Web bengali.cri.cn   
সিনচিয়াংয়ের কিংবদন্তী-মুকামু
  2015-12-26 18:13:48  cri
প্রিয় শ্রোতা, আপনারা এখন যে গানটি শুনছেন সেটি চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী সংগীত, যার নাম 'মুকামু'। আধুনিক উইগুর ভাষায় 'মুকামু' অর্থ 'শাস্ত্রীয় সংগীত'। উইগুর জাতির 'মুকামু' পশ্চিমাঞ্চলের আদিবাসীদের সংস্কৃতি থেকে সৃষ্ট। আরবের বিভিন্ন দেশ, ইরান, তুরস্ক, ভারত ও মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোরও নিজস্ব 'মুকামু' তথা শাস্ত্রীয় সংগীত রয়েছে। কিন্তু সিনচিয়াংয়ে উইগুর জাতির মুকামু'র ধরণ সবচেয়ে বেশি। উইগুর জাতির বৈশিষ্ট্যময় '১২ মুকামু' জাতিসংঘের অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নাম তালিকায় স্থান পেয়েছে।

দীর্ঘকাল ধরেই ওস্তাদরা শিক্ষার্থীদের মুকামু শেখাতেন মুখে মুখে। কিন্তু মুকামু'র গানের কথা কঠিন এবং সংগীত সুন্দর হলেও জটিল। সেজন্য মুকামু শিক্ষা অনেক কঠিন। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার আগে মুকামু প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। সিনচিয়াং জাতীয় অর্কেস্ট্রার পরিচালক বাহেত্তিইয়ার আবদুল ভাইত্তি বলেন, মুকামু উদ্ধার করার জন্য স্থানীয় সরকার ২০০৯ সালে সিনচিয়াং য়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'সিনচিয়াংয়ের জাতীয় সংগীত ও বাদ্যযন্ত্র উন্নয়নের জন্য আমরা সিনচিয়াং জাতীয় অর্কেস্ট্রা প্রতিষ্ঠা করি। আমাদের লক্ষ্য সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন জাতির ঐতিহ্যবাহী সংগীত ও বাদ্যযন্ত্র রক্ষা করা, উন্নয়ন ও নবায়ন করা, এবং নতুন নতুন সংগীত ও বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবন করা।'

সিনচিয়াং জাতীয় অর্কেস্ট্রার পরিচালক হিসেবে বাহেত্তিইয়ার আবদুল ভাইত্তি বরাবরই সিনচিয়াংয়ের জাতীয় সংগীত প্রচার ও আরো বেশি মানুষকে সিনচিংয়ের জাতীয় সংগীতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে সিনচিয়াং জাতীয় অর্কেস্ট্রা সিনচিয়াংয়ে আয়োজিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনার দায়িত্ব পালন করে। যেমন, এশিয়া ও ইউরোপ মেলা, আন্তর্জাতিক নাচ উত্সব ইত্যাদিতে এই অর্কেষ্ট্রা সংগীত পরিবেশন করেছে। এ ছাড়াও অর্কেস্ট্রাটি পররাষ্ট্রবিষয়ক সাংস্কৃতিক যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করে। অর্কেস্ট্রাটি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, তুরস্ক, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও দক্ষিণ-পূর্ব বিভিন্ন দেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছে এবং এতে এসব দেশে সিনচিয়াংয়ের জাতীয় সংগীতের ব্যাপক প্রচার পেয়েছে।

অর্কেস্ট্রার শিল্পীদের জন্য সংগীত হল তাঁদের জীবন। শিল্পী আত্তিলামা মনে করেন, সংগীত হল বিশ্ববাসীর কমন ভাষা। এ সম্পর্ক তিনি বলেন, 'আমরা কথা না-বলেও সংগীতের মাধ্যমে দর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি। তাঁরা সংগীতের বিষয়বস্তু বুঝতে পারেন। আমরাও নিয়মিত বিদেশি সংগীত শুনি। আমাদের মোবাইলে বিভিন্ন জাতির সংগীত রয়েছে।'

অর্কেস্ট্রাটির অধিকাংশ শিল্পী সিনচিয়াং শিল্প একাডেমি থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। তাঁরা পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। কোনো কোনো শিল্পী পেইচিং ও শাংহাইয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর অর্কেস্ট্রাতে যোগ দেন। বাহেত্তিইয়ার আবদুল ভাইত্তি আমাদেরকে জানান, 'প্রতিবছর আমরা আমাদের শিল্পীদেরকে চীনের কেন্দ্রীয় সংগীত একাডেমি, চীনের সংগীত একাডেমি ও শাংহাই সংগীত একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে পাঠাই। আমরা অব্যাহতভাবে আমাদের শিল্পীদের মান উন্নয়নের চেষ্টা করছি।'

কিন্তু অর্কেস্ট্রাটির পরিচালক বাহেত্তিইয়ার আবদুল ভাইত্তি মনে করেন, তাঁদের দায়িত্ব শুধু এটি না। তিনি বলেন, 'আমরা সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন জাতির ঐতিহ্যবাহী সংগীত প্রচার ও উন্নয়ন করার পাশাপাশি আধুনিক সংগীতও সংযুক্ত করতে চাই। আমরা এ ধরণের কিছু নতুন সংগীত রচনা করবো, যাতে চীনের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সংগীত-সংস্কৃতি নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়।'

অর্কেস্ট্রাটির ২০ জনেরও বেশি শিল্পী দেশি-বিদেশি নানা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করেছেন। তাঁদের পরিবেশনা দেশে ও বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাহেত্তিইয়ার আবদুল ভাইত্তি এজন্য গর্বিত। কিন্তু তাঁদের আরেকটি স্বপ্ন রয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমরা অনেক দেশে সংগীত পরিবেশন করেছি। আমি ভাবছি, কোনো একদিন আমাদের অর্কেস্ট্রা বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর মঞ্চগুলোতেও কনসার্ট পরিবেশন করবে এবং জাতীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের জনগণ আমাদের সিনচিয়াংয়ের জাতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবে—এটাই আমাদের চাওয়া।'

1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040