
এবং রাজনীতি ,অর্থনীতি, সামাজিক
তত্পরতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে অত্যন্ত
গুরুত্বপুর্ণ । প্রত্নতাত্বিক
তথ্যে জানা যায় , চীনারা দশ
লক্ষ বছর আগে থেকে নিজেদের
প্রাচীন ভূমিতে বাস করতে শুরু
করেন । তবে চীনাদের নামের পদবীর
ইতিহাস শুধু পাঁচ ছয় হাজার
বছরের , অর্থাত্ মাতৃপ্রধান
আদিম সমাজেই এর উত্পত্তি ।
মাতৃপ্রধান আদিম সমাজে নারী
অধিপতির আসনে অধিষ্ঠিত ছিল।
তখন ভিন্ন ভিন্ন কুলের ছেলেমেয়েরা
বিয়ে করতে পারত কিন্তুএকই কুলের
ভেতরে বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল ।ভিন্ন
ভিন্ন কুলের মধ্যে বিবাহ প্রথা
বলবত্ থাকার দরুন সমাজের সদস্যদের
মধ্যে প্রতক্ষ্য রক্তের সম্পর্ক
ছিল কিনা তা জেনে নেয়ার প্রয়োজন
দেখা দেয় । এই কারনেই অভিন্ন
রক্তের সম্পর্কের চিহ্ন হিসেবে
নামের পদবীর অভ্যুদয় ঘটে ।
চীনের ছিং রাজত্বকালের পন্ডিত
গু ইয়ান উয়ের দৃষ্টিভংগী অনুযায়ী
চীনের প্রাচীনতম নামের পদবীর
সংখ্যা ছিল ২২ । তবে আরো অনেক
পদবী সম্ভবত: বিশেষ বিশেষ বংশ
অবলুপ্ত হওয়ার সংগে সংগে ইতিহাসের
তরঙ্গে বিলিন হয়েছে। যে সব
নামের পদবী টিকে গেছে তাদেরও
বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে । আজ
থেকে চার পাঁচ হাজার বছর আগে
চীনারা মাতৃপ্রধান সমাজ ও পিতৃপ্রধান
সমাজকে পেছনে ফেলে শ্রেণী সমাজে
পদার্পন করেন । ভিন্ন আদিম
মানবের বংশধরদের পারস্পরিক
প্রভাব যে ক্রমশই ব্যাপক হয়
এবং পারস্পরিক সংগ্রাম যে ক্রমাগত
তীব্র আকার ধারন করে তা সমাজের
সেই অন্তবর্তীকালের অন্যতম
মৌলিক প্রতীক।আধিপত্য ও বশ্যতার
পরিবর্তনে শ্রেণী সমাজের রূপ
ধারণ করতে শুরু করে । সেই সংগে
সমাজের সদস্যদের মধ্যে যারা
কীর্তি স্থাপন করেন তাঁরা পুরস্কার
হিসেবে প্রচুর জমি লাভ করেন
।তাঁরা পরিবার পরিজন , সহচর
ও যুদ্ধের বন্দীদের নিয়ে নতুন
ভুমিতে নতুন জীবন যাপন করতে
পারেন । সেই সব লোকের নামের
পদবী নানা ধরনের । নতুন বাস
স্থানে তাঁরা স্থানীয় চিহ্ন
হিসেবে নামের সংগে চীনা শব্দ
“ সি” যুক্ত করেন ।
খ্রীষ্টপুর্বতৃতীয় শতাব্দিতে
ছিন রাজ্যের সম্রাট চীনকে একীভুত
করার পর মাতৃপ্রধান সমাজে উদ্ভূত
নামের পদবী ও পিতৃপ্রধান সমাজে
উদ্ভূত “ সি” মিশে যেতে আরম্ভ
হয় । পরবর্তী দু হাজার বছর
স্থায়ী চীনের সামন্ততান্ত্রিক
সমাজে কয়েক ডজন রাজবংশের জন্ম
হয় ।প্রতিটি রাজবংশের জন্ম
হওয়ার পর অনুদান হিসেবে যে
ভুমি দেয়া হয় সেখানে নতুন নামের
পদবীও আবির্ভুত হয় । সুতরাং
নামের পদবী শ্রেণীগত মর্যাদায়
পরিণত হয় ।নামের পদবীকে কেন্দ্র
করে স্বতন্ত্র সংস্কৃতিও সৃষ্টি
হয় । এই সংস্কৃতি বিরাজ করেছে
বংশপরম্পরায় ।
পুর্বপুরুষদের মূল ও বংশের
উত্স অনুসন্ধনের প্রবল আকাঙক্ষা
এখন এই সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপুর্ণ
অংগ ।
বিদেশে অবস্থানরত চীনা প্রবাসীদের
রয়েছে চীনের মূল ভুভাগে ফিরে
নিজেদের পুর্বপুরুষদের আদিম
বাসস্থান সন্ধানের ঐতিহ্য ।
নামের পদবী বিষয়ক সংস্কৃতি
চীনের প্রাচীন সমাজের বিশেষ
ঐতিহাসিক পরিবেশে উদ্ভূত ,
গত কয়েক বছরে চীনের গবেষকরা
নামের পদবী বিষয়ক সংস্কৃতির
দিক থেকে চীনা জাতির সুদীর্ঘ
ইতিহাসের বিরাট ভান্ডার খননের
প্রচেষ্টা চালিয়েছেন । যেমন
নামের পদবীর উত্পত্তি, বিভাজন
ও মিলনের দিক থেকে গবেষনা করে
প্রাচীনকালের বিভিন্ন সমাজের
রুপান্তর সম্পর্কে গভীর জ্ঞান
অর্জন করা যায় । বংশতালিকা
, বংশবৃত্তান্ত, কুলজী বিশ্লেষন
করে প্রাচীন সমাজের বিকাশ ও
সামাজিক জীবনে রক্তের যোগসূত্রের
ঐতিহাসিক ভুমিকা জানা যায় ।
মোট কথা , চীনের প্রাচীন সমাজের
অনেকগুলো তাত্পর্যময় রূপ ,যেমন
স্বৈরাচারী ব্যবস্থা, বংশভিত্তিক
সমাজের গঠন , রাজার প্রতি আনুগত্য
আর পিতামাতার প্রতি সম্মান
প্রদর্শন যাকে কেন্দ্র করে
গড়ে উঠা নৈতিকতা ও আচরনের বিধি
সবই নামের পদবী বিষয়ক সংস্কৃতিতে
অভিব্যক্ত হয় । এটাই তার উপরে
পন্ডিতদের গুরুত্ব আরোপ করার
কারন ।
|