1214huanqiu
|
ব্রিটেনের চারটি এলাকা আছে: ইংল্যান্ড, ওয়েলস, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড। ঐতিহাসিক কারণে পুরো ব্রিটেনে দুই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে।
ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে স্কটল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থার কিছুটা পার্থক্য আছে। স্কুলে থাকার সময় এবং পরীক্ষাব্যবস্থা হলো দুই রকমের শিক্ষাব্যবস্থা ও যাচাই-এর ব্যবস্থা।
ব্রিটেনে সরকারি স্কুলের ব্যবস্থা অনুযায়ী, কিন্ডাগার্টেন ও অল্প বয়সী শিশু বিভাগ সবসময় একই স্কুলে থাকে। ইংল্যান্ডে শিশুরা ৫ বছর বয়সে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয়। আর তাদের প্রাথমিক স্কুল আসলে যেন কিন্ডাগার্টেনের মত, বেশি ক্লাস নেই। ১১ বছর বয়সে তারা মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হতে পারে। ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রাথমিক স্কুলের মেয়াদ ছয় বছর। তবে স্কটল্যান্ডে প্রাথমিক স্কুলের মেয়াদ ৭ বছর।
সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা হলো ব্রিটেনের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, সরকারি স্কুল ৯৩ শতাংশেরও বেশি ব্রিটিশ শিশুদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে। ব্রিটেনে শুধুই অল্প কিছু বেসরকারি স্কুলের প্রাথমিক স্কুল শাখা আছে। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরা ৭ বছরের পর বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হতে পারে। তাই ব্রিটেনে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের মেধাবীদের শিক্ষার সুবিধা প্রতিফলিত হয় মাধ্যমিক স্কুলের বাছাই-এ।
ব্রিটেনের মাধ্যমিক স্কুলের সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যময় বিষয় হলো বিভিন্ন ধরনের স্কুলের নাম তালিকা। ১৬ বছর বয়সে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির জন্য পরীক্ষা জিসিএসই'র ফলাফল এবং ১৮ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা এ-লেভেলের ফলাফল অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের স্কুলের নাম তালিকা তৈরি করা হয়। কারণ প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফল ভিন্ন, তাই প্রতি বছর এ নাম তালিকাও ভিন্ন হয়। বিভিন্ন তথ্য মাধ্যম এবং পেশাদার যাচাই সংস্থা এ তালিকা তৈরি করতে অনেক আগ্রহী। আর বিভিন্ন স্কুলের ওয়েবসাইটে এ তালিকাও লোকজনদের সবচেয়ে পঠিত বিষয়। কারণ তা হলো বাবা মা'র শিশুদের জন্য স্কুল বাছাই-এর গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
যদিও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার মান বেশ ভালো, তবে সাধারণ ব্রিটিশ পরিবারের জন্য লেখাপড়ার ফি অনেক বেশি হয়। তাই যখন শিশু প্রাথমিক স্কুল শেষ করে, তখন শিশুর জন্য একটি ভালো সরকারি স্কুল বাছাই করা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বাবা মা'র কাছে।
বাবা-মা প্রথমে স্কুলের নাম তালিকা দেখেন। দেখেন কেন এসব নাম তালিকার পার্থক্য রয়েছে। তারপর দেখেন এসব ভালো স্কুলে ভর্তির শর্ত। কাছাকাছি স্কুলে ভর্তি করা ভালো না কি স্কুলের শিক্ষার মান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এসব বিষয় চিন্তা করেন বাবা-মা।
আসলে স্কুলের নাম তালিকার প্রথম ১০ শতাংশের সরকারি স্কুলে ভর্তি করা অনেক কঠিন এবং ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অতি কম। সাধারণত নাম তালিকার প্রথম ১০ শতাংশের সরকারি স্কুল ছাত্রছাত্রীর থাকা কমিউনিটি অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীদের গ্রহণ করে তা নয়, বরং ইংরেজি, গণিতসহ বিভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ ছাত্রছাত্রীদের বাছাই করে। আর এসব পরীক্ষা খুব কঠিন হতে পারে।
যেমন- সরকারি স্কুলের নাম তালিকার প্রথম দশ স্থানে রয়েছে ব্রিটেনের সরকারি ছাত্রী স্কুল হেনিরেট্টা বার্নেট স্কুল। এ স্কুলে ভর্তি হতে চাইলে স্কুলের বিশেষ পরীক্ষায় পাস করতে হবে। আর এ পরীক্ষা সত্যি অনেক কঠিন। ভর্তি হওয়ার হার প্রায় ১৭:১। আর গত বছর এ হার ছিলো ২৪:১। বলা যায় এ স্কুল ব্রিটেনে ভর্তি হওয়া সবচেয়ে কঠিন স্কুলের অন্যতম।
আর ব্রিটেনে শিশুদেরকে ভালো স্কুলে ভর্তির জন্য কাছাকাছি এলাকায় বাড়িঘর কেনাও খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। ব্রিটেনের রিয়েল এস্টেট ওয়েবসাইটে কাছাকাছি স্কুল ও স্কুলের মর্যাদা ইতোমধ্যেই লোকজনের বাড়িঘর কেনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিণত হয়েছে।
ব্রিটেনের মাধ্যমিক স্কুল ব্যবস্থায় রয়েছে সরকারি স্কুল ও বেসরকারি স্কুল। একটি গণ জরিপ অনুযায়ী, ৮ হাজারটি সবসময় সংবাদপত্রে দেখা যায় নাম অথবা ৮ হাজারটি নাম করা ব্যক্তিদের নিয়ে করা এক তদন্ত থেকে জানা যায়, তাদের মধ্যে ৪৪শতাংশই বেসরকারি স্কুল থেকে স্নাতক হয়েছেন। আর সরকারি বিভাগে এ হার আরো বেশি। প্রায় ৬৮ শতাংশ সরকারি বিভাগের নেতা বেসরকারি স্কুল থেকে স্নাতক হন। ব্রিটেনের গুরুত্বপূর্ণ পদের ৮০ শতাংশই বেসরকারি স্কুলের স্নাতকধারী।
বেসরকারি স্কুল বাছাই করতে নাম তালিকা এবং লেখাপড়ার ফি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু'টি উপাদান।
আমরা জানি, ব্রিটেনের সবচেয়ে বিখ্যাত বেসরকারি স্কুল ইটন স্কুল আসলে বিশ্ববিখ্যাত, অনেক রাজনীতিক বা নাম করা ব্যক্তি এ স্কুল থেকে স্নাতক হয়েছেন। এ স্কুলের লেখাপড়ার ফি প্রতি বছর ৬০ হাজার পাউন্ড। বলা যায় তা বিলাসী একটি স্কুল। ইটনের তুলনায় অন্যান্য বেসরকারি স্কুলের ফি ততটা বেশি নয়। সাধারণত প্রতি বছর ১৫ হাজার পাউন্ড। ব্রিটেনের মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবার তা গ্রহণ করতে পারে। যদি এ লেখাপড়ার ফি আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য, তাহলে বেসরকারি স্কুল বাছাই করা আসলে সরকারি স্কুলের চেয়ে সহজ।
যেমন ২০১২ সালে দেশের ১৫ স্থানের স্কুল সাউথ হ্যম্পস্টেড হাই স্কুলে ভর্তি হওয়ার হার ৫:১। আর ব্রিটেনে শুধুই ৭ শতাংশ ছাত্রছাত্রী বেসরকারি স্কুল বাছাই করে। তাই একটু হিসাব করুন, বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হওয়া সত্যি সরকারি স্কুলের চেয়ে অনেক সহজ হতে পারে। এ ছাড়া দেশটিতে মোট ২৬০০টিরও বেশি বেসরকারি স্কুল আছে। যদি এক স্কুলে ভর্তি হতে না পারা যায়, তাহলে অন্যান্য স্কুল বাছাই করতেও পারবে।
(ফেইফেই/টুটুল)