চীনের ওয়ে আর জিন রাজবংশ ২২০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৫৯৮ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল ।
দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষভাগে পুর্ব হান রাজবংশের শাসন ব্যবস্থা ক্রমশই ভংগুর হয় ।তখন থেকে চীন একটি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘকালের বিভক্তির যুগে প্রবেশ করে । ১৮৯ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ২৬৫ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত চীন ওয়ে, সু আর উ নামে তিনটি রাজ্যে বিভক্ত ছিল । তিনটি রাজ্য বিলুপ্ত হলে পশ্চিম জিন রাজবংশ স্থাপিত হয় । কিন্তু পশ্চিম জিন রাজবংশ মাত্র ৫১ বছর অর্থাত্ ২৬৫ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৩১৬ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল । এরপর চীন আবার বিভক্ত হয় ।৩১৭ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৪২০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত পশ্চিম জিন রাজপরিবারের কোনো কোনো সদস্য ইয়াংজি নদীর দক্ষিণাঞ্চলে পুর্ব জিন রাজবংশ স্থাপন করেন । উত্তর চীনে নানা জাতির মধ্যে অবিরাম যুদ্ধ বাঁধে এবং মোট ১৬টি ক্ষুদ্র রাজ্যের জন্ম হয় ।
এই সময়পর্বে দক্ষিণ চীনের অর্থনীতি দ্রুতভাবে বিকশিত হয় । পশ্চিম চীন ও উত্তর চীনের সংখ্যালঘু জাতির অধিবাসীরা অনবরত দক্ষিণ চীনে স্থানান্তরিত হয় । বিভিন্ন জাতির স্থানান্তর ও সহাবস্থান তাদের মিলন ও আদান প্রদান ত্বরান্বিত করে । সংস্কৃতির ক্ষেত্রে চীনা মায়াবাদী তত্ব ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় । বৌদ্ধ ধর্ম ও তাও ধর্ম ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রচারিত আর জনপ্রিয় হতে থাকে।কিন্তু শাসকরা সাধারণত: বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করেন । সাহিত্য ও শিল্প ক্ষেত্রে চিয়ান আন শহরের সাতজন কবি এবং কবি থাও ইউয়ান মিংয়ের কবিতা , ওয়াং সি জি প্রমুখের হস্তলিপি , গু খাই চি প্রমুখের আঁকা ছবি এবং তুনহুয়াং গুহার শিল্পকলা সবই অমর শিল্পসৃষ্টি ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পৃথিবীতে চীনের গণিতবিদ জু ছং চিই প্রথম বৃত্তেরসংগে ব্যাসের অনুপাত তিন দশমিকের পশ্চাতের সাতটি অঙক পর্যন্ত গুনেছিলেন । বিশ্বের কৃষি বিদ্যার ইতিহাসে “কৃষকদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ” নামে জিয়া সি সি’ গ্রন্থকে একটি অপূর্ব বৃহত গ্রন্থ বলা যায় ।
দক্ষিণ রাজবংশ আর উত্তর রাজবংশ ৪২০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৫৮৯ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল । উত্তর রাজবংশের দ্বিতীয় রাজ্য ছিল উত্তর ওয়ে রাজ্য । উত্তর ওয়ে রাজ্য পরে পুর্ব ওয়ে রাজ্য ও পশ্চিম ওয়ে রাজ্যে বিভক্ত হয়।পরবর্তীকালেউত্তর ছি রাজ্য পুর্ব ওয়ে রাজ্যকে গ্রাস করে । পশ্চিম ওয়ে রাজ্য উত্তর চৌ রাজ্যভুক্ত হয় ।উত্তর চৌ রাজ্য পরে উত্তর ছি রাজ্যকে ধ্বংস করে । দক্ষিণ রাজবংশের ছিল চারটি রাজ্যযথা : সং রাজ্য 、 ছি রাজ্য 、লিয়াং রাজ্য ও ছেন রাজ্য ।
দক্ষিণ রাজবংশ আর উত্তর রাজবংশীয় আমলে চীনের অর্থনীতির প্রধান কেন্দ্র ছিল দক্ষিণ চীনে । মধ্য চীনের অধিবাসীরা যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে প্রাণ রক্ষার জন্য দলে দলে ইয়াংসি নদীর দক্ষিণাঞ্চলে স্থানান্তরিত হয় ।ফলে ইয়াংসি নদীর দক্ষিণাঞ্চলে শ্রমশক্তি বৃদ্ধি পায় । উত্পাদনের উন্নত প্রযুক্তি ইয়াংসি নদীর দক্ষিণাঞ্চলে প্রচলিত হওয়ায় সেখানকার অর্থনীতি দ্রুত বিকশিত হয়। ইয়াংচৌ শহর ও আশেপাশের পল্লীগ্রাম ছিল দক্ষিণ রাজবংশীয় আমলের সমৃদ্ধ এলাকা ।
সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভাববাদী বিদ্যার লক্ষনীয় বিস্তৃতি ঘটে । সমাজের অস্থিরতা চিন্তাভাবনার অবাধ বিকাশের জন্য উর্বর জমি তৈরী করে । সাহিত্যাঙ্গনে কাব্যকীর্তি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ।
এই সময়পর্বে চীনের ঘনঘন কূটনৈতিক তvপরতা চালানো হত । দক্ষিণ পুর্ব এশিয়া 、জাপান、 কোরিয়া、 মধ্য এশিয়া , এমন কি ইটালির সংগে চীনের যোগাযোগ স্থাপিত হয় ।
চীনের ইতিহাসে যে কয়েক যুগে চীন দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে বিভক্ত হয়,পুর্ব জিন রাজবংশ বিলুপ্ত হওয়ার পর দক্ষিণ রাজবংশ আর উত্তর রাজবংশীয় আমলই সেই কয়েক যুগের অন্যতম । দেশের বিভক্তির দরুণ অর্থনীতির বিকাশের গতি মন্থর হয় । কিন্তু মধ্যচীনে বহিরাগত জাতির শাসনে হোয়াংহো নদীর অববাহিকায় বিভিন্ন জাতির যে মহামিলন ঘটে, তা অভূতপুর্ব । সেই পরিবেশে উত্তর চীনের জাতিগুলো হান জাতির সংগে মিশতে থাকে এবং অবশেষে হান জাতির সংগে একাকার হয়ে যায় । সুতরাং এই কথা বলা যায় যে ,দক্ষিণ রাজবংশ আর উত্তর রাজবংশ চীনের জাতিগুলোর একীকরণে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করেছে । এটা চীনা জাতির ক্রমবিকাশের একটি অপরিহার্য ধাপ ।
|