মঙ্গোলীয় চিকিত্সাবিদ্যা

মঙ্গোলীয় চিকিত্সাবিদ্যার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

      মঙ্গোলীয় জাতির লোকেরা এই চিকিত্সাবিদ্যা কালক্রমে একটি ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সা ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলেছে। এই ঐতিহাসিক ওষুধের উপকরণ প্রচুর। মনে করা হয়ে থাকে, এই চিকিত্সাবিদ্যা মঙ্গোলীয়দের রোগ-শোকের বিরুদ্ধে সংগ্রামের স্ফটিক-স্বচ্ছ প্রমাণ। এটিকে তাদের স্বজাতীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক চিকিত্সাবিদ্যা বলে মনে করা হয় । তার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই পদ্ধতিতে সামান্য ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যা দামেও সস্তা, ব্যবহারও সহজ।

মঙ্গোলীয় চিকিত্সাবিদ্যার মৌলিক তত্ত্ব

     এই চিকিত্সাবিদ্যায় “হে-ই”, “শিলা” আর “বা দা গান” নামক গাছ-গাছড়ার মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তিতে মানবদেহের ফিজিওলজিক্যাল আর প্যাথলজিক্যাল প্রকৃতি ব্যাখ্যা করা হয়। তথাকথিত “হে ই”কে ফিজিওলজির চলত্শক্তি বলে মনে করা হয়। চিন্তা, ভাষা এবং শরীর ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া এর দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। “হে ই” অস্বাভাবিক হলে অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে তার কুপ্রভাব পড়ে, মন উচাটন হয়, অনিদ্রা আর স্মৃতিভ্রমের উপসর্গ দেখা দেয়। আর “শি লা” হচ্ছে তথাকথিত উত্তপ্ততা। শরীরের তাপমাত্রা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ও মেজাজের তাপ এই “শি লার” উপর নির্ভরশীল। “শি লা” বেশী হলে মুখে তেতো ভাব হয় আর বিষন্নতা সৃষ্টি হয়। “বা দা গান” হচ্ছে ঠাণ্ডা প্রকৃতির একটি পিচ্ছিল পদার্থ যা শরীরে থাকে। “বা দা গান”-এ বিশৃঙ্খলা হলে ঠাণ্ডা থেকে সৃষ্ট অসুখ হয়। শরীরের তরলায়ন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয় এবং নিঃসরণ বা ক্ষরণ বেশী হয়।

মঙ্গোলীয় চিকিত্সাবিদ্যার বিশেষ চিকিত্সা

  ফ্লেবটমি

     ফ্লেবটমি পদ্ধতিতে ছোট, শিরা কেটে রোগাক্রান্ত রক্ত বের করে ফেলা হয়, যাতে রোগ প্রতিরোধ বা নিরাময় করা যায়। রক্তের “উত্তপ্ততা” অথবা “শিলা” দ্বারা সৃষ্ট রোগের চিকিত্সায় ফ্লেবটমি চিকিত্সা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। আঘাত, প্লেগ, শোথ রোগ ও পেটের পীড়া, গেঁটে বাত, যক্ষ্মা রোগ “শিলার” অশুভ ফল। এই পদ্ধতির দুটো পর্যায় আছেঃ অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি এবং ফ্লেবটমির আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া।  

  কাপিং ও পাংচার

   এই বহিরাঙ্গের চিকিত্সা হচ্ছে কাপিং আর ফ্লেবটমির জন্যে একটি মিশ্রপদ্ধতি। বিশেষ ধরণের কাপটি শরীরের রোগাক্রান্ত অংশে চেপে ধরে অংশটি ফোলানো হয়। তারপর সূঁচের সাহায্যে ফোলা অংশ থেকে খারাপ রক্ত বের করে ফেলে দেয়া হয়। এভাবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ শক্তির চলত্শক্তি এবং রক্তের স্বাভাবিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং রোগ নিরাময় হয়। এই চিকিত্সা শরীরের মাংসল অংশের জন্যে উপযুক্ত। বলা হয়েছে, এই পদ্ধতি ফলপ্রসূ, সময়-সাশ্রয়ী এবং ব্যথা ও বিপদমুক্ত।  

  কৌমিস

  কৌমিস চিকিত্সা পদ্ধতি একটি পথ্য চিকিত্সা। বলা হয়েছে, এই পদ্ধতিতে মানুষকে শক্তিশালী করা যায় এবং বুক বা হৃত্পিণ্ড এলাকায় আঘাত বা ব্যথা সংশ্লিষ্ট সমস্যা দূর করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কৌমিস সুস্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী, কারণ এতে রয়েছে চিনি, প্রোটিন, চর্বি, ভিটামিন, এমাইনো এসিড, ল্যাকটিক এসিড, জারক রস, খনিজ পদার্থ, সুগন্ধী উদ্ভিদ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ।

  মঙ্গোলীয় হাড় বসানো

   এই চিকিত্সা ইতিহাসের ধারায় ডাক্তারদের গবেষণার একটি সুফল। বলা হয়েছে, এর দ্বারা হাড় ভাঙ্গা, অস্থিসন্ধির স্থানচ্যুতি বা সফ্ট টিস্যুর বিনাশ ইত্যাদি অসুবিধা দূর করা যায়। হাড় বসানোর চিকিত্সা ছ’টি অংশে বিভক্তঃ সংস্কার , মেরামত , ম্যাসাজ, অর্থাত্ অঙ্গ-সংবাহন, ভেষজ স্নান, প্রযত্ন এবং রোগমুক্তি। এর কার্যাবলীল মধ্যে রয়েছে বিষমুক্ত করা, পেশীতন্তুকে মসৃণ করা এবং রক্ত চলাচল সহজ করা।