মহাপ্রাচীরের তোরণের নাম

       বিপদসংকুল যে স্থানে মহাপ্রাচীর নির্মিত হয় সেখানে তোরণও তৈরী করা হয় ,অনেক তোরণের নামকরণ শিল্পরসে পরিপুর্ণ ।

 সান হাই তোরণ মহাপ্রাচীরের এক নম্বর তোরণ বলে পরিচিত । হোপেই প্রদেশ ও লিয়াওনিং প্রদেশের সীমান্তে অবস্থিত সান হাই তোরণ মহাপ্রাচীরের পুর্বপ্রান্ত । সান হাই তোরণের উত্তরে ইয়ান পর্বত ,দক্ষিণে পো সাগর , সবুজ পর্বত ও নীল সাগর কোলাকুলি করে । এই তোরণটির উপরে উঠে ইয়ান পর্বত ও পো সাগরের সুন্দর দৃশ্যের দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায় । এজন্য তার নাম হয়েছে “সান হাই” । উল্লেখ্য: চীনা ভাষায় “ সান” এর মানে পর্বত আর “ হাই”এর মানে সাগর । 

সানহাই তোরণ প্রথমে নির্মান করেছিলেন চীনের মিং রাজত্বকালের বিখ্যাত জেনারেল সু দা । তীক্ষ্ণ সামরিক দৃষ্টি দিয়ে সেখানের অবস্থান পর্যবেক্ষণের পর তিনি পর্বতও সাগরের মধ্যকার পথ নিয়ন্ত্রনের জন্য সেখানে এই তোরণ নির্মানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ।সান হাই তোরণের চারটি ফটক আছে । পুর্ব ফটকের উপরিভাগে “ বিশ্বের এক নম্বর তোরণ” লেখা প্রকান্ড ফলক লাগানো , ফলকটি পাঁচ দশমকি নয় মিটার লম্বা এবং এক দশমিক ছয় মিটার চওড়া ।তার উপরে প্রতিটি চীনা শব্দ এক দশমিক চার পাঁচ মিটার লম্বা এবং এক দশমিক শুন্য নয় মিটার চওড়া । শব্দগুলোলিখেছিলেন মিং রাজত্বকালে রাজপরীক্ষায়উত্তীর্ন পরীক্ষার্থী,খ্যাতনামা লিপিশিল্পী সিয়াও সিয়ান ।কিন্তু ফলকটির নিম্নভাগে নিয়মমাফিক নিজের নাম লিখেন নি তিনি ।কথিত আছে , তিনি এক দমে লেখার পর “ বিশ্বের এক নম্বর তোরণ” এর দিকে অনেকক্ষণ তাকালেন । চীনা শব্দ“ এক ” দেখে তিনি পরিতৃপ্ত নন । বারম্বার লিখেও তিনি পরিতৃপ্ত হতে পারেন নি ।অগত্যাই তুলি টেবিলে ফেলে তিনি সান হাই তোরণের নীচে একটি রেস্তোঁরায়গিয়ে মদ খেতে খেতে চীনা শব্দ“ এক ” কি ভাবে লেখবেন তা নিয়ে ভাবতে লাগলেন । একজন পরিচারক তাঁর জন্য খাবার নিয়ে এল , অভ্যাসবশত: সে ভেজা গামছা দিয়ে টেবিল মুছতে না মুছতেই টেবিলে চীনা শব্দ একের মত যে পানির দাগ দেখা গেল তা সিয়াও সিয়ানের চোখে পড়ল । তিনি হঠাত দাঁড়িয়ে পড়ে চিত্কার করতে লাগলেন: চমত্কার ! চমত্কার ! তিনি সেই পানির দাগের মত ফলকটির উপরে চীনা শব্দ “ এক ” লিখলেন । তিনি মনে করতেন , চীনা শব্দ “ এক ” তিনি টেবিলের পানির দাগের অনুকরণে লিখেছেন , তাই ফলকটির উপরে নিজের নাম লিখেন নি । চীনে এই ফলকটির মত লিপিশিল্পীর নামবিহীন প্রকান্ড ফলক কদাচিত দৃষ্টিগোচর হয় । 

জিয়া ইয়ু তোরণ মহাপ্রাচীরের পশ্চিমপ্রান্ত ।কানসু প্রদেশের জিয়া ইয়ু কুয়ান শহরে অবস্থিত জিয়া ইয়ু তোরণ ১৩৭২ সালে নির্মিত ।জিয়া ইয়ু পাহাড়ের উপরে তোরণটি নির্মিত হয়েছে বলে তার নাম হয়েছে জিয়া ইয়ু তোরণ । যুদ্ধ -বিগ্রহে তোরণটি নষ্ট হয় নি বলে তাকে শান্তি তোরণও অভিহিত করা হয় । 

সানসি প্রদেশের পিংদিং জেলার নিয়াং জি তোরণ খাড়া পর্বতের উপরে নির্মিত বলে তা রক্ষা করা সহজ , দখল করা কঠিন । প্রাচীনকাল থেকে নিয়াং জি তোরণ সানসি প্রদেশের দ্বার বলে পরিচিত । এই তোরণের আগেকার নাম ছিল ওয়েজে।থাং রাজবংশের সম্রাট লি ইউয়ানের সেজো মেয়ে পিং ইয়াং বিশ তিরিশ হাজার সৈন্য নিয়ে এই তোরণ রক্ষা করতেন । সমর বিদ্যা রাজকুমারী পিং ইয়াংয়ের আয়ত্ত্ব ছিল । তাঁর নেতৃত্বাধীন বাহিনীকে নারী বাহিনী বলা হত । এই কারণেই তোরণটির নাম হয়েছে নিয়াং জি তোরণ, চীনাভাষায় নিয়াং জির মানে নারী । নিয়াং জি তোরণের পুর্বদ্বারের উপরে খোদাই করা “জি লি নিয়াং জি তোরণ” এই পাঁচটি শব্দ এখনো স্পশ্টই দেখা যায় । 

ইয়ো মেন তোরণ কানসু প্রদেশের তুনহুয়াং জেলায় অবস্থিত। প্রাচীনকালে সিনজিয়াংয়ের হোথির উত্পন্ন জেড পাথর এই তোরণের মধ্য দিয়ে চীনের অন্যান্য অঞ্চলে চালান দেয়া হত বলে তোরণটির নাম হয়েছে “ইয়ো মেন ” । উল্লেখ্য: চীনা ভাষায় ইয়ো মানে জেড পাথর আর মেন মানে তোরণ । 

জু ইউং তোরণ হোপেই প্রদেশের ই জেলার জি জিন পাহাড়ের উপরে নির্মিত হয়েছে । মহাপ্রাচীর তৈরীর সময়ে সরকারের কর্মচারীরা নির্মানকাজ পরিচালন করার জন্য সেখানে থাকতেন । নির্মানকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর জু ইউং নামে তোরণটিকে নামকরণ করা হয়েছে ।উল্লেখ্য: চীনা ভাষায় জু ইউংয়ের মানে রাজকর্মচারীদের বসবাসের স্থান । 

পিয়ান কুয়ান চীনের সানসি প্রদেশের পিয়ান কুয়ান জেলায় অবস্থিত । এই তোরণের নাম শুনে অদ্ভুত বলে মনে হয় ।কেন না চীনা ভাষায় পিয়ানের মানে “ঢালু”। এই তোরণকে যে অদ্ভুত নামে নামকরণ করা হয়েছে তার কারন হলো , যে জায়গায় তোরণটি অবস্থিত সেই জায়গার পুর্বাংশ উচু , পশ্চিমাংশ নীচু ,কাজেই জায়গাটি বেশ ঢালু । 

সানসি প্রদেশের দাই জেলার একটি উপত্যকায় নির্মিত ইয়ান মেন তোরণের দুপাশে আকাশচুম্বী শিখর । শিখরটির উপর দিয়ে উড়বার শক্তি কোনো বলাকার নেই । যাযাবর বলাকাকে উপত্যকার মাঝখানে নেমে তোরণটির সামনে দিয়ে উড়তে হয় । এই জন্য তোরণটিকেইয়ান মেন বলে ডাকা হয় । উল্লেখ্য: চীনা ভাষায় ইয়ানের মানে বলাকা ।