চীনের রেশম পথ
 

       রেশম পথ ছিল পাশ্চাত্যে চীনের প্রাচীন সভ্যতা বিস্তারের গুরুত্বপুর্ণ পথ এবং পাশ্চাত্য জগত ও চীনের মধ্যকার অর্থনৈতিক আর সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের সেতু । 

 সর্বজনবিদিত রেশম পথ চীনের পশ্চিম হান রাজত্বকালের পরিব্রাজক জাং ছিয়ান খুলেছিলেন, এই রেশম পথের পুর্বপ্রান্ত চীনের ছাং আন শহর এবং পশ্চিম প্রান্ত ইটালির রোম । স্থলভুভাগেরেশম পথের দুটো শাখা আছে । দক্ষিণ শাখা পথ তুনহুয়াং থেকে শুরু করে ইয়াংকুয়ান পার হয়ে খুনলুন পর্বত অতিক্রম করে সিনজিয়াং ,উত্তরপুর্ব আফগানিস্তান, ইরান, ও আরব উপদ্বীপ হয়ে অবশেষে রোম সম্রাজ্য পৌঁছায় । উত্তরশাখা পথ তুনহুয়াং ছেড়ে ইয়ুমেন পার হয়ে পশ্চিম দিকে এগিয়ে গিয়ে তিয়ানসান পর্বত ডিংগিয়ে মধ্য এশিয়া পার হওয়ার পর দক্ষিণ পশ্চিম দিকে মোড় নিয়ে দক্ষিণ শাখা পথের সংগে মিলিত হয় । এই দুটো রেশম পথকে স্থলভুভাগের রেশম পথ বলা হয় । 

এ ছাড়া আরো দুটো অবিদিত রেশম পথ আছে । একটি হলো দক্ষিণ পশ্চিম রেশম পথ । এই রেশম পথ চীনের সিচুয়ান প্রদেশ থেকে শুরু করে ইয়ুননান প্রদেশ ও ইলোয়াদি নদী পার হয়ে উত্তর মায়ানমারের মেঙগং , উত্তর পুর্ব ভারতের মোপার আর গংগা নদীর অববাহিকার মধ্য দিয়ে উত্তর পশ্চিম ভারতে পৌঁছে এবং অবশেষে ইরান মালভুমিতে সমাপ্ত হয় ।এই রেশম পথ ছাং আন শহর থেকে শুরু হওয়া রেশম পথের চেয়ে অনেক আগে খোলা হয়েছিল ।১৯৮৬ সালে চীনের প্রত্নতত্ত্ববিদরা চীনের সিচুয়ান প্রদেশের কুয়ান হান শহরে যে রহস্যময় সানসিনতুই ধ্বংসাবশেষ আবিস্কার করেন তা প্রায় তিন হাজার বছর পুরনো।সেখানে পশ্চিম এশিয়া ও গ্রীসের সংস্কৃতির ছাপ- বিজড়িত কতকগুলো প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে । এই গুলোর মধ্যে আছে ১৪২ সেন্টিমিটার লম্বা সোনার দন্ড , প্রায় চার মিটার লম্বা “ স্বর্গীয় বৃক্ষ” এবং ছোটো বড় অনেক তামার মানুষ ,তামার মাথা আর তামার মুখোশ । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন , প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যকার সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের সময়ে এই সব প্রত্নবস্তু চীনে আনা হয়েছিল ।তাঁদের অনুমান সত্য বলে প্রমানিত হলে এ কথা বলা যাবে যে , তিন হাজার বছর আগে এই রেশম পথ খোলা হয়েছিল ।

অন্য একটি রেশম পথকে সামুদ্রিক রেশম পথ বলা হয় । চীনের কুয়াং চৌ শহর থেকে নৌকায় চড়ে এই সামুদ্রিক পথ বেয়ে মালাক্কা প্রণালী মধ্য দিয়ে ভারত আর পুর্ব আফ্রিকায় যাওয়া যায় ।পুর্ব আফ্রিকার সোমালি প্রভৃতি দেশের খননকাজে আবিস্কৃত প্রত্ববস্তু থেকে প্রমান পাওয়া গেছে যে , চীনের সং রাজত্বকালে সামুদ্রিক রেশম পথ খোলা হয়েছিল ।  

সামুদ্রিক রেশম পথ বিশ্বের প্রধান প্রধান প্রাচীন সভ্য দেশ আর সংস্কৃতির উত্পত্তিস্থলের সংগে চীনকে সংযুক্ত করেছে এবং এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানকে ত্বরান্বিত করেছে ।তাকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংলাপের পথও অভিহিত করা হয় । ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখিত: মার্কো পোলো সামুদ্রিক রেশম পথ বেয়ে চীনে এসেছিলেন এবং চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ছুয়ানচৌ শহরে নৌকায় চড়ে সামুদ্রিক রেশম পথে তাঁর জন্মস্থান ভেনিসে ফিরে গিয়েছিলেন ।