Web bengali.cri.cn   
ফ্রান্সে মেধাবীদের শিক্ষা ব্যবস্থা
  2015-12-21 13:57:53  cri

আপনাদের অনেকেই হয়তো বিভিন্ন সূত্রে জেনেছেন যে, চীনের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাজীবন অনেক কঠিন, পরিশ্রমের। তবে তাদের সেই কঠিন শিক্ষাজীবনের শুরুতে কিন্তু কষ্ট করতে হয় শুধু বাবা-মাকেই। তারা নিজ নিজ সন্তানকে একটি ভালো স্কুলে ভর্তি করাতে অনেক চেষ্টা করেন। ভালো স্কুলের কমিউনিটিতে বাড়ি কেনা সে চেষ্টার একটা অংশ। সমস্যা হচ্ছে, এ ধরনের কমিউনিটিতে ফ্লাটবাড়ির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। কখনও কখনও মানের তুলনায় এসব বাড়ি বা ফ্লাটের দাম অনেক বেশি হয়।

কিন্তু শুধু কমিউনিটিতে বাড়ি কিনলেই তো আর হবে না! ভালো স্কুলে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীকে ইন্টারভিউ দিতে হবে। এসময় তাদের পাশাপাশি পিতামাতাকেও ইন্টারভিউ দিতে হয়। এখন অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে যখন কোনো সন্তান একটি ভালো স্কুলে ভর্তি হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই পিতামাতা চান তার সন্তান লেখাপড়ায় ভালো করুক। তাই তারা লেখাপড়ার ব্যাপারে সন্তারের ওপর কঠোর হতে পিছপা হন না।

কিন্তু, আপনারা কি জানেন, ফ্রান্সের অবস্থাও মোটামুটি একই রকম? ফ্রান্সে লেখাপড়া করা 'সহজ ব্যপার নয়', তা অনেকেই জানেন। আসলে ফ্রান্সের মেধাবীদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীসহ গোটা পরিবারকেই সময় ও শ্রম দিতে হয়।

ফ্রান্সেও মেধাবীদের জন্য বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থা আছে। যেমন, এলিট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেবল মেধাবী শিক্ষার্থীরাই ভর্তি হতে পারেন। এমন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য হাই স্কুলে স্নাতক-পরীক্ষার পর থেকেই ছাত্রছাত্রীরা প্রস্তুতিমূলক ক্লাস-এ অংশগ্রহণ করে থাকেন।

এসব প্রস্তুতিমূলক ক্লাস মাধ্যমিক স্কুলগুলোতেই হয়ে থাকে। তবে মাধ্যমিক স্কুলের ক্লাসের তুলনায় এগুলো একদম আলাদা। স্কুলগুলো প্রতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আবেদনকারীদের মধ্য থেকে নতুন ছাত্রছাত্রী বেছে নেয়। প্রস্তুতিমূলক ক্লাস-এর তিনটি ক্যাটাগরি আছে: প্রকৌশলী স্কুলের প্রস্তুতিমূলক ক্লাস, বাণিজ্য স্কুলের প্রস্তুতিমূলক ক্লাস এবং আর্ট স্কুলের প্রস্তুতিমূলক ক্লাস। দু'বছর ধরে তাদেরকে এখানে লেখাপড়া করতে হয়। বুঝতেই পারছেন, বেশ কঠিন যাত্রা এটা।

আমরা একটি উদাহারণের মাধ্যমে প্রস্তুতিমূলক ক্লাস সম্বন্ধে জানতে পারি। রোজার মাসিউ হচ্ছেন লাইসে লুই লা গ্রাঁ (Lycée Louis le Grand) স্কুলের প্রস্তুতিমূলক ক্লাসের একজন গণিত শিক্ষক। ২০০৬ সাল থেকেই তিনি এ স্কুলে শিক্ষাদান শুরু করেন। তিনি জানালেন, প্রতি সপ্তাহে প্রস্তুতিমূলক ক্লাসের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীর জন্য ১০ ঘন্টার গণিত ক্লাস, ৪ ঘন্টার হোমওয়ার্ক গাইড-এর ক্লাস এবং ২ ঘন্টার ব্যক্তিগত গাইড-এর ক্লাস থাকে। এ ছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রতি সপ্তাহে ৩ ঘন্টার কম্পিউটার ক্লাসও থাকে। রোজার বলেন, হাইস্কুলে স্নাতকের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের ওপর চাপও বেড়ে যায়। আর প্রস্তুতিমূলক ক্লাসের চাপ আরো বেশি।

লাইসে লুই লা গ্রাঁ (Lycée Louis le Grand) মাধ্যমিক স্কুলের গ্রহণ করা ছাত্রছাত্রীদের সবাই অনেক ভালো বলে তাদের অধিকাংশই প্রস্তুতিমূলক ক্লাস শেষে সরাসরি শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে পারে।

আর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া তুলনামূলকভঅবে অনেক সহজ কাজ। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি-পরীক্ষায় পাস করেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায়। এ পরীক্ষায় সন্তানকে পাস করানোর বিষয়টিও পিতামাতাকে আগে থেকেই বিবেচনায় রাখতে হয়। তারা চেষ্টা করেন সন্তানকে সেসব হাইস্কুলে ভর্তি করাতে, যেখান থেকে বের-হওয়া-শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বেশি উত্তীর্ণ হয়।

সরকারি স্কুল ছাড়া প্যারিসে কয়েকটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার মানও অনেক উঁচু। তবে এসব বেসরকারি স্কুলের শিক্ষা-ফি বা শিক্ষা-খরচ অনেক বেশি। যেমন, বেসরকারি স্কুল Ecole Active Bilingue Jeannine Manuel (ইএবিজেএম)-এর কথা ধরা যাক। প্রতি বছর এ স্কুলের নিবন্ধন ফি ৪শ ইউরো। এ ছাড়াও প্রতি চার মাস অন্তর একবার করে শিক্ষা-ফি দিতে হয়। অর্থাত ফ্রান্সের স্কুলগুলোতে প্রতি বছর তিন বার শিক্ষা-ফি নেওয়া হয়। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ইএবিজেএম-এর প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বছরের শিক্ষা ফি হবে ৫৩৬৭ ইউরো, মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষা ফি হবে ৫৬৫২ ইউরো। আর যদি শিক্ষার্থী হাইস্কুলের শেষ বছরে International Baccalaureate Diploma Programme (আইবিডিপি)-র কোর্স নিতে চায়, তাহলে তাকে আরও বেশি শিক্ষা-ফি গুণতে হবে। সে ক্ষেত্রে তার এক বছরের শিক্ষা-ফি হবে ১৭৬৩৭ ইউরো। অবশ্য, শিক্ষা-ফি বেশি হলেও, আইবিডিপি'র কোর্স-করা শিক্ষার্থীরা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহজে ভর্তি হতে পারে।

এমন কোর্স সাধারণত হাইস্কুলের অন্যান্য কোর্সের চেয়ে কঠিনতর। তবে স্কুলটি বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী গ্রহণ করে এবং শিক্ষাদানের মানও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে মিশে বিভিন্ন দেশ ও দেশের মানুষের চিন্তাধারা সম্বন্ধেও জানতে পারে।

সরকারি স্কুলের তুলনায় বেসরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষার্থী বেছে নেওয়ায় স্বাধীনতা বেশি। বেসরকারি স্কুল সাক্ষাত্কার, লিখিত পরীক্ষা এবং অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচন করতে পারে। যেমন, এর আগে আমরা যে ফ্রান্সের সবচেয়ে বিখ্যাত বেসরকারি স্কুল ইএবিজেএমের কথা উল্লেখ করেছি, যদি বাবা-মা নিজের ছেলেমেয়েকে এ স্কুলের প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করাতে চান, তাহলে বাবা-মা এবং শিশুর সুপারিশপত্র, বার্থ সার্টিফিকেট, আগের স্কুলের সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এ ছাড়া, ফ্রান্সে বসবাসকারী পরিবারের শিশুকে ভাষা-পরীক্ষাও দিতে হয়। শিশু যাতে দ্বিভাষিক কোর্স নিতে পারে, তা নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য। বিদেশি পরিবারের শিশুদের দিতে হয় আইকিউ টেস্ট।

যদিও ফ্রান্সে অনেক ভালো স্কুল আছে, তবে অধিকাংশ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তেমন তীব্র নয়। পরবর্তী পর্যায়ের স্কুলে ভর্তি হতে পারাটা শুধুই নির্ভর করে তাদের লেখাপড়ার ফলাফলের ওপর। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষায় নির্দিষ্ট ফল করলেই চলে।

এর আগে আমরা উল্লেখ করেছি যে, ফ্রান্সের স্কুলে প্রতি বছর তিনটি সেমিস্টার আছে। প্রতি সেমিস্টারে পরীক্ষা আছে। সাধারণত স্কুল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে না। বেসরকারি স্কুল হয়ত শিক্ষার্থীদের ফলাফলের পর্যায় (সাধারণ, ভালো, শ্রেষ্ঠ) প্রকাশ করে, তবে নির্দিষ্ট স্কোর প্রকাশ করে না।

সাধারণত শুধু শিক্ষকরাই সব শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফলাফল জানেন। তবে যদি কোনো শিক্ষার্থী লেখাপড়ার সমস্যা থাকে অথবা ফলাফল আগের চেয়ে মন্দ হয়, তখন শিক্ষক শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং তাকে সাহায্য করবেন। তাই আমরা বলি, ফ্রান্সের মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা সবসময় নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এবং আগের চেয়ে আরো ভালো হওয়ার জন্য চেষ্টা করে।(শুয়েই/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040