《 ইতিহাসের আলেখ্য 》
 

      চীনের ইতিহাসে 《ইতিহাসের আলেখ্য 》একাধারে একটি মহান ঐতিহাসিক গ্রন্থ ও জীবনী সাহিত্যাঙ্গনের একটি অনন্য রচনা । পরবর্তী যুগের ইতিহাস বিদ্যা চর্চা ও সাহিত্যের উপরে এর প্রভাব সুদুরপ্রসারী ।খ্রীষ্টপুর্ব প্রথম শতাব্দীতে চীনের পশ্চিম হান রাজত্বকালে রচিত《ইতিহাসের আলেখ্য 》এ চীনের আদিম যুগ থেকে পশ্চিম হান রাজত্বকাল পর্যন্ত তিন হাজার বছরের রাজনীতি 、অর্থনীতি、সংস্কৃতি ও ইতিহাস বর্ননা করা হয়েছে । খ্যাতনামা ব্যক্তিদেরকে কেন্দ্র করে লেখা চীনের প্রথম ইতিহাস-গ্রন্থ 《ইতিহাসের আলেখ্য》কে চীনের জীবনী সাহিত্যের সুচনাও বলা যায়। 

  《ইতিহাসের আলেখ্য 》 এর রচয়িতা সি মা ছিয়ান চীনের পশ্চিম হান রাজত্বকালের ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। তাঁর পিতাও রাজদরবারের ইতিহাস-গ্রন্থের রচয়িতা । ছেলেবেলায় সি মা ছিয়ানের বুদ্ধি ছিল সুতীক্ষ্ণ , তিনি ভিন্ন দৃষ্টিভংগীত বইপুস্তকে উল্লেখিত ঐতিহাসিক ব্যক্তি ও ঘটনা বিচার বিশ্লেষণ করতেন। যৌবনে তিনি নানা জায়গায় ভ্রমণ করে সামাজিক রীতিনীতি , অর্থনৈতিক বিকাশ ও জিনিসপত্র উত্পাদন পর্যবেক্ষণ করতেন ,দর্শনীয় স্থান আর প্রাচীন মঠ-মন্দির পরিদর্শন করতেন এবং স্থানীয় খ্যাতনামা ঐতিহাসিক ব্যক্তি ও ঘটনা সম্পর্কিত জীবনী আর তথ্যাদি সংগ্রহ করতেন । পরে তিনি তাঁর পিতার মত রাজদরবারের ইতিহাস -গ্রন্থ রচয়িতা নিযুক্ত হন । পুর্ববর্তী যুগ সম্পর্কে তখনকার পুস্তক রাজাদের পারস্পরিক আক্রমণ চলার সময়ে রচিত হয়েছে । রচয়িতাদের ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোন নানা রকমের ।তাদের দৃষ্টিপথ সংকীর্ন । পুরনো দলিলাদি পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখার সময়ে সি মা ছিয়ানের মনে ধারাবাহিকভাবে ইতিহাস গ্রন্থ রচনার ইচ্ছা জাগে । দুর্ভাগ্যবশত: রাজনৈতিক বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করায় রাজদরবার তাঁর উপরে ক্রুদ্ধ হয় এবং তাঁকে কঠোর দৈহিক শাস্তি দেয়া হয় । সি মা ছিয়ান মনে ও দেহে দারুন আঘাত পান । যদিও পরে রাজদরবার পুনরায় তাঁকে গুরুত্বপুর্ণ পদে নিয়োগ করেন তথাপি তাঁর মনোভংগী একেবারে বদলে গেছে । তিনি মনে করেন , তাঁর বেঁচে থাকার একমাত্র উদ্দেশ্য ও তাত্পর্য হলো《ইতিহাসের আলেখ্য 》 রচনার কাজ সম্পন্ন করা । 《ইতিহাসের আলেখ্য 》 লেখার কাজ সম্পন্ন করতে সি মা ছিয়ানের ১৩ বছর লেগেছে । ১০৩টি পরিচ্ছেদ বিশিষ্ট এই গ্রন্থের চীনা শব্দসংখ্যা পাঁচ লক্ষেরও বেশী । 

  এই গ্রন্থ পাঁচ ভাগে বিভক্ত ।রাজা , সম্রাট প্রমুখ  প্রখ্যাত রাজনীতিবিদরা এই গ্রন্থের যোগসূত্র ।গ্রন্থটির প্রথম ভাগে যাবতীয় যুগের রাজাদের উত্থানপতন ও গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ;দ্বিতীয় ভাগে বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুগের ঘটনাবলী বিবৃত করা হয়েছে;তৃতীয় ভাগে জ্যোতির্বিদ্যা 、পঞ্জিকা、 জলসেচ 、অর্থনীতি、 সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রের ইতিহাস রচিত হয়েছে ; চতুর্থ ভাগে যাবতীয় রাজত্বকালের নৃপতি ও অভিজাত বংশের কর্মকান্ড ও কীর্তি বর্ননা করা হয়েছে ;পঞ্চম ভাগে যাবতীয় যুগের বিভিন্ন মহলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জীবনবৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে । অন্প কয়েক পরিচ্ছেদে সংখ্যালঘু জাতির ইতিহাস বিবৃত করা হয়েছে ।এই গ্রন্থের অধিকাংশ পরিচ্ছেদ রয়েছে প্রথম ,চতুর্থ আর পঞ্চম ভাগে । এই তিনভাগের প্রতিটি ভাগেই ইতিহাসের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের কেন্দ্র করে ইতিহাস বর্ননা করা হয়েছে। বস্তুত: সি মা ছিয়ানই ইতিহাস গ্রন্থের নতুন অবয়ব অর্থাত জীবনী ভিত্তিক ইতিহাস লেখার নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করেছন ।এই গ্রন্থ পাঁচ ভাগে বিভক্ত ।রাজা , সম্রাট প্রমুখ  প্রখ্যাত রাজনীতিবিদরা এই গ্রন্থের যোগসূত্র ।গ্রন্থটির প্রথম ভাগে যাবতীয় যুগের রাজাদের উত্থানপতন ও গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ;দ্বিতীয় ভাগে বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুগের ঘটনাবলী বিবৃত করা হয়েছে;তৃতীয় ভাগে জ্যোতির্বিদ্যা 、পঞ্জিকা、 জলসেচ 、অর্থনীতি、 সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রের ইতিহাস রচিত হয়েছে ; চতুর্থ ভাগে যাবতীয় রাজত্বকালের নৃপতি ও অভিজাত বংশের কর্মকান্ড ও কীর্তি বর্ননা করা হয়েছে ;পঞ্চম ভাগে যাবতীয় যুগের বিভিন্ন মহলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জীবনবৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে । অন্প কয়েক পরিচ্ছেদে সংখ্যালঘু জাতির ইতিহাস বিবৃত করা হয়েছে ।এই গ্রন্থের অধিকাংশ পরিচ্ছেদ রয়েছে প্রথম ,চতুর্থ আর পঞ্চম ভাগে । এই তিনভাগের প্রতিটি ভাগেই ইতিহাসের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের কেন্দ্র করে ইতিহাস বর্ননা করা হয়েছে। বস্তুত: সি মা ছিয়ানই ইতিহাস গ্রন্থের নতুন অবয়ব অর্থাত জীবনী ভিত্তিক ইতিহাস লেখার নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করেছন । 

  《ইতিহাসের আলেখ্য》কে বরাবরই ইতিহাসের রেকর্ড বলে অভিহিত করা হয় । অতীতের রাজদরারের ইতিহাস লেখার ভারপ্রাপ্ত রাজকর্মচারীদের মতে , ইতিহাস লেখার মানেই যশস্বী রাজা ও বিশ্বস্ত মন্ত্রীর কৃতিত্ব লিপিবদ্ধ করা এবং রাজবংশের স্তুতি গাওয়া, কিন্তু সি মা ছিয়ানের দৃষ্টিভংগী সম্পুর্ণই আলাদা । সামন্ততান্ত্রিক সমাজে সরকারীভাবে লেখা ইতিহাসের চেয়ে 《ইতিহাসের আলেখ্য》এর পরিধি অনেকখানি বিস্তৃত । সি মা ছিয়ানের লেখনী শুধু যে রাজনীতির চিত্র এঁকেছে তাই নয় ,তিনি রাজনীতি 、 অর্থনীতি、 ,সামরিক বিষয় আর সংস্কৃতির সংগে জ্যোতির্বিদ্যা、 ভূগুল ও সামাজিক রীতিনীতিকে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করে ইতিহাসের একটি বিচিত্র জগv সৃস্টি করেছেন ।তিনি নিজে অন্যায় অবিচারের শিকার হয়েছেন বলে তিনি মানুষের প্রাণশক্তির বহির্প্রকাশ ও মানুষের মুল্যের বাস্তবায়নের উপরে বিশেষভাবে নজর রাখতেন । সুতরাং সামন্ততান্ত্রিক রাজদরবারের উগ্যোগে রচিত ইতিহাস-গ্রন্থ থেকে 《ইতিহাসের আলেখ্য》 একেবারে আলাদা ।《ইতিহাসের আলেখ্য 》 থেকে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর প্রবল ভালবাসা ও ঘৃনা , এই গ্রন্থে যেমন সামন্ততান্ত্রিক শাসক শ্রেণী ,বিশেষ করে হান রাজবংশের সর্বোচ্চ শাসক চক্রকে উদ্ঘাটন ও বিদ্রুপ করা হয়েছে তেমনই সামন্ততান্ত্রিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনসাধারণের প্রতিরোধও প্রতিফলিত হয়েছে , নীচু স্তরের নানা পেশার মানুষের উচ্ছসিত প্রশংসা করা হয়েছে এবং অনেক দেমপ্রেমিক বীরের জীবন বৃত্তান্ত লেখা হয়েছে । চিরাচরিত ঐতিহাসিক দৃষ্টিভংগী ও ধারণায় কোনো কোনো কাজ অসহ্য বলে গণ্য করা হয় ,কিন্তু সি মা ছিয়ানের চোখে তা লিখে রাখার যোগ্য । 

  《ইতিহাসের আলেখ্য》 এর আছে অতি উচ্চ সাহিত্যিক মুল্য ।এই গ্রন্থে প্রকৃত ঐতিহাসিক উপকরণ ব্যবহার করে যে সার্থকভাবে বহু স্বতন্ত্র স্বভাবের চরিত্র সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার শিল্পরসের পরিচায়ক ।তাদের মধ্যে আছেন জংগল থেকে বেরিয়ে আসা বিদ্রোহী যিনি পরে সিংহাসন দখল করতে পেরেছেন , দেখতে দুর্বল কিন্তু মনে মহত অভিপ্রায় পোষণকারী বীর ,যুদ্ধকৌশলে সুদক্ষ,রাজক্ষমতার প্রতি বিতৃষ্ণা, জনহিতকরকার্যে নিয়োজিত এবং অধিপতিদের ভীতি সৃষ্টিকারী অশ্বারোহী , দুর্ধষদিগ্বিজয়ী সেনাপতি ও জেনারেল , জীবন বিসর্জনকারী আততায়ী , তাবুতে বসে ফন্দি আঁটা শীর্নকায় বুদ্ধিজীবী , ধনী বিধবা যার বিষয়সম্পত্তি দেশের সম্পদের সমতুল্য এবং প্রণয়ীর সংগে পালিয়ে যাওয়া সুন্দরী।এই সব অসাধারণ চরিত্র নিয়ে গঠিত হয়েছে 《ইতিহাসের আলেখ্য 》এর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাপেক্ষা চিত্তাকর্ষক অংশ। 

  এই গ্রন্থের বর্ননাভংগী সরল ও জীবন্ত ,কাহিনীর যোগসুত্র পরিস্কার ও প্রাণবন্ত ,লেখার স্টাইল বৈচিত্র্যময় , বিশেষ করে দৃশ্যের নাটকীয় বর্ননা গ্রন্থের সংবেদনশীল শক্তি বৃদ্ধি করেছে ।এই গ্রন্থের ভাষা সহজ,ও সাবলিল , এর যেমন আছে ধীরস্থীর গতি তেমনই আছে পরিবর্তন , যেমন আছে গাম্ভীর্য তেমনই আছে রসিকতা । তাই সর্বকালে তাকে চীনের   সর্বোত্তম প্রাচীন গ্রন্থ বলে অভিহিত করা হয় ।