তাইওয়ান সমস্যার সমাধানে চীন সরকারের অভিমত


তাইওয়ান সমস্যার সমাধানে চীন সরকারের নীতি

  তাইওয়ান সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে চীন সরকারের মৌলিক নীতি : “শান্তিপূর্ণ পুনরেকায়ন , এক দেশ দুই সমাজব্যবস্থা”

  গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে চীন সরকার শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাইওয়ান সমস্যা সমাধানের ধারণা পেশ করে । ১৯৭৯ সালের ১লা জানুয়ারি চীন গণ প্রজাতন্ত্রের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্ট্যাণ্ডিং কমিটি “ স্বদেশীয় তাইওয়ানবাসীদের প্রতি আবেদনপত্র” প্রকাশ করে প্রণালীর দু তীরের মধ্যে সামরিক বৈরিতার অচলাবস্থার অবসান ঘটানোর বিষয়ে আলাপ-পরামর্শ করার আহবান জানায়। পত্রটিতে এই মত প্রকাশ করা হয় যে, দেশের একায়ন বাস্তবায়নের সময়ে নিশ্চয়ই তাইওয়ানের বর্তমান অবস্থার প্রতি সম্মান বজায় রেখে যথাযথভাবে যুক্তিযুক্ত নীতি ও উপায় অবলম্বন করা হবে।”

  ১৯৮১ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্ট্যাণ্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ইয়ে চিয়েনইং তাঁর দেয়া ভাষণে আরও স্পষ্টভাবে তাইওয়ান সমস্যা সমাধানের নীতি ও পন্থা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “দেশের পুনরেকায়ন বাস্তবায়নের পর তাইওয়ান একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে উচ্চ মাত্রার স্বশাসনের অধিকার ভোগ করতে পারবে ”।

  পরের বছর, চীনা নেতা তেং সিয়াওপিং ইয়ে চিয়েনইংয়ের উপরোক্ত বক্তব্য প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন: এটা আসলে হলো“ এক দেশ দুই সমাজ ব্যবস্থা”, দেশের পুনরেকায়নের মহা- পূর্বশর্তে দেশের মূলভূখণ্ডে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকবে, তাইওয়ানে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকবে।

  ১৯৯২ সালের ১২ অক্টোবর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক চিয়াং জেমিন উল্লেখ করেন,” আমরা অবিচলভাবে ‘শান্তিপূর্ণ পুনরেকায়ন ও এক দেশ দুই সমাজব্যবস্থার’ নীতি অনুসরণ করে সক্রীয়ভাবে মাতৃভূমির একায়ন ত্বরান্বিত করবো।”

‘শান্তিপূর্ণ পুনরেকায়ন ও এক দেশ দুই সমাজব্যবস্থার’ নীতির মূল বিষয়বস্তু

  তাইওয়ান সমস্যার সমাধানে চীন সরকারের ‘শান্তিপূর্ণ পুনরেকায়ন ও এক দেশ দুই সমাজব্যবস্থার’ নীতির মূল বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

  এক. এক চীন । পৃথিবীতে শুধু একটি চীন। তাইওয়ান চীনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। চীনের কেন্দ্রীয় সরকার পেইচিংয়ে থাকবে । এটা তাইওয়ান সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পূর্বশর্ত।

  দুই. দুই সমাজব্যবস্থা একই সঙ্গে বিদ্যমান। মানে একই চীনের ভিত্তিতে চীনের মূলভূখণ্ডে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকবে এবং তাইওয়ানে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকবে, দুটো এক সাথে বিদ্যমান থাকবে এবং দুয়ের অভিন্ন উন্নয়ন হবে।

  তিন. উচ্চ মাত্রার স্বশাসন । পুনরেকায়নের পর তাইওয়ান বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলে পরিণত হবে । সে চীনের সাধারণ প্রদেশ বা অঞ্চলের মতো নয়, বরং উচ্চ মাত্রার স্বশাসনের অধিকার ভোগ করবে ।

  চার. শান্তি আলোচনা

  দুই তীরের বর্তমান অবস্থার কারণে চীন সরকার এই মত পোষণ করে যে, দুপক্ষের উচিত পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং একে অপরের অভাব পূরণের নীতি অনুযায়ী সক্রীয়ভাবে দুই তীরের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের আদানপ্রদান ত্বরান্বিত করা , সরাসরি ডাক, বাণিজ্য ও পরিবহণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা এবং দ্বিপাক্ষিক বিনিময় তত্পরতা চালানো, যাতে দেশের শান্তিপূর্ণ পুনরেকায়নের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়।

চীনের মহা পুনরেকায়ন ব্রত ত্বরান্বিত করার আট দফা প্রস্তাব

  ১৯৯৫ সালের ৩০ জানুয়ারি তত্কালীন রাষ্ট্রপতি চিয়াং জেমিন পার্টির কেন্দ্রীয়কমিটিরতাইওয়ান অফিস এবং রাষ্ট্রীয় পরিষদের তাইওয়ান-বিষয়ক অফিসের উদ্যোগেবসন্ত উত্সবউপলক্ষে আয়োজিত এক চা-চক্রে “মাতৃভূমিরপুনরেকায়নসংক্রান্ত আট দফা ধারণা ও প্রস্তাব”পেশ করেন । এর বিষয়বস্তুহলো : এক. একচীন নীতিতে অবিচল থাকা। দুই.বিদেশের সঙ্গে তাইওয়ানের বেসরকারী অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকসম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে আমরা ভিন্ন মত পোষণ করি না। কিন্তু তাইওয়ানের তথাকথিত “অস্তিত্বেরআন্তর্জাতিকস্পেস সম্প্রসারণের” তত্পরতার বিরোধিতা করি । তিন.প্রণালীর দুই তীরেরশান্তিপূর্ণ পুনরেকায়ন নিয়ে আলোচনা চালানো। চার. শান্তিপূর্ণ পুনরেকায়নেরপ্রচেষ্টা করা এবং ‘চীনারা চীনাদেরওপর আক্রমণ করবে না’।পাঁচ. বিপুল প্রয়াসেদুই তীরেরমধ্যে অর্থনৈতিক আদানপ্রদান ও সহযোগিতা উন্নয়ন করা। ছয়.দুই তীরের স্বদেশীয়রামিলিতভাবেচীনা সংস্কৃতির উত্কৃষ্ট ঐতিহ্য উত্তরাধিকারসূত্রে গ্রহণএবংবিকশিত করবে। সাত.তাইওয়ানবাসীদেরজীবনযাত্রার পদ্ধতি এবংস্বতন্ত্র হবার আকাংক্ষাকে পুরোপুরি সম্মান করা, তাইওয়ানবাসীদেরযাবতীয় ন্যায্য অধিকার সুরক্ষা করা । আট. আমরা তাইওয়ান কর্তৃপক্ষেরনেতাকেউপযুক্ত পদমর্যাদার ব্যক্তি হিসেবে মূলভূখণ্ড সফরে আসতেস্বাগত জানাই। আমরাও তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে তাইওয়ান সফরে যেতেইচ্ছুক, তাতেরাষ্ট্রীয় ব্যাপারাদিনিয়েএক সঙ্গে পরামর্শ করতে পারবো এবংপ্রথমেকোনো কোনো সমস্যা নিয়ে মতবিনিময় করতে পারবো।