দুই তীরের সরাসরি “ ডাক, বাণিজ্য ও পরিবহণ ”


  ১৯৭৯ সালে চীন সরকার তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের মধ্যে সরাসরি ডাক, বাণিজ্য ও পরিবহণ ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে । তার পর ২০ বছরেরও বেশি সময়ে চীন সরকার দুই তীরের মধ্যে সার্বিকভাবে সরাসরি ডাক, বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছে ।

দুই তীরের মধ্যে সরাসরি ডাক, বাণিজ্য ও পরিবহন বাস্তবায়নে অগ্রগতির অবস্থা

  সরাসরি ডাক ব্যবস্থা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে, ১৯৯৩ সালে প্রণালীর দুই তীরের সম্পর্ক সমিতি এবং তাইওয়ান প্রণালীর আদানপ্রদান তহবিল সংস্থার মধ্যে “ দুই তীরের রেজিস্টার্ড মেইল ইনকুয়ারি ও ক্ষতিপূরণ বিষয়ক চুক্তি” স্বাক্ষরিত হয় এবং দুই তীরের মধ্যে ডাক বিভাগের পারস্পরিক রেজিস্টার্ড মেইল বিনিময়ের ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। 

  টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে , ১৯৯৬ সালে চীনের টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এবং তাইওয়ানের চোংহুয়া(চীনা) টেলিযোগাযোগ কোম্পানির মধ্যে দুই তীরের সরাসরি টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৯৯৯ এবং ২০০০সালে পর্যাযক্রমে চীন-মার্কিন , এশিয়া-ইউরোপ এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় সাগরতলার অপটিক্যাল ক্যাবল নির্মিত হয় এবং সেগুলোর মাধ্যমে দুই তীরের মধ্যে সরাসরি টেলিযোগাযোগ লাইন প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে দুই তীরের টেলিযোগাযোগ বিভাগ ইতিমধ্যেই টেলিফোন, ডিজিটাল টেলিযোগাযোগ, মোবাইল ফোনের জি এস এম ব্যবস্থা এবং টেলিভিশন টেলিফোন ব্যবস্থা চালু করেছে। 

  পরিবহন । সামুদ্রিক নৌ পরিবহন ক্ষেত্রে ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে চীনের মূলভূখণ্ডের ফুচৌ , সিয়ামেন এবং তাইওয়ান অঞ্চলের কাউসিয়ং শহরের মধ্যে সরাসরি সামুদ্রিক নৌ পরিবহণের ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। ২০০১ সালের প্রথম দিকে তাইওয়ান পক্ষের নিয়ন্ত্রিত চিনমেন এবং মাচু দ্বীপের জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী চীনের মূলভূখণ্ড উপরোক্ত দ্বীপ দুটো(চিনমেন এবং মাচু) আর ফুচিয়েন প্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মধ্যে সামুদ্রিক নৌ পরিবহনের জন্য যথাসাধ্য সহায়তা দিয়েছে । উভয় পক্ষের মধ্যে দুই তীরের পুঁজি ব্যবহৃত এবং দুই তীরে নিবন্ধিত জাহাজগুলোতে শুধু কোম্পানির পতাকা টাঙানোর পদ্ধতিতে দুই তীরের মধ্যে যাত্রীবাহী এবং মালবাহী নৌ পরিবহন লাইন চালু হয়েছে। 

  বিমান পরিবহনের ক্ষেত্রে ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর, ১৯৯৬ সালের আগষ্ট মাসে ম্যাকাও এয়ার লাইনস এবং হংকং ড্রাগন এয়ার আলাদা আলাদাভাবে ম্যাকাও-তাইওয়ান এবং হংকং-তাইওয়ান বিমান চলাচল লাইন চালু করেছে , ফলে বিমান বদল না করেই চীনের মূলভূখণ্ড থেকে ম্যাকাও এবং হংকং হয়ে তাইওয়ানে যাওয়ার “ এক বিমানেই গন্তব্য স্থানে যাওয়া যায়” এমন পরোক্ষ বিমান চলাচল ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০০৩ সালের বসন্ত উত্সবকালে তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে চীনের মূলভূখণ্ড নমনীয় বাস্তবভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ করে তাইওয়ানের ৬টি বিমান কোম্পানির ১৬টি চার্টার্ড বিমানকে অনুমোদন দিয়েছে। এই সব বিমান তাইওয়ানের থাইপেই এবং কাওসিয়ং থেকে হংকং এবং ম্যাকাওয়ে কিছুক্ষণ যাত্রাবিরতি করার পর সাংহাইয়ে গিয়ে সেখান থেকে তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের নিয়ে তাইওয়ানে ফিরে যেতে পেরেছে ,অর্থাত্ তাইওয়ানী চার্টার্ড বিমান তাইওয়ান আর মূলভূখণ্ডের মধ্যে আসা-যাওয়া করতে পেরেছে ।

  ব্যবসাবাণিজ্য। দুই তীরের মধ্যে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ১৯৭৯ সাল থেকে চীনের মূলভূখণ্ড তাইওয়ানের পণ্যদ্রব্যের জন্য নিজের বাজার উন্মুক্ত করেছে এবং শুল্কমুক্ত বা শুল্ক কমানোর সুবিধা দিয়েছে। দুই তীরের মধ্যে বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ১৯৭৮ সালের ৪.৬ কোটি মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০০৩ সালে ৫৮৩০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে । ২০০২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মূলভূখণ্ড ইতিমধ্যেই তাইওয়ানের রপ্তানীর বৃহত্তম বাজার হয়েছে , পক্ষান্তরে তাইওয়ান হয়েছে মূলভূখণ্ডের আমদানির দ্বিতীয় বৃহত্তম উত্স ।  

  পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। মূলভূখণ্ডের বিভিন্ন বিভাগ এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অবিরামভাবে পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করেছে , তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের জন্য উত্কৃষ্ট পরিসেবা যুগিয়ে দিয়েছে এবং তাঁদের পুঁজি বিনিয়োগ জোরদার করেছে। ২০০৩ সালের শেষ নাগাদ চীনের মূলভূখণ্ড তাইওয়ানীদের পুঁজি বিনিয়োজিত ৬০ হাজার প্রকল্প অনুমোদন করেছে, চুক্তি অনুযায়ী তাতে ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তাইওয়ানী পুঁজি বিনিয়োজিত হয়, বাস্তবে ব্যবহার করা হয়েছে ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৯৩ সাল থেকে চীনের মূলভূখণ্ড তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের পুঁজিবিনিয়োগ- স্থানের প্রথম বাছাই হয়েছে । দুই তীরের মধ্যে আর্থিক ও ব্যাংকিং আদানপ্রদান ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে তাইওয়ানী পুঁজির ১০টি ব্যাংক ইতিমধ্যেই মূলভূখণ্ডে অফিস স্থাপন করেছে অথবা স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাদের বেশির ভাগ অফিস সাংহাই অথবা পেইচিং মহানগরে স্থাপিত হয় ।

  অবশ্য দুই তীরের মধ্যে সরাসরি ডাক, বাণিজ্য এবং নৌ ও বিমান পরিবহন এখন পর্যন্ত শুধু পরোক্ষ , একতরফা এবং আংশিক ।

  ডাক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে । দুই তীরের মধ্যে ডাক বিনিময় এখনও হংকং আর ম্যাকাও-এর মাধ্যমেই চলে হয়ে পাঠানো হয় এবং পরিসেবার রকমারিতা খুব কম, ডাক-যোগে পার্শেল, ক্ষুদ্র পার্শেল , মানি-অর্ডার , মানি-চেঞ্জ,এবং এক্সপ্রেস মেইল বা ডেলিভারি সার্ভিস প্রবর্তন করা সম্ভব হয় নি। 

  পরিবহনের ক্ষেত্রে। দুই তীরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ ও বিমান চলাচল ব্যবস্থা চালু হতে পারে নি, দুই তীরের মধ্যে পর্যটকরা হংকং আর ম্যাকাও প্রভৃতি স্থান হয়েই-কেবল ভ্রমণ করতে পারেন। পরীক্ষামূলক সরাসরি নৌ পরিবহণ বন্দোবস্তের মাধ্যমে দুই তীরের পণ্য পরিবহন করা যায় না, দুই তীরের পণ্য এখনও জাপান , হংকং ইত্যাদি তৃতীয় স্থান হয়েই পরিবহন করতে হয় , ফলে জাহাজ চলাচল চালু হলেও মালবাহী জাহাজের পরিবহন চালু হয় নি। 

  বাণিজ্য ক্ষেত্রে । মূলভূখণ্ডের বাজার তাইওয়ানী শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং পণ্যদ্রব্যের জন্য সার্বিকভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছে , কিন্তু মূলভূখণ্ডের পণ্য তাইওয়ানে আমদানীর ব্যাপারে নানা বৈষম্যমূলক বাধানিষেধ আরোপিত হয়। ফলে তাইওয়ানবাসীদের প্রয়োজনীয় মূলভূখণ্ডের উত্কৃষ্ট পণ্য তাইওয়ানে প্রবেশ করতে পারে না, মূলভূখণ্ডের কোম্পানিগুলো তাইওয়ানে পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারছে না, মূলভূখণ্ডের প্রয়োজনীয় বাণিজ্যিক অফিস তাইওয়ানে স্থাপন সম্ভব হয় না, তাইওয়ানে আর্থ-বাণিজ্যিক প্রদর্শনী , মেলা , বাণিজ্যিক আলোচনা আয়োজন করা মূলভূখণ্ডের পক্ষে খুবই কঠিন হয়, মুলভুখণ্ডের আর্থ-বাণিজ্যিক মহলের লোকজন তাইওয়ানে গিয়ে পরিদর্শন আর সফর করতে চাইলে নানা বাধানিষেধের সম্মুখীন হতে হয় ।