চীনের প্রদেশ পর্যায়ের প্রশাসনিক ইউনিট



       বর্তমানে চীনে ২৩টি প্রদেশ,পাঁচটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল,৪টি কেন্দ্র শাসিত মহানগর আর ২টি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল সহ মোট ৩৪টি প্রদেশ পর্যায়র প্রশাসনিক ইউনিট আছে ।  

৪টি কেন্দ্র শাসিত মহানগর নিম্নরূপঃ

পেইচিং 

        চীন গণ প্রজাতন্ত্রের রাজধানীর সংক্ষিপ্ত নাম চিং ।চিং হুয়াপেই সমতল ভূমির উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। প্রথমে চিং চি নামে পরিচিত,বসন্ত-শরত-যুদ্ধকালে চিং ইয়েন রাজ্যের রাজধানী ছিলো,লিয়াও রাজবংশের অস্থায়ী রাজধানী ছিলো,তাকে ইয়েনচিং ডাকা হতো ,চিন,ইয়ুন,মিং,ছিং আর প্রজাতন্ত্র চীনের প্রথমদিকে চিং রাজধানীশহর ছিল,পরপর চিং মধ্য রাজধানী,বৃহত রাজধানী,পেইফিং ,পেইচিং প্রভৃতি নামে পরিচিত । ১৯২৮ সালে চিং শহরে পরিনত হয় ,তার অধীনে ১৬টি বিভাগ আর ২টি জেলা আছে,কেন্দ্র শাসিত মহানগর হিসেবে চিংয়ের আয়তন হল ১৬ হাজার ৮শ বর্গকিলোমিটার। ২০০২ সালের শেষ দিকে পেইচিংয়ের তালিকাভূক্ত লোকসংখ্যা ১কোটি ১৩ লক্ষ ৬৩ হাজার। পেইচিং যেমন চীনের রাজনৈতিক কেন্দ্র তেমনি সংস্কৃতি,বিজ্ঞান ও শিক্ষা আর যাতায়াতের কেন্দ্র ।পেইচিং দেশবিদেশে বিখ্যাত সুন্দর দর্শনীয় স্থানও বটে , পেইচিংয়ে আছে মহাপ্রাচীর,রাজপ্রাসাদ, থিয়েনথান পার্ক, মিং কবরস্থান , গ্রীষ্মপ্রাসাদ,সুগন্ধ পাহাড় প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান । 

সাংহাই 


       সাংহাইয়ের সংক্ষিপ্ত নাম হু । পূর্ব চীনের সমুদ্র-তটের মধ্যাংশে আর সমুদ্রে ছাংচিয়াং নদীর মোহনায় সাংহাই অবস্থিত ।প্রাচীনকালে সাংহাইসমুদ্র-তীরের এক ছোটো জেলে-গ্রাম ছিলো ,বসন্ত-শরত কালেসাংহাই উ-রাজ্যের জায়গা আর যুদ্ধরাজ্যকালের ছুরাজ্যের এক জেলা ছিলো ,সুংরাজবংশ আমলে জায়গাটি সাংহাই নামে ছোটো নগরে পরিনত হয় । ১৯২৭ সালে সাংহাই একটি বড় শহরে পরিনত হয় ,এখন সাংহাই চীনের চারটি কেন্দ্র মহানগরের অন্যতম ,এর অধীনে ১৮টি বিভাগ ও একটি জেলাআছে । সাংহাই শহরের আয়তন ৫ কোটি ৮০ লক্ষ বর্গ-কিলোমিটার। ২০০২ সালের শেষ দিকের তালিকাভূক্ত লোকসংখ্যা ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৪৭ হাজার।সাংহাই যেমন চীনের বৃহত্তম শহর তেমনি বিশ্বের অন্যতম বড় শহর । তাছাড়া সাংহাই চীনের বৃহত্তম শিল্পনগর,বানিজ্যকেন্দ্র,তহবিলকেন্দ্র আর বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ঘাঁটি ।  

থিয়েনচিন 

       থিয়েনচিনকে সংক্ষেপে চিন বলে ডাকা হতো । থিয়েনচিন উত্তর-চীন সমতলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ।হাইহো নদীর পাঁচটি বড়-শাখা এখানে মিলিয়ে পোহাই সাগরে প্রবাহিত হয় ।চিন আর ইউয়ান শাসনামলে থিয়েনচিনকে চিকু বলে ডাকা হতো । জায়গাটি নৌপরিবহনের মাধ্যমে রাজধানীতে খাদ্যশস্য পাঠানোর গুরুত্বপূর্ণ স্থান,পরে জায়গাটি হাইচিন নামে নগরে পরিনত হয় । প্রাচীনকালে সম্রাটকে থিয়েনচি বলা হতো । মিংরাজবংশ আমলের প্রথম দিকে সম্রাটজাহাজ করে থিয়েনচিন সফর করেছেন বলে জায়গাটির নামকরা হয়েছে থিয়েনচিন । ১৯২৮সালে শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থিয়েনচিনের অধীনে বর্তমানে ১৫টি বিভাগ আর তিনটি জেলা রয়েছে । থিয়েনচিন কেন্দ্রশাসিত মহানগর , এর আয়তন ১১হাজার বর্গকিলোমিটার । ২০০২ সালের শেষ দিকের তালিকাভূক্ত লোকসংখ্যা হলো ৯১ লক্ষ ৯০ হাজার ৫০০। থিয়েনচিন উত্তর চীনের বৃহত্তম শিল্পনগর,এর যেমন প্রচুর তেল-গ্যাস আর সামুদ্রিক লবন আছে তেমনি আছে শিল্প-প্রযুক্তিগত মজবুত ভিত্তি। থিয়েনচিন উত্তরচীনের গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্য-কেন্দ্র ও উপকূলীয় শহর । থিয়েনচিনের প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আছে নিংইউয়ান বাগান,সম্রাজ্ঞী-প্রাসাদ,তাকুখৌ কামান – দুর্গো ,চি জেলার দু-ল্য সি মন্দির, হুয়াংইয়াকুয়ান প্রাচীন মহাপ্রাচীর এবং পূর্ব-পেইচিংয়ের প্রথম পাহাড় নামে পরিচিত ফানশ্যান পাহাড়ের দর্শনীয় স্থান । 

ছুংছিং 

        ছুংছিংকে সংক্ষেপে ইউয়ু ডাকা হয় ।দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের পূর্বাঞ্চল আর ছাংচিয়াং নদীর উচ্চতর অববাহিকায় ছুংছিং অবস্থিত । জাপানবিরোধী যুদ্ধের সময় ছুংছিং কোমিনতাঙ পার্টির অস্থায়ী রাজধানী ছিলো ।১৯৭৭ সালে সাবেক সিছুয়ান প্রদেশের ছুংছিং শহর ,ওয়ানসিয়েন জেলা আর ফুলিং এই তিনটি শহর এবং ছিনচিয়াং প্রশাসনিক অঞ্চল নিয়ে কেন্দ্রশাসিত মহানগর ছুংছিং শহর গঠিত হয় । ছুংছিং শহরের অধীনে ১৫টি বিভাগ,৪টি জেলা-নগর,১৭টি জেলা আর ৪টি স্বশাসন জেলা আছে । এর আয়তন ৮২ হাজার ৩০০বর্গকিলোমিটার । ২০০২ সালের শেষ দিকের তালিকাভূক্ত লোকসংখ্যা ৩ কোটি ১০ লক্ষ ৭০ হাজার । ছুংছিং একটি বহুমুখী শিল্পনগর, এর আছে ছাংচিয়াং নদীর তিনগিরিখাত,পিফাশ্যান পাহাড়,চিনইউয়ুনশ্যান পাহাড় প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান আছে।

২৩টি প্রদেশের নাম নিম্নরূপ
প্রদেশ সংক্ষিপ্ত নাম রাজধানী
হ্যপেই   চি     সিচিয়াচুয়াং
শানসি   চিন থাইইউয়ান
লিয়াওনিং লিয়াও সেনইয়াং
চিলিন    চি ছাংছুন
হেইলুংচিয়াং হেই হারপিন
চিয়াংসু সু   নানচিং
চেচিয়াং চে হাংচৌ
আনহুই ওয়ান হ্য ফেই
ফুচিয়েন মিন ফুচৌ
চিয়াংসি ক্যান নানছাং
শানতুং লু চিনান
হ্যনান ইউয়ু চেনচৌ
হুপেই এ্য উহান
হুনান সিয়াং ছাংশা
কুয়াংতুঙ   ইয়ো কুয়াংচৌ
হাইনান ছোং হাইখৌ
সিছুয়াং ছুয়ান বা শু ছেনতু
কুইচৌ ছিয়েন বা কুই কুইইয়াং
ইউয়ুন্নান তিয়েন বা ইউয়ুন খুনমিং
শ্যানসি শ্যান বা ছিন সি আন 
ক্যানসু ক্যান বা লুং লানচৌ
ছিংহাই ছিং সিনিং
থাইওয়ান থাই থাইপেই

 

৫টি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল নিম্নরূপ:
স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সংক্ষিপ্ত নাম অন্তমঙ্গোলিয়ারাজধানী
অন্তমঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল অন্তমঙ্গোলিয়া হুহাওট
তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চাং লাসা
কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কুই নাননিং
নিংসিয়া হুইজাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল নিং ইনছুয়ান
সিনচিয়াং উইগুরজাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিন উরুমুচি

 

দুটি বিশেষ প্রশাসনিক এলাকা হলো :
বিশেষ প্রশাসনিক এলাকা সংক্ষিপ্ত
হংকং

১৯৯৭ সালের ১ জুলাই হংকংয়ে চীনের সার্বভৌমত্বপুনরুদ্ধার হয়েছে এবং হংকং বিশেষ প্রশাসনিক এলাকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।একে সংক্ষেপে কাং বলে ডাকা হয়। দক্ষিণ সাগরের এক পাশে, চুচিয়াং নদীর মোহনার পূর্ব দিকে , কুয়াংতুঙ প্রদেশের সেনচেন শহরের সেনচেন নদীর দক্ষিণাঞ্চলে হংকং অবস্থিত । হংকং দ্বীপ, কাউলোং,সিনকাই আর তার আশেপাশের দ্বীপগুলো নিয়ে গঠিত হংকংয়ের আয়তন ১০৯৮.৫১ বর্গকিলোমিটার । ২০০২ সালের শেষ দিকে হংকংয়ের মোট লোকসংখ্যা ৬৮ লক্ষ ১৫ হাজার ৮০০ । এর মধ্যে স্থায়ী নাগরিকের সংখ্যা ৬৬ লক্ষ ২৫ হাজার ৩০০ । পরিবর্তনশীল লোকসংখ্যা ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৫০০ ।

ম্যাকাও ১৯৯৯সালের ২০ ডিসেম্বর চীন ম্যাকাওতে তার সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করে এবং ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক এলাকা প্রতিষ্ঠা করে । একে সংক্ষেপে আও বলে ডাকা হয় ।ম্যাকাও চুচিয়াং নদীর মোহনার পশ্চিম তীরের এক উপদ্বীপে অবস্থিত । আশেপাশে তাংচাই দ্বীপ আর লুহুয়ান দ্বীপ সহ ম্যাকাওয়ের মোট আয়তন ২ লক্ষ ৫৮ হাজার বর্গকিলোমিটার । ২০০২ সালের শেষ দিকে ম্যাকাওয়ের স্থায়ী নাগরিক সংখ্যা ৪ লক্ষ ৪২ হাজার ।