ইউয়ান রাজবংশ
 

       মঙ্গোলীয় জাতির থিয়েমুজেন ১২০৬ সালে রাষ্ট্র গঠন করেন ।১২৭১সালে হুবিলিয়ে ইউয়ান নামে রাষ্ট্রের নামকরণ করেন ।১২৭৯ সালে শং রাজদের উত্খাত করার পর দাতুকে( বর্তমানের পেইচিং ) রাজধানী করা হয় । 

  মঙ্গোলীয় জাতির অধিবাসীরা অতীতে মরুভুমির উত্তর দিকে থাকত । থিয়েমুজেন উপজাতিগুলোকে পরাজিত করে মঙ্গোলিয়াকে একীভূত করেন এবং মঙ্গোলিয়া রাষ্ট্র গঠন করেন ।তিনি নিজকে চেংগিস খান বলে অভিহিত করেন । এর আগে মঙ্গোলীয় বাহিনী মধ্য এশিয়া , পুর্ব ইউরোপ ও পারস্যে আক্রমণ অভিযান চালিয়েছিল । এশিয়া ও ইউরোপ জুড়ে চেংগিস খানের সাম্রাজ্য হোলিনকে( বর্তমান মঙ্গোলিয়া গণ প্রজাতন্ত্রের হারহোলিন)কেন্দ্র করে গড়ে উঠে । অনতিকালে তাঁর সাম্রাজ্য কয়েকটি স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত হয় । সেই স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজারা চেংগিস খানকে সম্রাট বলে স্বীকার করতেন । 

  ইউয়ান রাজত্বকালে দীর্ঘকালীন যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য উত্তরাঞ্চলের সাংঘাতিক ক্ষয়ক্ষতি হয় । ইউয়ান রাজবংশের প্রথম সম্রাট কৃষি উন্নয়ন ও হোয়াংহো নদীর সংস্কারকে গুরুত্ব দিতেন । 

  থাং ও ইউয়ান রাজবংশীয় আমলে চীন ছিল পৃথিবীর সর্বাধিক উন্নত দেশ।প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপরে চীনের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির প্রভাব ছিল ব্যাপক । সেই সময়ে বিভিন্ন দেশের দূত, বণিক ও পন্ডিতরা একে অপরের দেশে ঘনঘন আসাযাওয়া করতেন ।বিদেশের সংগে চীনের আদানপ্রদান অভুতপুর্ব আকার ধারণ করে । ইউয়ান রাজবংশীয় আমলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দূত ও বণিকদের গমনাগমন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অধিক ছিল । বহু সুত্রে জাপান আর দক্ষিণ পুর্ব এশিয় দেশগুলোর সংগে চীনের যোগাযোগ ছিল । চীন ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্রে অনেক জাহাজ চলাচল করত । ইউয়ান রাজবংশীয় আমলেই চীনের তিনটে আবিস্কার-- মুদ্রণ কৌশল , বারুদ ও দিকদর্শন যন্ত্র আরব দুনিয়া হয়ে ইউরোপে পাঠানো হয় । আরব দেশগুলোর জ্যোতিবিদ্যা চিকিত্সা বিদ্যা ও গণিতশাস্ত্র ক্রমশই চীনে প্রবেশ করে । ইসলাম ধর্মও তখন চীনে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় । সামুদ্রিক পথ ছাড়া ইয়ুন নানের স্থলপথেও আরব উপদ্বীপে যাওয়া যেত । চীনের চীনামাটির পাত্র পুর্ব আফ্রিকায় এমন কি মরক্কোয় রফতানি করা হত ।১২৭৫ সালে ইটালির ভেনিস শহরের একজন বণিকের ছেলে মার্কো পোলো তাঁর পিতার সংগে চীনে আসেন।তিনি চীনে ১৭ বছর কাটিয়েছিলেন।ভ্রমন বৃত্তান্ত নামে তিনি যে একটি বই লিখেছিলেন তা বহু শতাব্দী ধরে পশ্চিমাদের চীন তথা এশিয়াকে জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল । 

  ইউয়ান রাজত্বকালের অপেরার শৈল্পীক কীর্তি অপেক্ষাকৃত বেশী । গুয়ান হান ছিং , ওয়াং শি পু, পাইবু ও মা জি ইউয়ান চারজন প্রতিনিধিত্বকারী রচয়িতা। দৌওয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও পশ্চিম প্রকোষ্ঠের কাহিনীই দুটো প্রতিনিধিত্বকারী রচনা । 

  মঙ্গোলীয় শাসকরা নিষ্ঠুরভাবে হান জাতির জনসাধারণকে শোষন ও অত্যাচার করতেন বলে হান জাতির জনসাধারণ তীব্রভাবে মঙ্গোলীয় শাসকদের বিরোধিতা করতেন ।১৩৩৩ সালে সারা দেশে ধর্ম ও গোপন সংগঠনের যোগসুত্রে আবদ্ধ কৃষকদের অভ্যুত্থান সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে ।১৩৫১ সালে হোয়াংহো নদীর সংস্কারকাজে নিয়োজিত কৃষকদের যে মহাবিদ্রোহ ঘটে তার প্রতীক ছিল লাল রুমাল ।১৩৪১ সালে হাওচৌয়ের লাল রুমাল বাহিনীর নেতা জু ইউয়ান জুয়াং উত্তর ও পশ্চিম চীনের উপজাতিকে তাড়িয়ে চীনাজাতির মহিমা পূনরূদ্ধারের শ্লোগান তুলে কৃষক বাহিনী নিয়ে দাতুর উপরে আক্রমন চালান এবং ইউয়ান রাজবংশকে উচ্ছেদ করে মিং রাজবংশ স্থাপন করেন ।