তাইওয়ানের রূপরেখা


ভৌগোলিক অবস্থান 

  তাইওয়ান চীনের অন্যতম প্রদেশ ,যা সমুদ্রের একগুচ্ছ দ্বীপ নিয়ে গঠিত । তাইওয়ান চীনের স্থলভাগেরই সমুদ্রে-প্রসারিত অংশ-- মহীসোপানের(continental shelf অর্থাত্ সাগরের গভীর দিকে ক্রমেই নেমে যাওয়া ঢালু এলাকা বা মগ্নচড়ার) দক্ষিণপূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। এই প্রদেশ মূল তাইওয়ান দ্বীপ ও তার নিকটবর্তী দ্বীপসমূহ এবং পেংহু দ্বীপপূঞ্জ সহ মোট৮০টিরও বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। তাইওয়ানের স্থলভাগের মোট আয়তন প্রায় ৩৬ হাজার বর্গকিলোমিটার।

  তাইওয়ানের উত্তর দিকে পূর্ব চীন সাগর, উত্তরপূর্ব দিকে রিউকিউ দ্বীপপূঞ্জ , পূর্ব দিকে প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ দিকে বাশি প্রণালী (প্রনালীর ওপারেই ফিলিপাইন), পশ্চিম দিকে তাইওয়ান প্রণালী, প্রণালীটির পশ্চিমেই চীনের মূলভূখণ্ডের ফুচিয়েন প্রদেশ। তাইওয়ান দ্বীপ আর ফুচিয়েন প্রদেশের উপকূলের নিকটতম স্থানের মধ্যে ব্যবধান মাত্র ১৩০ কিলোমিটার। তাইওয়ান প্রদেশ হলো প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম জলসীমার নৌপথের কেন্দ্রবিন্দু। তার রণনৈতিক অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তাইওয়ান প্রণালী

  

তাইওয়ান প্রণালী উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ, পূব থেকে পশ্চিমেগড়পড়তা১৯০ কিলোমিটার চওড়া। প্রণালীরসবচেয়েসরু জায়গা হলোতাইওয়ানের সিনচু থেকে ফুচিয়েন প্রদেশের ফিংথান পর্যন্ত অংশটিমাত্র১৩০ কিলোমিটার। আবহাওয়াখুব ভাল হলে ফুচিয়েন প্রদেশের উপকূলের উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়েলোকেরা আবছা আবছাভাবে তাইওয়ানের উঁচু পাহাড়ের ওপরকার মেঘ ও কুয়াসা দেখতে পারেন, এমন কিতাইওয়ানের উত্তরাংশেরচিলোং পর্বতেরশৃংগও দেখা যায়।



ভূ-সংস্থান ও ভূবৈচিত্র্য 

  তাইওয়ান দ্বীপের আয়তন গোটা তাইওয়ান প্রদেশের আয়তনের ৯৭ শতাংশেরও বেশি। এটা চীনের বৃহত্তম দ্বীপ। দ্বীপটিতে অনেক পাহাড়-পর্বত । পর্বত ও টিলা এলাকার আয়তন তাইওয়ানের তিন ভাগের দুই ভাগ, আর সমতলভূমি মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ । তাইওয়ান দ্বীপের পাঁচটি প্রধান পর্বতমালা হলো: চোংইয়াং পর্বতমালা, ইউশান পর্বতমালা, স্যুয়েশান পর্বতমালা, আলিশান পর্বতমালা এবং থাইতোং পর্বতমালা( উপকূলীয় পর্বতমালা নামেও পরিচিত)। তাইওয়ানের ভূ-সংস্থানের বৈশিষ্ট্য হলো: মধ্যভাগ উঁচু, দুই পাশে নিচু, দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে প্রসারিত চোংইয়াং পর্বতমালাই হলো তাইওয়ানের যাবতীয় নদনদীর মধ্যস্থিত জল বিভাজনের পর্বতমালা । এই পর্বতমালা থেকে পূর্ব ও পশ্চিম উভয় দিকেই সমুদ্রের উপকূল পর্যন্ত ভূমির উচ্চতা ক্রমেই কমে যায়। ইউশান পর্বতমালার প্রধান শৃঙ্গ ইউশান শৃঙ্গ সমুদ্রসমতল থেকে ৩৯৯৭ মিটার উঁচু । এটাই তাইওয়ানের সর্চোচ্চ শৃঙ্গ।

জলবায়ু ও সম্পদ

  তাইওয়ান প্রদেশ নাতিশীতোষ্ণ ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের মাঝামাঝিতে অবস্থিত, এখানকার জলবায়ু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় ধরনের। তাইওয়ানের চার দিকেই সাগর, তাই সামুদ্রিক মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সারা বছর আবহাওয়া খুব আরামদায়ক, শীতকাল তেমন ঠাণ্ডা নয় , গ্রীষ্মকালও খুব গরম নয়। সারা বছরের গড়পড়তা তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, অবশ্য পর্বতের উপরে খুব ঠাণ্ডা । তাইওয়ানে সাধারণত সারা বছর কখনও তুষার পড়ে না, ৩০০০ মিটারেরও বেশী উঁচু পাহাড়েই শুধু তুষার বা বরফ হয়। তাইওয়ানে বৃষ্টিপাত খুব বেশী, এখানে আবহাওয়ার ওপর তাইফুনের প্রভাব খুব বেশি ।
  তাইওয়ানের বনাঞ্চল প্রদেশটির মোট আয়তনের অর্ধেকেরও বেশি , ইউরোপের বিখ্যাত “ পার্বত্য বনাঞ্চলের দেশ” সুইজারল্যাণ্ডের বনাঞ্চলের দ্বিগুণ বড় এটি। কাঠের মজুদ ৩০ কোটি কিউবিক মিটারেরও বেশি। পর্বতের পাদদেশ থেকে উপরের দিকে আবহাওয়া ক্রমেই ঠাণ্ডা হতে থাকে বলে তাইওয়ানের বনাঞ্চলে গাছের রকমারিতা খুব বেশি। এখানে গ্রীষ্মমণ্ডলীয়, উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয়, নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলীয় নানা রকম মোট ৪০০০ ধরণের গাছ আছে। এটা এশিয়ার প্রাকৃতিক বোটানিকাল গার্ডেন। তাইওয়ান প্রদেশের অর্থকরী বনাঞ্চলের আয়তন গোটা বনাঞ্চলের মোট আয়তনের প্রায় ৮০ শতাংশ । সারা বিশ্বে তাইওয়ানেই সবচেয়ে বেশি কর্পুর গাছ উত্পন্ন হয় । কর্পুর এবং কর্পুর তেল হলো তাইওয়ানের বিশেষ উত্পন্ন দ্রব্য, উত্পাদন পরিমাণ সারা বিশ্বের মোট উত্পাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ।
  তাইওয়ানের চার দিকে সাগর, এবং উষ্ণ ও শৈত্য দুই সামুদ্রিক স্রোতের সংযোগস্থলে অবস্থিত বলে এখানে প্রচুর মাছ উত্পন্ন হয়। মাছের প্রজাতির সংখ্যা ৫ শোরও বেশি । কাওসিয়ং, চিলোং, সুআও, হুয়ালিয়েন, সিনকাং, ফেংহু প্রভৃতি এলাকায় প্রচুর মাছ উত্পন্ন হয়। তা’ছাড়া তাইওয়ানে উত্পাদিত সামুদ্রিক লবণও খুবই বিখ্যাত।