সং রাজবংশ
 

       ৯৬০ খ্রীষ্টাব্দে ছাও কুয়াং ইং যে জেং ছাও অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সং রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন, তাতে পাঁচটি যুগে দশটি রাজ্য থাকে চীনের এমন বিভক্ত অবস্থার অবসান ঘটে ।সং রাজবংশ ৩১৯ বছর স্থায়ী ছিল ।১২৭৯ সালে ইউয়ান রাজবংশের হাতে সং রাজবংশ ধ্বংস হয় ।সং রাজত্বকাল উত্তর সং আর দক্ষিণ সং নামক দুটো যুগে বিভক্ত । সং যুগের সমকালে উত্তর চীনে ছিতান উপজাতির লিয়াও রাজ্য (৯৪৭ সাল থেকে ১১২৫ সাল পর্যন্ত) স্থাপিত হয় ; উত্তর পশ্চিম চীনে তাং সিয়াং উপজাতির সিসিয়া রাজ্য(১০৩৮ সাল থেকে ১২২৭ সাল পর্যন্ত) স্থাপিত হয় ; নুইজেন উপজাতির জিন রাজ্য(১১১৫ সাল থেকে ১২৩৪ সাল পর্যন্ত) স্থাপিত হয় ।জিন রাজ্য ১২৫ সালে লিয়াও রাজ্যকে কুক্ষিগত করে । জিন রাজ্যের সৈন্যবাহিনী ১১২৭ সালে সং রাজবংশের রাজধানী খাইফেং দখল করে সম্রাট হুই ও সম্রাট ছিংকে বন্দী করে উত্তর চীনে নিয়ে যায় । উত্তর সং রাজবংশ বিলুপ্ত হয় । সম্রাট চাও গৌ ইংথিয়ানফু(বর্তমান হোনান প্রদেশের সাংছিউ শহর ) সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন ।পরে তিনি লিন আন অর্থাত্ বর্তমান হানচৌ শহরে পালিয়ে যান ।দক্ষিণ সং রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি দীর্ঘকাল ধরে রাজধানী লিন আনে বিলাসী জীবন যাপন করেন । উত্তর সং রাজবংশ লিয়াও রাজ্য, সিসিয়া রাজ্য ও জিন রাজ্যের আক্রমন প্রতিরোধ করত । কিন্তু দক্ষিণ সং রাজবংশ অত্যাধিক বিলাসে ক্ষয়ে যেতে থাকে । 

  উত্তর সং রাজত্বকালে উত্তরাঞ্চল একীভুত হওয়ার পর অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও সমাজের প্রভূত উন্নতি হয় ।বৈদেশিক বানিজ্যেরও যথেষ্ট প্রসার হয়েছে । ফানচংইয়ানের প্রস্থাবিত নতুন শাসন ব্যবস্থা ও ওয়াং আন সির প্রনীত নতুন আইন উত্তর সং রাজবংশের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিপত্তি আনতে না পারলেও সমাজের কিছু দ্বন্দ্ব সুরাহা করেছে । সম্রাট হুইয়ের রাজত্বকালে ফালা ও সংজিয়াং যে কৃষক বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তার উদ্দেশ্য ছিল তখনকার কুত্সিত শাসন নির্মুল করা । জিন রাজ্য উত্তর সং রাজবংশকে উত্খাত করার পর সামরিক অভিযান চালিয়ে আবার উত্তরাঞ্চল একীভুত করার সাহস দক্ষিণ সং রাজবংশের ছিল না ।দক্ষিণ সং রাজবংশের শাসকদের চোখে বিখ্যাত জেনারেল ইয়ু ফেই জিন রাজ্যের বিরুদ্ধে যে উত্তরমুখী সামরিক অভিযান চালান তা শুধু তাঁদের বিলাসিতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ।দক্ষিণ সং রাজত্বকালের শেষভাগে জিয়া ই দাওয়ের ক্ষমতার অপব্যবহার দক্ষিণ সং রাজবংশকে মৃত্যুর গহ্বরে ঠেলে দেয় । 

  সং রাজত্বকালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাফল্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনটি আবিস্কার-- দিকদর্শন যন্ত্র,মুদ্রন ও বারুদ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে বা উন্নত করা হয়েছে। এর মধ্যে মুদ্রন প্রযুক্তি ইউরোপের চেয়ে চার শো বছর আগে আবিস্কার করেছিলেন চীনা বিজ্ঞানী বিসেন ।জ্যোতির্বিদ সুশং জ্যোতিবিদ্যার গবেষনায় ব্যবহৃত প্রথম ঘন্টা তৈরী করেছিলেন । সেন খুওয়ের রচনা “স্বপ্নঝরনার ধারে লিপিকা ” বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাসে উঁচু স্থান অধিকার করেছে । সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ভাববাদ আধিপত্য লাভ করে । জু সি, লু জিউ ইউয়ান প্রমুখ ছিলেন প্রখ্যাত ভাববাদী পন্ডিত । ডাও ধর্ম,বৌদ্ধধর্ম ও অন্যান্য বহিরাগত ধর্ম নির্বিঘ্নে প্রচারিত হয়েছে ।উত্তর সং রাজত্বকালে ঔ ইয়াং সিউয়ের সম্পাদিত “ নতুন থাংয়ের পুস্তক ” থাং রাজত্বকালের ইতিহাস সংরক্ষণে বিরাট অবদান রেখেছে । “জিচিতংচিয়ান ”নামে প্রধান সম্পাদক সিমাকুয়াংয়ের সম্পাদিত বর্ষ-লিপি ইতিহাস রচনায় একটি আদর্শ স্থাপন করেছে । সাহিত্য ক্ষেত্রে ঔ ইয়াং সিউ ,সুসি প্রমুখ ছিলেন বিখ্যাত প্রবন্ধকার । শং কাব্য ছিল এই যুগের সাহিত্য-শিখর ।খ্যাতনামা কবিদের মধ্যে ছিলেন ইয়ানচু , লিউইয়ং, চৌবাংইয়ান ,লিজাওছিং ও সিং ছি জি। সং ও জিন রাজবংশীয় আমলে গল্প ও নাটকও প্রচুর লেখা হয়েছে । চিত্রশিল্পীরা যে পাহাড় ,নদী, ফুল আর পাখীর ছবি একেঁছেন তা সবচেয়ে জনপ্রিয় । চিত্রকলারইতিহাসে ছিংমিং উত্সব উপলক্ষে নদী সংস্কাররত কৃষক নামে বিখ্যাত চিত্রকর জাংজেদুয়ানের আঁকা ছবি একটি অমর রচনা ।