সুই রাজবংশ ও থাং রাজবংশ
 

      ৫৮১ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট ইয়াং চিয়ান সুই রাজবংশ স্থাপন করেন ।৬১৮ খ্রীষ্টাব্দে সুই রাজবংশের সম্রাট ইয়াংকুয়াংকে ফাঁসি দেয়া হয় । মাত্র ৩৭ বছর স্থায়ী সুই রাজবংশ ছিল একটি স্বল্প আয়ুর রাজবংশ । সম্রাট ইয়াং চিয়ানের অবদান ছিল সর্বাধিক ।তিনিই উত্তর চৌ রাজবংশীয় আমলের শাসনপদ্ধতি বাতিল করে দেশকে তিনটি প্রদেশে বিভক্ত করেন এবং ছটি পরিষদ নিয়ে রাজসভা গঠন করেন । তিনি যে নতুন আইন প্রনয়ন করেন তা দক্ষিণ আর উত্তর রাজত্বকালের আইনের মত নিষ্ঠুর নয় ।সেই সময়ে চীনে যে মহাখাল খনন করা হয়েছিল তার অর্ধেক অবদান ছিল সম্রাট ইয়াংকুয়াংয়ের ,যদিও দক্ষিণ চীন ভ্রমনের জন্য তিনি মহাখাল খননের আদেশ দিয়েছিলেন । এই ছাড়া তার চরিত্র সম্পর্কে জনসাধারণের ভালো ধারণা ছিল না । উপরন্তু তাঁর নিষ্ঠুর আচরণ ইতিহাসে ছিল কুখ্যাত । তিনি যে মাত্রাতিরিক্ত রাজকর সংগ্রহ করেন তাতে জনসাধারনের মধ্যে দারুন ক্ষোভ সৃষ্টি হয় ,এর কুফল হিসেবে তাঁকে ফাঁসী দেয়া হয় জিয়াংতু শহরে ,সেই সংগে সুই রাজবংশের বিলুপ্তিও ঘটে ।

  ৬১৮ খ্রীষ্টাব্দে থাং রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয় , ৯০৭ খ্রীষ্টাব্দে জু ওয়েন থাং রাজবংশ বিলুপ্ত করেন ।থাং রাজবংশ স্থায়ী ছিল ২৮৯ বছর । থাং রাজবংশ দুই সময়পর্বে বিভক্ত । আনলুসানের গোলযোগের সৃষ্টিই ছিল এই দুটো সময়পর্বের সীমারেখা ।প্রথম সময়পর্বে থাং রাজবংশ ছিল সমৃদ্ধিশালি ।দ্বিতীয় সময়পর্বে থাং রাজবংশ পতনের অভিমুখে অগ্রসর হয় । সম্রাট গাও জু থাং রাজবংশ স্থাপন করেন , সম্রাট লিসিমিন দশ বছর ধরে সৈন্যবাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করে একীকরণের লক্ষ্য অর্জন করেন । সুয়ান উ মেন ঘটনার পর লিসিমিন সিংহাসনে আরোহন করেন । তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় সামন্ততান্ত্রিক সমাজের অভূতপুর্ব সমৃদ্ধি ঘটে । রাজনীতি , অর্থনীতি সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে চীন বিশ্বের অগ্রভাগে স্থান অধিকার করে । সম্রাট সিয়ানজঙয়ের শাসনামলে চীন ছিল শক্তিশালি ,জনসাধারন সচছল জীবন যাপন করতেন ।কিন্তু তাঁর রাজত্বকালে আনলুসানের চক্রান্তে দাঙগাহাংগামা সৃষ্ট হওয়ায় থাং রাজবংশ ক্রমশই দুর্বল হতে থাকে ।  

  সুই রাজবংশ ও থাং রাজবংশের শাসনামলে সাংবিধানিক গঠনে লক্ষনীয় অগ্রগিত অর্জিত হয় । যেমন , দেশকে তিনটি প্রদেশে বিভক্ত করা হয় এবং ছটি পরিষদ নিয়ে রাজসভা গঠন করা হয় , পরীক্ষার মাধ্যমে রাজকর্মচারী নির্বাচন করা হয় এবং কর আইন প্রনয়ণ করা হয় ,এটা পরবর্তী রাজবংশগুলোর উপরে সুদুরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছে । সুই রাজবংশ ও থাং রাজবংশের রাজত্বকালে অপেক্ষাকৃত উন্মুক্ত নীতি কার্যকরী করা হয় ,বিদেশের সংগে চীনের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আদান প্রদান ঘনঘন চালানো হয় । সাহিত্যাঙগনে কাব্যসৃস্টির কীর্তি সর্বাপেক্ষা বেশী । থাং রাজবংশের রাজত্বকালের প্রারম্ভে জেন জি আঙ, ঐশ্বর্যময় যুগের লি পাই ও তু ফু , মধ্যভাগের পাই জু ই ও ইউয়ান চেন এবং শেষভাগের লি সাং ইং ও দু মো কাব্যাঙনের প্রতিনিধি । হান ইয়ু ও লিউ জং ইউয়ান প্রাচীনগ্রন্থ প্রচলনের যে প্রয়াস চালিয়েছিলেন পরবর্তীকালের সাহিত্য ও কৃষ্টিতে তার বিরাট প্রভাব পড়েছে । ইয়ান চেন ছিংয়ের লিপিকলা , নিয়ান লি বেন, উ তাও চি ,লি সি সুন আর ওয়াং ওয়ের চিত্রকলা , সংগীত ও নৃত্য এবং গুহা শিল্প যুগ যুগ ধরে প্রচলিত ছিল । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীনের চারটি আবিস্কারের মধ্যেকার দুটো আবিস্কার ,অর্থাত মুদ্রন কৌশল ও বারুদের জন্ম হয়েছে এই সময়পর্বে । 

  থাং রাজবংশের শেষভাগে রাজনৈতিক হট্টগোলের সুত্রপাত ঘটে । নিউ চক্র ও লি চক্রের মধ্যকার রেষারেষি এবং খোজাদের যথেচ্ছ ক্ষমতা প্রয়োগের সময়ে একটির পর একটি কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয় ।অবশেষে যে হুয়াংছাও বিদ্রোহ সংঘটিত হয় তার অন্যতম নেতা জু ওয়েন প্রথমে থাং রাজদরবারের সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করেন ,পরে থাং রাজবংশকে উত্খাত করে সিংহাসন দখল করেন এবং পাঁচ যুগের প্রথম রাজবংশ-- হৌলিয়াং রাজবংশ স্থাপন করেন ।