চীনা চিকিত্সাবিদ্যায় রোগ নির্ণয় পদ্ধতি

       চীনা চিকিত্সাবিদ্যায় ডাক্তাররা নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেন, যাতে রোগীদের পরিপূর্ণ ও বিশদ তথ্য পাওয়া যায় এবং তাদের চিকিত্সায় দিক-নির্দেশনা দেয়া যায়। তারা পর্যবেক্ষণ, শ্রবণ ও স্পর্শ করেন এবং গন্ধ শুঁকেন। তারা রোগীর সঙ্গে বা তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা পর্যবেক্ষণ হৃত্পরীক্ষা ও ঘ্রাণ বিদ্যা, প্রশ্নোত্তর এবং নাড়ী দেখা ও স্পর্শানুর্ভূতির পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করেন। প্রধান চার পদ্ধতি বলে পরিচিত এই পদ্ধতিগুলোর প্রত্যেকটির স্পষ্ট ব্যবহারিক গুণ আছে এবং ডাক্তাররা এ সব পদ্ধতির প্রয়োগে নির্ভুল রোগ-বিশ্লেষণ করতে পারেন।  

পর্যবেক্ষণ 

       পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে মনে করা হয়, মানুষের বাথ্যিক অবয়বের সঙ্গে তার দেহাভ্যন্তরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সম্পর্ক আছে। অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সমস্যা দেখা দিলে বহিরাবয়বে এবং প্রকাশভঙ্গীতে তার পরিবর্তনের প্রতিফলন ঘটবে।  

  কাজেই, ডাক্তার রোগীর বাইরের অবস্থা দেখে তার দেহের অভ্যন্তরের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করতে পারেন। 

হৃত্পরীক্ষা ও ঘ্রাণবিদ্যা

       হৃতপরীক্ষা ও ঘ্রাণবিদ্যার পদ্ধতি প্রয়োগে ডাক্তাররা রোগীদের ধ্বনি শোনা এবং মানবদেহ থেকে নিঃসৃত পায়খানার গন্ধ শুঁকে রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন।  

       ধ্বনি শোনার মাধ্যমে ডাক্তাররা শুধু দেহাভ্যন্তরের এই ধ্বনি-সংশ্লিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিবর্তনই চিহ্নিত করতে পারেন তা নয়, বরং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিবর্তন ও বুঝতে পারেন। এই ধ্বনিগুলোর মধ্যে রয়েছে কথা বলার ধ্বনি, শ্বাস প্রশ্বাসের ধ্বনি, কফের ধ্বনি , হাসি ও হাই তোলার ধ্বনি।  

       এ ছাড়াও ডাক্তররা রোগীর দেহ-নিঃসৃত গন্ধও শুঁকতে পারেন। মনে করা হয়েছে যে, মানবদেহ ভাইরাস-আক্রান্ত হলে মানুষের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আর রক্ত প্রভাবিত হয় বলে শরীরের তরল পদার্থ আর পায়খানা দুর্গন্ধ ছড়ায়।

প্রশ্নোত্তর

       প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির মাধ্যমে ডাক্তার রোগী বা রোগের সঙ্গে পরিচিত কোন ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতায় রোগের সৃষ্টি, বিকাশ, বর্তমান লক্ষণাদি এবং চিকিত্সার উপায় জেনে নেন। রোগীর দেহের বাইরে কোনো স্পষ্ট লক্ষণ না থাকলে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। তাহলে ডাক্তার তার প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। 

      তা ছাড়াও এ পদ্ধতিতে ডাক্তার রোগ-সংশ্লিষ্ট পরোক্ষ তথ্য পেতে পারেন, যেমন রোগীর দৈনন্দিন জীবন, কাজের পরিবেশ, খাবারের তালিকা এবং বৈবাহিক অবস্থা।

নাড়ী দেখা ও স্পর্শানুভূতি

       ডাক্তাররা রোগীকে স্পর্শ করা বা তার নাড়ী চেপে ধরার মাধ্যমে এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন। মনে করা হয়, নাড়ীর স্পন্দনের পরিবর্তন থেকে দেহাভ্যন্তরের পরিবর্তন বোঝা যায়। মাঝেমধ্যে ডাক্তার রোগীর কিছু কিছু দেহাংশে চেপে ধরেন, যাতে সংশ্লিষ্ট দেহাংশে রোগের অবস্থা চিহ্নিত করা যায়।