থাইপেই শহর
থাইপেই শহর তাইওয়ান দ্বীপের উত্তর অংশে অবস্থিত , শহরটির মোট আয়তন ২৭২ বর্গকিলোমিটার। এটি তাইওয়ানের বৃহত্তম শহর, লোকসংখ্যা ২৭ লক্ষ, তা প্রায় তাইওয়ান দ্বীপের মোট লোকসংখ্যার আট ভাগের এক ভাগ।
থাইপেই তাইওয়ান প্রদেশের শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র, তাইওয়ানের বৃহত্তম কোম্পানি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এবং দোকানগুলো প্রধানত তাদের সদরদফতর এখানেই স্থাপন করে । তাইওয়ান প্রদেশের বৃহত্তম শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকার কেন্দ্র হলো থাইপেই শহর , তার অধীনে আরও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে থাইপেই জেলা, থাওইউয়ান জেলা এবং চিলোং শহর।
থাইপেই শহর হলো তাইওয়ান প্রদেশের সংস্কৃতি ও শিক্ষার কেন্দ্রও বটে । বিখ্যাত তাইওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, তাইওয়ান রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়, তাইওয়ানের শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি মোট ২৪টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাইপেই শহরে চালু রয়েছে । তা’ছাড়া তাইওয়ান প্রদেশের সংবাদ, প্রকাশনা, বেতার , টেলিভিশনকেন্দ্র এবং প্রদেশটির বৃহত্তম লাইব্রেরি ও যাদুঘরও এখানে আছে ।
থাইপেই শহরের যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা খুবই উন্নত। এই শহর হলো তাইওয়ান প্রদেশের রেলপথ ও সড়ক পরিবহণের অন্যতম কেন্দ্র । চিলোং বন্দর ও তানশুই বন্দর হলো থাইপেই শহরের দুটি সামুদ্রিক বন্দর। থাইপেই শহরের সোংশান বিমানবন্দর তাইওয়ান প্রদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
(ম্যাপ: থাইপেই শহরের দৃশ্য )
কাওসিয়ং শহর
কাওসিয়ং শহরের আয়তন ১৫০ বর্গকিলোমিটার, লোকসংখ্যা ১৪ লক্ষের বেশি ।তাইওয়ানের শহরগুলোর মধ্যে কাওসিয়ং শহরই সর্বাগ্রে উন্নত হয়েছে , তার ইতিহাস সুদীর্ঘ, তার শিল্প ও বাণিজ্যের দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে।
কাওসিয়ং শহর হলো তাইওয়ান প্রদেশের প্রধান শিল্প ঘাঁটি। এখানে আছে তেল শোধনাগার, লোহা ও ইস্পাত কারখানা, জাহাজ নির্মাণ কারখানা ইত্যাদি তাইওয়ান প্রদেশের বৃহত্তম শিল্পপ্রতিষ্ঠান । এখানে ইলেক্ট্রোনিক্স , যন্ত্রনির্মাণ, সিমেণ্ট, রাসায়নিক সার, এল্যুমিনিয়াম ঢালাই , চিনি উত্পাদন ইত্যাদি শিল্পও খুব উন্নত । কাওসিয়ং শহর হলো তাইওয়ানের মত্স্য উত্পাদন কেন্দ্র, দূর সমুদ্রে মত্স্য শিকারের দিক থেকে কাওসিয়ং তাইওয়ান প্রদেশে প্রথম স্থান অধিকার করে।
কাওসিয়ং শহরের নৌ,স্থল ও বিমান পরিবহণ খুবই উন্নত । এই শহরের আছে বিখ্যাত গভীর পানির বন্দর --কাওসিয়ং বন্দর। এই বন্দরে একই সময়ে ৩৮টি দশ হাজার টনী জাহাজ ভিড়তে পারে । কাওসিয়ং বন্দরের বার্ষিক মাল আমদানী ও রপ্তানীর পরিমাণ বিশ্বে চতুর্থ স্থান অধিকার করে, , প্রথম তিনটি স্থানে রয়েছে হংকং , সিংগাপুর এবং নেদারল্যাণ্ডের রোটরডাম বন্দর। কাওসিয়ং শহরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়মিত ও অনিয়মিত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এবং তাইওয়ান দ্বীপের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু আছে । থাইপেই থেকে বিমানে ৪০ মিনিটের মধ্যেই কাওসিয়ং যাওয়া যায়, ট্রেন বা গাড়ি যোগে যেতে ৪ ঘণ্টা লাগে।
কাওসিয়ং একটি সুন্দর শহর। সারা বছর গ্রীষ্মকালের মতো । আসলে কোনো শীত কাল নেই, এখানে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী বিরাজমান।
তাইওয়ানের প্রদেশ-শাসিত ৫টি শহর
থাইচোং শহর
থাইচোং শহর তাইওয়ান দ্বীপের পশ্চিম অংশে অবস্থিত। এটি তাইওয়ান প্রদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। থাইচোং ইতিমধ্যেই তাইওয়ানের মধ্যভাগের সংস্কৃতি ও শিক্ষা, অর্থনীতি ও পরিবহণের কেন্দ্র হয়েছে । এই শহরে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গোটা তাইওয়ানে থাইপেই শহরের পর দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। থাইচোং শহর তাইওয়ানের বৌদ্ধ সংস্কৃতির কেন্দ্রও বটে। প্রতি বছর তাইওয়ানের বৌদ্ধদের বিরাট ধর্মীয় অনুষ্ঠান এখানকার পাওচুয়ে মন্দিরে আয়োজিত হয়। থাইচোং শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।এটি তাইওয়ানের সবচেয়ে পরিষ্কার শহর হিসেবে সুপরিচিত ।
থাইনান শহর
থাইনান শহর তাইওয়ান দ্বীপের দক্ষিণপশ্চিম উপকূলে অবস্থিত, এটি তাইওয়ানের চতুর্থ বৃহত্তম শহর এবং তাইওয়ানের সবচেয়ে প্রাচীন শহর । থাইপেই শহর তাইওয়ান প্রদেশের রাজধানী হবার আগে থাইনান শহর বরাবরই তাইওয়ানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল । এখানে অনেক দর্শনীয় স্থান ও পুরাকীতির নিদর্শন আছে , যেমন ছিখান ইমারত, আনফিং প্রাচীন দুর্গ, চেং ছেংকোং মন্দির ইত্যাদি। থাইনান শহরে খুব বেশি ধর্মীয় পরিবেশ বিরাজমান। এখানে দু শোরও বেশি মন্দির ও গীর্জা আছে। বৌদ্ধ ও তাও ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি । এখানে প্রটেস্ট্যাণ্ট ও ক্যাথলিক খ্রীষ্টানদের সংখ্যাও খুবই বেশি ।
চিলোং শহর
চিলোং শহর তাইওয়ান দ্বীপের উত্তর অংশে আবস্থিত একটি বন্দর শহর , তার সামনেই পূর্ব চীন সাগর, শহরটি প্রায় চার দিকেই পাহাড় দ্বারা পরিবেষ্টিত।এটি তাইওয়ান দ্বীপের অন্যতম পুরনো উন্নত শহর, এর পরিবহণ ব্যবস্থা বেশ উন্নত, জাহাজ নির্মাণ, রসায়ন, কয়লা শিল্প ও মত্স প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ইত্যাদি বেশ উন্নত। এখানে আছে গুরুত্বপূর্ণ মত্স বন্দর, এখানে মাছের উত্পাদন গোটা তাইওয়ান প্রদেশের পাঁচ ভাগের প্রায় এক ভাগ । চিলোং শহরে বছরে গড়পড়তা দু শো দিনেরও বেশি বৃষ্টি পড়ে, তাই এটা “বৃষ্টির বন্দর”নামেও সুপরিচিত।
সিনচু শহর
সিনচু শহর সিনচু জেলায় অবস্থিত, এটি তাইওয়ানের পশ্চিম উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির শহর । সিনচু শহরে আছে তাইওয়ানের বিখ্যাত ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চিয়াওথোং(কমিউনিকেশন) বিশ্ববিদ্যালয় এবং “তাইওয়ানের সিলিকন ভ্যালি” হিসেবে সুপরিচিত সিনচু বিজ্ঞান ও শিল্প-পার্ক ইত্যাদি।
চিয়াঈ শহর
চিয়াঈ শহর চিয়াঈ জেলায় অবস্থিত । এখানে আছে তাইওয়ানের বৃহত্তম জলাধার --জেংওয়েন জলাধার।
|