সুফুর জাপান-যাত্রার রহস্য
 

      ছিন রাজবংশের ইয়ংজেন সিংহাসনে আরোহনের পর চিরকাল বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতেন ।একদিন তিনি খবর পেলেন চীনের পো সাগরে  একটি স্বর্গীয় পর্বতে মৃতসঞ্জীবনী পাওয়া যায় । কালবিলম্ব না করে তিনি ইয়ান রাজ্যের অধিবাসী লু সেনকে পো সাগরে  মৃতসঞ্জীবনী সন্ধানের নির্দেশ দিলেন ।লুসেনের জাহাজ যথাসময়ে জিয়ে সি অর্থাত বর্তমানের ছিনহুয়াঙতাও শহর ছেড়ে গেল ।কিন্তু তিনি মৃতসঞ্জীবনী খুঁজে পান নি ।ছিনহুয়াঙতাও শহরের কংসান পার্ককে লুসেনের সমুদ্রযাত্রা আরম্ভের-স্থান বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।১৯৯২সালে সেখানে সম্রাটইয়ংজেনের কালো পাথারের যে মূর্তি বসানো হয়েছে তা ৬মিটার উচু এবং তার ওজন ৮০ টন।  

   মৃতসঞ্জীবনীর সন্ধানে লুসেন ব্যর্থ হয়েছে জেনে সম্রাট ইয়ংজেন সুফুকে পো সাগরে  মৃতসঞ্জীবনী সন্ধান করতে পাঠালেন ।সুফু প্রথমবার জাহাজে উঠে সাগরে দিনখানেক কাটানোর পর রাজধানীতে ফিরে সম্রাটইয়ংজেনকে জানালেন যে ,তিনি স্বর্গীয় ফেংলাই পর্বতে আরোহন করে মৃতসঞ্জীবনীর সন্ধান পেয়েছিলেন ,কিন্তু তাঁর নিয়ে যাওয়া যত্সামান্য উপহারে অসন্তুষ্ট হয়ে স্বর্গীয় ফেংলাই পর্বতের দেবতা তাঁকে মৃতসঞ্জীবনী দিতে নারাজ ।সেই দেবতা তাকে বলেছেন , মৃতসঞ্জীবনী পেতে চাইলে সুদর্শন নরনারী ও দক্ষ ছুতার মিস্ত্রী সেখানে পাঠাতে হবে । সুফু মৃতসঞ্জীবনী দেখেছেন জেনে সম্রাটইয়ংজেন দারুন খুশী । তিনি তিন হাজার বালকবালিকা ও কিছু সংখ্যক দক্ষ ছুতার মিস্ত্রী বাছাই করে তাদের সুফুর সংগে মৃতসঞ্জীবনী সন্ধানে যেতে হুকুম দেন । সুফু সমুদ্রে কিছুদিন ঘোরাফেরা করে মৃতসঞ্জীবনী খুঁজে পান নি । রাজধানীতে ফিরে সম্রাট ইয়ংজেনকে জানালেন যে , তিনি যে মৃতসঞ্জীবনী পান নি তার কারণ : সমুদ্রের একটি প্রকান্ড মাছ তাঁর জাহাজকে স্বর্গীয় ফেংলাই পর্বতের পাদদেশে ভিড়তে দেয় নি । ভিড়তে চাইলে শ্রেষ্ঠ তীরন্দাজ আর আধুনিক অস্ত্র দরকার । আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে , একই দিন রাতে সম্রাট ইয়ংজেন স্বপ্ন দেখেছেন :তিনি সমুদ্র-দেবতার সংগে ধস্তাধস্তি করছেন । দৈবজ্ঞ তাঁর স্বপ্নের অর্থ ব্যাখ্যা করে বললেন যে , সমুদ্রদেবতাটি সেই প্রকান্ডমাছের প্রতীক ।সম্রাট ইয়ংজেন সুফুর মিথ্যা কথা বিশ্বাস করে তার জন্য শ্রেষ্ঠ তীরন্দাজ আর আধুনিক অস্ত্র যোগাড় করেন ।এবার সম্রাট ইয়ংজেন স্বয়ং নৌযাত্রায় বের হলেন ,তাঁর জাহাজ জিফু দ্বীপের কাছে যেতে না যেতেই একটি প্রকান্ড মাছ দেখা দিল।সম্রাট ইয়ংজেন তত্ক্ষণাত্ তীর ছুড়ে মাছটি মেরে ফেলেন এবং মনে করেন , স্বর্গীয় ফেংলাই পর্বতে আরোহন করতে আর কোনো বাঁধাই নেই । কিন্তু অবশেষে স্বর্গীয় ফেংলাই পর্বত ও মৃতসঞ্জীবনী খুঁজে পাওয়া গেল না ।সুফু সম্রাট ইয়ংজেনের সংগে দেখা করার সাহস না করে তিন হাজার বালকবালিকা ও দক্ষ ছুতারদের নিয়ে জাপানে পালিয়ে যান এবং অবশেষে সুফু জাপানের ফুসি পর্বতের পাদদেশে পরলোক গমন করেন। তাদের বংশধররা যুগ যুগ ধরে জাপানে বাস করেন । 

   জাপানে সুফু সম্বন্ধে নানা রকম কিংবদন্তী প্রচলিত ।এমন কি ,কোনো কোনো জাপানী পন্ডিত মনে করেন সুফুই জাপানের ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখিত সম্রাট সিন্তু ।জাপানী জনগণও তাদের পুর্বপুরুষ হিসেবে সুফুকে পুজা করেন এবং তাঁকে কৃষি দেবতা ও ভেষজ ঔষধের দেবতা বলে সম্মান করেন ।জাপানে এখনো সুফুর সমাধি, সুফু ভবন, সুফু পাহাড় , এবং সুফুর তীরে অবতরনের স্মৃতিফলক আছে।১৯৯১ সালে জাপানী জনগণ সাগা জেলায় সুফুর পথ নামে একটি পার্ক স্থাপন করেছেন ।প্রতিবছরের শরত্কালে মন্দিরে সুফুর প্রতিমুর্তির সামনে ধানের শিষের প্রথম গুচ্ছ অর্পন করা হয় । প্রতি ৫০ বছরে একবার করে বিপুল সমারোহে সুফুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়।