১৮৬০ সালে ইংগ -ফরাসী যুক্ত বাহিনী পেইচিংয়ের উপরে হামলা চালায় এবং ইউয়ান মিং প্রাসাদে ঢুকে লুটতরাজ করে । ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সামরিক অফিসার ও সৈন্যরা যে কত মুল্যবান জিনিস লুট করে নিয়ে গেছে তার ইয়াত্তা নেই । শুধু ফরাসী হানাদার সৈনিকরা দেশে ফিরে ফ্রান্সের সম্রাটকে যে সব উপহার দিয়েছিল তার আংশিক দুর্লভ শিল্পবস্তুর সংখ্যা প্রায় দশ হাজার । আজ কেউ ইউয়ান মিং প্রাসাদের মুল্যবান পুরাকীর্তি দেখতে চাইলে তাকে বৃটেন ও ফ্রান্সে যেতে হবে ।
লন্ডনের ব্রিটিস যাদুঘরে ইউয়ান মিং প্রাসাদ থেকে লুণ্ঠিত হাজার হাজার দুষ্প্রাপ্র্য শিল্পবস্তু সাজানো রয়েছে । এগুলোর মধ্যে আছে চীনের ছিন আর হান রাজত্বকালের পুরাকীর্তি , সুই আর থাং রাজত্বকালের চিত্র ও হস্তলিপি ,মিং আর ছিং রাজত্বকালের সোনা ও জেড পাথরের জিনিসপত্র ইত্যাদি ইত্যাদি । সেগুলোর মধ্যে 《নুসিজেন তু》 নামক চীনের পুর্ব জিন রাজত্বকালের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী গু খাই জির আঁকা একটি ছবি চীনের চিত্রশিল্পের একটি অমুল্য রত্ন। হানাদার ফরাসি বাহিনী ফ্রান্সের তৃতীয় নেপোলিয়ন কে ইউয়ান মিং প্রাসাদের যে কয়েক হাজার পুরাকীর্তি উপহার দিয়েছিল সেগুলো দেখানোর জন্য তৃতীয় নেপোলিয়ন তাঁর দুর্গে বিশেষভাবে চীন-কক্ষ তৈরী করেছিলেন ।সে সব উপহার-সামগ্রীর মধ্যে ছিল সাং আর চৌ রাজত্বকালের তাম্রবস্তু, মিং আর ছিং রাজত্বকালের চীনামাটির পাত্র ও জেড পাথর আর হস্তদন্তির ভাস্কর্যশিল্পজাত দ্রব্য , সম্রাট ছিয়ানলংয়ের জেড পাথরের সীল এবং ৬৬ বছর বয়স্ক সম্রাট ছিয়ানলংয়ের জন্মদিন পালনের জন্য একশোজন পন্ডিতের লেখা অভিনন্দন বাণী খোদিত জেড পাথর । প্যারিসের জাতীয় গ্রন্থাগারে ইউয়ান মিং প্রাসাদের ৪০টি দৃশ্যের ছবি , সম্রাট ছিয়ানলংয়ের কবিতা লেখা ইউয়ান মিং প্রাসাদের ছবি সহ ইউয়ান মিং প্রাসাদ থেকে লুট করে নিয়ে যাওয়া ৮০টি মুল্যবান পুরাকীর্তি সংরক্ষিত । ইউয়ান মিং প্রাসাদের যে কত দুর্লভ বস্তু বিদেশীদের হাতে পড়েছে তা গননার উপায় নেই ।
২০০০ সালের মে মাসে হংকংয়ের পুরাকীর্তি নিলাম কক্ষে প্রকাশ্যে তামা দিয়ে তৈরী গরু ,বানর আর বাঘের মাথা সহ ইউয়ান মিং প্রাসাদের কয়েকটি পুরাকীর্তি নিলামে বিক্রী করা হয় । ইউয়ান মিং প্রাসাদের সিইয়াং ভবনে চীনের বারটি চান্দ্র বর্ষের প্রতীক হিসেবে তামা দিয়ে তৈরী যে বারটি প্রাণীর মাথা একটি ঘন্টার উপরে স্থাপিত হয়, সেগুলোর তিনটে হল সেই গরু ,বানর আর বাঘের মাথা।কথিত আছে এক এক লগ্নে এক এক প্রাণীর মুখ থেকে পানি ছিটানো হত । দুপুর বারোটায় বারটি প্রাণীর মুখ থেকে পানি একসংগে ছিটানো হত। এই ঘন্টার শিল্পচাতুর্য অনন্য । হানাদার বাহিনীও এই ঘন্টা হাতে পেয়ে তাকে অমূল্য রত্ন বলে স্বীকার করে ।পরে এই ঘন্টা যাঁর হাতে পড়েছে তিনি একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি।
|
|
ইউয়ান মিং প্রাসাদে তামা দিয়ে তৈরী বানরের মাথা |
ইউয়ান মিং প্রাসাদে তামা দিয়ে তৈরী বাঘের মাথা |
|
|
ইউয়ান মিং প্রসাদে তামা দিয়ে তৈরী তরুর মাথা |
সম্রাট ছিয়ানলংয়ের স্বাক্ষর সম্বলিত সোনালি ফুলদানী |
নিলাম কক্ষে তামা দিয়ে তৈরী বাঘ, গরু আর বানরের মাথা যথাক্রমে এক কোটি চল্লিশ লক্ষ, সত্তর লক্ষ আর চুয়াত্তর লক্ষ হংকং ডলারে বিক্রি হয় । আনন্দের ব্যাপার এই যে , চীনের দুটো কম্পানি এই তিনটে মুল্যবান পুরাকীর্তি কিনেছে ।
|