সম্রাট ইনজেনের সমাধিস্থল সানসি প্রদেশের লিনথং জেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পুর্বের ইয়ানজাই মহকুমায় অবস্থিত । সমাধিস্থলটি দক্ষিণ দিকে লি পাহাড়ের সংগে সংলগ্ন , এর উত্তর দিকে ওয়ে নদী । আকাশ থেকে নীচের দিকে তাকালে দেখা যায় , সমাধিস্থলটি প্রকান্ড একটি পিরামিডের মত ।
ছিন রাজত্বকালের রাজধানী
সিয়ানইয়ান শহরের অনুকরণে সম্রাট
ইনজেনের সমাধিস্থলের নকশা তৈরী
করে নির্মান করা হয়েছে । ভুগর্ভস্থ
ভবন সুরম্য রাজপ্রাসাদের প্রতীক
।সমাধিস্থলটির অন্তর্প্রাচীর
ও বহির্প্রাচীর যথাক্রমে রাজপ্রাসাদ
ঘেরা প্রাচীর ও সিয়ানইয়ান শহর
ঘেরা প্রাচীরের প্রতীক । তার
আয়তন ৬৬ দশমিক ২৫ বর্গ কিলোমিটার
এবং তা বর্তমান সি আন শহরের
আয়তনের চেয়ে দ্বিগুণ বেশী ।
১৩ বছর বয়স্ক ইনজেন সিংহাসনে আরহোনের পর থেকে লি পাহাড়ের কাছে তার সমাধিভবন নির্মান করতে শুরু করেন ।অন্য ছয়টি রাজ্য অধিকার করে চীনদেশের একীকরণ বাস্তবায়নের পর চীনের বিভিন্ন স্থান থেকে এক লক্ষেরও বেশী শ্রমজীবী যোগাড় করে সমাধিভবন নির্মানকাজ অব্যাহত রাখা হয় ।৫০ বছর বয়সে ইনজেন পরলোক গমন করেন , তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সমাধিস্থলের নির্মানকাজ চলছিল ৩৭ বছর ধরে ।
ইতিহাস-গ্রন্থে উল্লেখিত : ঝর্নার নীচে সমাধিস্থলের আঙ্গিনা খননের পর তরল তামা ঢালাই করে তা পাকাপোক্ত করা হয় ।ভুগর্ভস্থ প্রাসাদ অমুল্য রত্ন আর মণি-মুক্তায় পরিপুর্ণ । রাজদরবারের ভবনে মন্ত্রী ও পারিষদের আসন সাজানো । চুরি-ডাকাতির প্রতিরোধে সমাধিকক্ষে গুপ্ত ধনুকে তীর বসানো , চোর ডাকাত শবাধার স্পর্শ করলে তীর ছুড়ে তাকে মেরে ফেলা যায় ।সমাধিকক্ষের মনি মুক্তা খচিত গুম্বজ তারা খচিত আকাশের প্রতীক ।তার নীচে ঝুলে থাকা পর্বত ,নদী ,সাগর আর সমতলভুমির মডেলের ভিতর যে পারদে ভরা তা প্রবাহিত নদীর প্রতীক । নদীর মডেলের উপরে সোনা দিয়ে তৈরী বন্য মুরগী ভাসছে।সমাধিকক্ষে তিমির তেলের বাতি জ্বলছে।সমাধিকক্ষের চারপাশে বিরাট প্রকোষ্ঠে সারি সারি সৈনিক আর ঘোড়ার মুর্তি সাজানো । সমাধিস্থলের কাঠামো সম্রাট ইনজেনের নিরপুম ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির নিদর্শন ।
খ্রীষ্টীয় পুর্ব ২১০ অব্দে
সম্রাট ইনজেন সাছৌর পিংতাইয়ে
(বর্তমান হোপেই প্রদেশের পিং
সিয়াং ) আকস্মিক মৃত্যু বরন
করেন । মৃত্যুর দু মাস পর তাঁর
শবদেহ সিয়ানইয়ানে নিয়ে যাওয়া
হয় এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন
করা হয় ।তাঁকে সমাধিস্থ করার
সময়ে থাংরাজবংশের দ্বিতীয় সম্রাট
হু হাই সম্রাট ইনজেনের সকল
পরিচারিকা ও সমাধিস্থলের নির্মানকাজে
অংশগ্রহণকারী যাবতীয় রাজমিষ্ট্রীকে
জীবন্ত কবর দেয়ার আদেশ দেন
।
হানসু ও সুই জিং জু নামে চীনের
দুটো ইতিহাস-গ্রন্থে উল্লেখিত
: খ্রীষ্টপুর্ব ২০৬ অব্দে সিয়াংইয়ু
সম্রাট ইনজেনের সমাধি-মন্দিরকে
ধ্বংস করেন । উত্তর ওয়ে রাজত্বকালের
লেখক লি তাও ইউয়ান তাঁর সুই
জিং জু নামক গ্রন্থে বলেছেন
, সিয়াংইয়ু সদল বলে রাজধানী
সিয়ান ইয়াংয়ে প্রবেশের পরবর্তী
৩০দিনে তিন লক্ষ লোক সমবেত
করে সমাধিস্থলের অজস্র জিনিসপত্র
গাড়িতে বোঝাই করলেও জিনিসপত্র
ফুরায় নি ।পরে উত্তর পুর্ব
চীনের চোররা মাটি খুঁড়ে সম্রাট
ইনজেনের তামার শবাধার চুরি
করে নিয়ে যায় । বছরখানেক পর
একজন ভেড়া পালক হারিয়ে যাওয়া
ভেড়ার সন্ধানে হাতে মশাল ধরে
ভুস্থসমাধি- মন্দিরে প্রবেশ
করেন , অসাবধানে সমাধি- মন্দিরে
আগুন ধরে । আগুন নববই দিনের
পরেও নিভে যায় নি । ভুস্থ সমাধি-মন্দির
দাবানলে ধ্বংশপ্রাপ্ত হয় ।এমন
জনশ্রুতি চীনাদের মুখে মুখে
প্রচলিত ।
তবে কেউ কেউ সন্দেহ প্রকশ করে
বলেছে , সম্রাট ইনজেনের মৃত্যুর
মাত্র এক শো বছর পর সি মা ছিয়ান《ইতিহাসের
আলেখ্য 》 এর একটি বিশেষ পরিচ্ছদে
সম্রাট ইনজেনের জীবনী লিখেছেন
। তাঁর সমাধি-মন্দির যে ধ্বংস
হয়েছে《ইতিহাসের আলেখ্য 》এ তার
উল্লেখ নেই । কিন্তু ছ শো বছরের
পর লি তাও ইউয়ান যে বিস্তারিকভাবে
সমাধি ধ্বংসের বর্ননা করেছেন
তা পড়ে পাঠকদের মনে সন্দেহ
না জেগে পারে না ।
১৯৪৯ সালের পর বিশেষ করে ভুগর্ভে
ছিন রাজত্বকালের তৈরী ঘোড়া
ও সৈন্যদের মাটির মুর্তিগুলো
আবিস্কারের পর চীনের প্রত্বতত্ত্ববিদরাসম্রাট
ইনজেনের সমাধি-মন্দির অনুসন্ধান
করেন ।তাঁরা ভুগর্ভস্থ প্রাসাদের
চারপাশে দুশোরও বেশী গর্ত খুঁড়েন
। সমাধি-মন্দির উত্তর পুর্ব
দিক আর পশ্চিম দিকে চোরদের
খোঁড়া যে দুটো গর্ত আবিস্কৃত
হয়েছে তা নয় মিটার গভীর , এর
ব্যাস আনুমানিক নববই সেন্টিমিটার
। দুটো গর্ত সমাধি-মন্দিরের
কেন্দ্র থেকে যে আড়াই শো মিটার
দূরে তা থেকে বুঝা যায় যে চোর
ভুগর্ভস্থ প্রাসাদে ঢোকে নি
। এখন গর্তদুটো মাটির নীচে
ঢাকা থাকে বলে উপর থেকে আর
দেখা যায় না ।
ভুগর্ভস্থ প্রাসাদ- বেষ্টনী
মাটির স্তর অক্ষয় রয়েছে বলে
ভুগর্ভস্থ প্রাসাদের দেওয়াল
নষ্ট হয় নি এবং ভুগর্ভস্থ প্রাসাদে
পারদের নিয়মমাফিক বিন্যাস বজায়
রয়েছে বলে এই সিদ্ধান্ত নেয়া
যায় যে , ভুগর্ভস্থ প্রাসাদ
ক্ষতিগ্রস্থ হয় নি এবং ভেতরের
জিনিষ চুরি করা হয় নি ।সিয়াং
য়ুর সৈনিকরা সমাধি খনন করেছিলেন
এবং ভুগর্ভস্থ প্রাসাদে আগুন
ধরেছিল বলে লি তাও ইউয়ানের
গ্রন্থে যে বর্ননা রয়েছে তা
বিশ্বাসযোগ্য নয় ।সিয়াং য়ুর
সৈনিকরা সম্ভবত: সমাধি-মন্দিরের
আনুসংগীক ইমারত ধ্বংস করেছিল
, এই কথা সত্য বলে প্রমানিত
হলে তবে এই কথাও বলা যায় যে
, সম্রাট ইনজেনের সমাধি পৃথিবীর
একটি অতুলনীয় ভুগর্ভস্থ প্রাসাদ
।
|