Web bengali.cri.cn   
চীন বাংলাদেশের পরীক্ষিত সহযোগী ও অংশীদার: ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত মা মিং ছিয়াং
  2015-12-02 14:05:08  cri

 


[চলতি বছর চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে সম্প্রতি চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই)-এর উদ্যোগে ঢাকায় আয়োজন করা হয় 'চীনা খাদ্য উত্সব' এবং 'ক্যামেরায় চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী' শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর। চীনা খাদ্য উত্সবে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের মাননীয় রাষ্ট্রদূত মা মিং ছিয়াং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে তিনি সিআরআই বাংলা বিভাগের উপ-পরিচালক ছাও ইয়ান হুয়া সুবর্ণাকে একটি সাক্ষাত্কার দেন। সাক্ষাত্কারে রাষ্ট্রদূত চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক, পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেন।]

মা মিং ছিয়াং বাংলাদেশে চীনা রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন ২০১৫ সালের শুরুতে। তিনি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন; স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেছেন; এবং সংবাদমাধ্যমগুলোর সাথে গড়ে তুলেছেন অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। বাংলাদেশ সম্পর্কে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বললেন, ৫ বছর আগে চীনের তত্কালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সহযোগী হিসেবে তিনি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তখনই তিনি প্রথম বাংলাদেশকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ পান। তার দৃষ্টিতে বাংলাদেশ একইসঙ্গে একটি নবীন ও প্রবীণ দেশ। কারণ, স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাস খুব দীর্ঘ না-হলেও, জাতি হিসেবে এর সভ্যতা প্রাচীন। প্রাচীনকালে আজকের বাংলাদেশ অনেক উন্নত সভ্যতার অধিকারী ছিল; ছিল সমৃদ্ধ। প্রাচীনকালে চীনের সন্ন্যাসী ফাহিয়ান আর হিউয়ানসাংসহ অনেক পণ্ডিত এ দেশ সফর করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,

"'গ্র্রেট থাং রেকর্ডস্‌ অন দ্য ওয়েস্টার্ন রিজিয়ন' শীর্ষক এক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রাচীন বঙ্গদেশের বাসিন্দাদের জীবন সমৃদ্ধ ও সমাজ উন্নত ছিল। তাদের খাদ্যের অভাব ছিল না। তারা পরিশ্রমী, বুদ্ধিমান, ও সম্মানিত। এ প্রেক্ষাপটেই আধুনিক কালে এসে এতদঞ্চল থেকে রবীন্দ্রণাথ ঠাকুর ও মুহাম্মাদ ইউনুসের মতো দুই পণ্ডিত নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হয়েছেন। এখানকার মানুষগুলো সহজ-সরল; চীনাদের সাথে তাদের মৈত্রী সম্পর্ক গভীর। এখানে আমি চীন সম্পর্কে কোনো খারাপ কথা শুনিনি। চীনকে নিজেদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ভাবতে ও বলতে পছন্দ করে বাংলাদেশিরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, চীন বাংলাদেশের পরীক্ষিত সহযোগী ও অংশীদার। আমি অনেক বাংলাদেশি বন্ধুর বাসায় গিয়েছি; সময় কাটিয়েছি নিজের বাসার মতো। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত সামনের দিকে এগিয়েছে। গত ১০ বছর ধরে দেশটির জিডিপি বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি হারে। দেশটির অর্থনীতিতে উন্নয়নের সম্ভাবনা ব্যাপক। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা যদি বলি, দু'দেশের জনগণের মৈত্রী সম্পর্ক স্থিতিশীল এবং পারস্পরিক সহযোগিতা দু'দেশের জন্যই কল্যাণকর। বাংলাদেশের উন্নয়নে যেমন চীনকে প্রয়োজন, তেমনি চীনের উন্নয়নেও বাংলাদেশকে প্রয়োজন।"

বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণে চীন সরকার দীর্ঘকাল ধরেই বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে আসছে। চীন ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণ করেছে; নির্মাণ করেছে সাতটি মৈত্রী সেতু। এসব সেতু স্থানীয় জনগণের যাতায়াতকে সহজতর করেছে। এসব সেতু যেন দু'দেশের মৈত্রীর প্রতীক। এ ছাড়া, চীনের সাথে বিভিন্ন প্রকৌশল প্রকল্প ও দেশটিতে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশের আর্থনীতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এসব প্রকল্পে ব্যাপক কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে চীনের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে জনাব মা মিং ছিয়াং বললেন,

"চীনের বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্প বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতির উন্নয়নে প্রভাবশালী ভুমিকা পালন করে থাকে। যেমন, চীনের সহায়তায় বাংলাদেশে ৭টি সেতু নির্মিত হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সপ্তম সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। শিগগিরি শুরু হবে চীন-বাংলাদেশ অষ্টম মৈত্রীসেতুর নির্মাণকাজও। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্র বাংলাদেশের একটি দারুণ আকর্ষণীয় স্থাপত্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আগামী বছর সেখানে একটি বড় ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করা হবে। তা ছাড়া, আমরা আরেকটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীকেন্দ্র নির্মাণ করবো, যা বাংলাদেশের আরেকটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থাপত্য নিদর্শন হবে।

চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, সেগুলোর মান ভালো এবং ব্যয়ও তুলনামূলকভাবে কম। চীন বর্তমানে বাংলাদেশে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করছে। এটি সবচে বড় প্রকল্প। এ সেতু বাংলাদেশিদের স্বপ্ন। সেতুটি নির্মিত হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১ থেকে ২ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজও করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে টিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্প, সরকারি কার্যালয়গুলোর নেটওয়ার্কের দ্বিতীয় দফার নির্মাণকাজ, ২.৫জি নেটওয়ার্ক উন্নতকরণ কাজ এবং ৩০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণকাজ, ইত্যাদি।

চীন বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে পুঁজি বিনিয়োগও করে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। চীনা বিনিয়োগেই চট্টগ্রামে নির্মিত হবে 'চীন অর্থনৈতিক শিল্প উদ্যান'। এর আয়তন হবে ৭৭৪ একর। সংশ্লিষ্ট চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো এ উদ্যানের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। আরও কয়েকটি চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠান নিজস্ব খরচে বিজিএমইএ'র সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে ঢাকার কাছে একটি 'পোশাক উদ্যান' নির্মাণ করবে। এখানে পুঁজি বিনিয়োগ করা হবে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। এ উদ্যান নির্মিত হলে বাংলাদেশে অতিরিক্ত দুই থেকে আড়াই লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানাশোনা বাড়লে এখানে পুঁজি বিনিয়োগকারী চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বাড়বে। এতে দেশটির অর্থনীতি লাভবান হবে।"

চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আদান-প্রদান ও পারস্পরিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা দু'দেশেই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে চলতি বছরের শুরুতে বিভিন্ন খাতে দু'পক্ষের আদান-প্রদান অনেক বেড়েছেও। গত মে মাসে বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস বাংলাদেশের একশ যুবকের একটি দলের চীন সফর আয়োজন করে। এ সফর ছিল দু'দেশের যুবকদের মধ্যে আদান-প্রদান ও জানাশোনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন,

"যুব সমাজ যে-কোনো রাষ্ট্রের ভবিষ্যত। বর্তমানে চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক দারুণ ঘনিষ্ঠ। এ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ও উন্নত করতে দু'দেশের যুব সমাজের প্রচেষ্টাই প্রয়োজন। বাছাই করা বাংলাদেশি যুবাদের চীন সফর ছিল তাত্পর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। এতে চীন সম্পর্কে তাদের জানাশোনা বেড়েছে নিঃসন্দেহে। তারা চীন থেকে ফিরে চীনের উন্নয়ন থেকে শেখার কথা জানিয়েছেন; বলেছেন দু'দেশের সহযোগিতার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা। এরা এখন চীন-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্যতম সমর্থক, অংশগ্রহণকারী ও সহায়তাকারী। তাদের কেউ কেউ সুযোগ পেলে চীনে লেখাপড়া ও চাকরি করার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন। আশা করি, আমরা ভবিষ্যতে আরও বাংলাদেশি যুবক-যুবতীকে চীন সফরে পাঠাতে পারবো এবং আদান-প্রদানের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। আমার জানামতে, অনেক চীনা যুবক-যুবতীও বাংলাদেশে এসে ব্যবসার সুযোগ খুঁজে বের করেছেন এবং অনেকে করছেন। আশা করি, ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।"

বাংলাদেশের চিত্রকলা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। দু'দেশের শিল্পকলার আদান-প্রদান জোরদার করার উদ্দেশ্যে চলতি বছরের শুরুতে চীনের কানসু শিল্পকলা দল বাংলাদেশ সফর করে। অন্যদিকে, জুলাই মাসে বাংলাদেশের যুব চিত্রশিল্পীদের একটি প্রতিনিধিদল চীনের হুনান প্রদেশ সফর করে। তা ছাড়া, সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের একটি সাংবাদিক প্রতিনিধিদল পেইচিং, উরুমুচি ও খুনমিং সফর করে। এ সফরে তারা চীনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সামনে থেকে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পান। এর পর নভেম্বর মাসে ইউয়ুননান নৃত্যগীতি দল বাংলাদেশ সফর করে। ডিসেম্বর মাসে চীনা চলচ্চিত্র উত্সবও বাংলাদেশে শুরু হবে। এ প্রেক্ষাপটে দু'দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ভবিষ্যত সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন,

"দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তির আদান-প্রদান অতি গুরুত্বপূর্ণ। দু'দেশে পরস্পরের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও বেশি বেশি আয়োজন করা জরুরি। চীনের লোকসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। বাংলাদেশে আছে প্রায় ১৬ কোটি মানুষ। জনসংখ্যার বিচারে আমাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের সংখ্যা খুবই কম। ভবিষ্যতে দু'দেশে পরস্পরের আরও বেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে। এ ছাড়া, দু'দেশের মধ্যে দক্ষ জনশক্তির বিনিময়ও বাড়ানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দু'দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে বিবেচনায় রাখতে হবে। আমি বাংলাদেশের এটিএন বাংলা, ইনডিপেন্ডেন্ট টিভি ও চ্যানেল আই টিভিতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। টেলিভিশন প্রভাবশালী মিডিয়াগুলোর অন্যতম। এ মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের বিনিময় প্রকল্পগুলো আরও জনপ্রিয় হতে পারে।"

সম্প্রতি সিআরআইয়ের উদ্যোগে ঢাকায় 'চীনা খাদ্য উত্সব' ও 'ক্যামেরায় চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী' শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী সাফল্যের সাথে আয়োজন করা হয়। জনাব মা মিং ছিয়াং দুটি অনুষ্ঠানেরই ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জনগণের সামনে চীনের সংস্কৃতি তুলে ধরা সম্পর্কে তিনি বলেন,

"সিআরআইয়ের উদ্যোগে চীনের ৫ জন রন্ধনশিল্পী বাংলাদেশে এসে 'চীনা খাদ্য উত্সবে' অংশ নেন। দু'দেশের সম্পর্কের ওপর এ উত্সবের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যারা এ উত্সবে অংশ নিয়েছেন, তাদের সবার কাছেই এটি ভালো লেগেছে। বাংলাদেশ সরকারও উত্সবটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা যেতে পারে। সিআরআই এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আশা করি, বাংলা ভাষায় চীনের শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সিআরআই ভবিষ্যতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। চীনা দূতাবাস এসব ক্ষেত্রে সিআরআইয়ের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।

এখানে আমি একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। বর্তমানে বাংলাদেশের ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার সাথে ইউয়ুননান পত্রিকা পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে। প্রতি সপ্তাহে ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকায় 'ইউয়ুননান কলাম' প্রকাশিত হয়। এটা খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। ভবিষ্যতে চীন ও বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিনিময় ও সহযোগিতা বাড়ানো হবে। এর মধ্যে থাকবে তথ্য বিনিময়, পেশাদার কর্মী বিনিময়, এবং অন্যান্য কাজে সহযোগিতা।"

চীন সরকারের উত্থাপিত 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাব তথা 'একবিংশ শতাব্দির রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল' এবং 'বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর' প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। আশা করা যায়, এ প্রস্তাবের আওতায় চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী ও কার্যকর হবে। এ সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত মা বলেন,

"জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ পরিষদ চলাকালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখা হয়। এসময় এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীন বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত সহাসাগরীয় এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ও অংশীদার হিসেবে গণ্য করে। জ্বালানিসম্পদ ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতাও জোরদার করতে চায় তার দেশ। প্রেসিডেন্ট সি'র এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, 'এক অঞ্চল, এক পথ' এবং 'বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর' কাঠামোতে বাংলাদেশ চীনের গুরুত্বপূর্ণ ও পরীক্ষিত অংশীদার। ভবিষ্যতে জ্বালানিসম্পদ ও অবকাঠামো খাতে সহযোগিতা বাড়াবে দু'দেশ। প্রেসিডেন্ট সি বাংলাদেশের চাহিদার কথা বিবেচনা করেই এ ধরনের কথা বলেছেন। কারণ, জ্বালানিসম্পদ ও অবকাঠামোর অভাব বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে প্রধান দু'টি বাধা। এ দুটি খাতেই দেশটি তুলনামূলকভাবে দুর্বল। এ খাতে বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতা করার জন্য চীনই সবার চেয়ে এগিয়ে আছে।"

চীনা দূতাবাস দু'দেশের পারস্পরিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে কীভাবে আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে?—জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি ছুটির দিনেও বাংলাদেশের উন্নয়ন-সমস্যা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন এবং এ সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন, সেগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে শেয়ার করেন। তিনি বলেন,

"শুরুতেই দু'দেশের বস্তুগত চাহিদা অনুসারে আমাদের কাজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা একমুখী হওয়া উচিত নয়। দু'দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে পারস্পরিক কল্যাণেই কাজ করতে হবে। শুধু এক দেশের কল্যাণের কথা বিবেচনা করলে চলবে না। চীনের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের স্বার্থই অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। কারণ, বাংলাদেশ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং চীনের সুপ্রতিবেশী ও বন্ধু। আমি বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তাদেরকে সবচে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার বিষয় নিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার অনুরোধ করেছি, যাতে চীন সরকার আরও স্পষ্টভাবে জানতে পারে যে, কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, চীনারা বাংলাদেশ সম্পর্কে খুব বেশি জানে না। তাই দু'দেশের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান বাড়ানো জরুরি। চীনের তথ্য বাংলাদেশে প্রচার করতে হবে, এবং বাংলাদেশের তথ্য চীনে প্রচার করতে হবে। এক্ষেত্রে চীনা দূতাবাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।"

চীনা রাষ্ট্রদূত মাত্র কয়েক মাস হলো বাংলাদেশে এসেছেন। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি দেশটি সম্পর্কে গুরত্বপূর্ণ অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তিনি এখানকার সমাজ ও অর্থনীতি সম্পর্কে জেনেছেন। এ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, তিনি পরিশ্রমী একজন মানুষ এবং দু'দেশের কল্যাণে কাজ করে যেতে ইচ্ছুক একজন কূটনীতিক। আমরা আশা করি, তার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস দু'দেশের সুসম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে, যা থেকে দু'দেশের জনগণই লাভবান হবেন। (সুবর্ণা/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040