আকুপাংচার

       চীনা চিকিত্সাবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আকুপাংচার। প্রথমে একটি চিকিত্সা পদ্ধতি হিসেবে তা আবিস্কৃত হলেও পরে তা একটি বিজ্ঞানের রূপ নেই। আকুপাংচার বিজ্ঞানের লক্ষ্য হচ্ছে কৌশল। ক্লিনিকের নিয়মিতকরণ আর তার মৌলিক তত্ত্ব রেকর্ড করা।  

      আকুপাংচারের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। প্রাচীন বই-পুস্তকে আকুপাংচারের যন্ত্রপাতি ছিল হাড় নির্মিত । চার থেকে আট হাজার বছর আগে এ ধরণের যন্ত্রপাতি দেখা গেছে। এটি ছিল গোত্র সমাজের শেষ ভাগের সময় পর্ব। প্রত্নতাত্তিক আবিস্কারের সময় হাড়ের সূঁচ পাওয়া গিয়েছিল। বসন্ত ও শরত্ যুগে (খ্রীঃ পূর্বঃ ৭৭০--৪৭৬) চিকিত্সাবিদ্যা মায়া বা জাদু তথা ঝাড় ফুঁক থেকে অন্যদিকে মোড় নেয়, এবং তখন কিছু ডাক্তারেরও আবির্ভাব ঘটে। দুইন ছিউ ঝুও শি চুয়ান নামক গ্রন্থে ডাঃ ই হোয়ান আকুপাংচার আর মক্সিবাশ্চনের কথা উল্লেখ করেন, যা নৃপতি জিংয়ের চিকিত্সায় ব্যবহৃত হয়।

  যুদ্ধমান আর পশ্চিম হান যুগে (খ্রীঃ পূঃ ৪৭৬--খ্রীষ্টীয় ২৫), লোহা গলানোর প্রযুক্তি আবিস্কারের কল্যাণে অধিকতর সংখ্যার ধাতব সূঁচ তৈরী হয়। হাড়ের সূঁচ পৌঁছুতে পারতোনা শরীরের এমন জায়গায় ধাতব সূঁচ ফুটিয়ে আকুপাংচার চিকিত্সা ব্যবস্থার প্রয়োগ আরও উন্নত হয়। তারপর পূর্ব হান আর ত্রি-রাজ্য যুগে বহু আকুপাংচার বিশারদের অভ্যূদয় ঘটে। হোয়াং পু মি’র লেখা জেন জিও চিয়া ইচিং গ্রন্থেই প্রথম নিয়মতান্ত্রিকভাবে আকুপাংচারের বিষয়াদি আলোচিত হয়। আরও বেশী সংখ্যার আকুপাংচার বিষয়ক বই প্রকাশিত হয় চিন এবং দক্ষিণ ও উত্তর যুগে (খ্রীষ্টীয় ২৫৬--৫৮৯) । তখন কোরিয়া ও জাপানে আকুপাংচার পরিচিতি লাভ করে।  

  সুই আর থাং যুগে (খ্রীষ্টীয় ৫৮১--৯০৭) আকুপাংচার একটি বিশেষায়িত বিষয়ে পরিণত হয়। মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা একটি প্রধান পাঠ্য বিষয়ে পরিণত হয়। ষোড়শ শতাব্দিতে আকুপাংচার ইউরোপে প্রবেশ করে, তবে ছিং রাজামলে তার যথাযোগ্য মূল্যায়ন হয় নি বলে দুর্দিনে পতিত হয়।  

  ১৯৪৯ সালের পর, আকুপাংচারের প্রভূত উন্নতি হয়। বর্তমান চীনে প্রায় ২০০০ চীনা চিকিত্সাবিদ্যার হাসপাতালের প্রত্যেকটিতেই আকুপাংচার বিভাগ খোলা হয়েছে। তা শরীরের নানা তন্ত্রে ব্যবহার করা যায়। আকুপাংচার গবেষণার অনেক মূল্যবান তথ্য পাওয়া গেছে, বিশেষ করে তার নিয়মিত কর্মকান্ডে, ব্যথার উপশমে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নয়নে এবং মানুষের শরীরের নল-নালীতে , আকু পয়েন্টে আর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ।