1129jiankang.
|
পরামর্শ ১: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন
পানির অপর নাম জীবন। আপনি কি প্রতিদিন যথেষ্ট খানি পান করে থাকেন? বিশেষজ্ঞের মত হলো, একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। আট গ্লাস পানির পরিমাণ মোটামুটি ২ লিটার। পর্যাপ্ত পানি আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। পর্যাপ্ত পানি হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগ প্রতিরোধে স্পষ্ট ভূমিকাও পালন করতে সক্ষম।
পরামর্শ দুই: শরীরের গঠন বা ফিগারের ওপর গুরুত্ব দিন
শরীরের গঠন বা ফিগার ভাল থাকলে মানুষকে সুন্দর দেখায়। বয়স বাড়লে ফিগার আর আগের মতো সুন্দর থাকে না। এসময় স্থুলকায় হয়ে যাবার আশঙ্কাও দেখা দেয়। তাই বয়সের সাথে সাথে আমাদের উচিত আরও বেশি ফিগারসচেতন হওয়া। নিত্যদিনের খাওয়া-দাওয়ার ওপর খেয়াল করা উচিত আমাদের। চীনে একটি মজার কথা প্রচলিত, যদি তুমি নিজের মুখ নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারো, তবে পা চালাও। এর মানে যদি খাওয়া একটু বেশি হয়, তবে সেই অতিরিক্ত খাবার হেঁটে তথা ব্যয়াম করে বার্ন করতে হবে।
পরামর্শ তিন: তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে দূরে থাকুন
আধুনিক জীবনে কাজের কারণে অনেকেই সারাদিন কম্পিউটার ও মোবাইলফোনসহ বিভিন্ন ইলেক্টোনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন। এসব যন্ত্র থেকে কমবেশি তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হয়। এসব পদার্থ নিঃসন্দেহে শরীরের ক্ষতি করে। খেয়াল না করলে আমাদের ত্বকসহ মানসিক অবস্থাও দিন দিন দুর্বল হয়ে যাবে। এ থেকে বেঁচে থাকতে আসলে অনেক উপায় আছে। যেমন কম্পিউটারের সামনে এক গ্লাস পানি রাখুন। রাতে শোয়ার আগে মোবাইলফোন ব্যবহার না-করার অভ্যাস করুন।
পরামর্শ চার: বেশি বেশি হাসুন
মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে। আর মন ভালো থাকার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে 'হাসি'। চীনের এক প্রবাদে আছে: যারা বেশি বেশি হাসেন, তাদের বয়স অন্তত দশ বছর কমে যায়। আসলে হাসি আমাদের শরীর ও মনকে প্রসন্ন করে; আমাদের মানসিক উত্তেজনা প্রশমিত করে; শরীরের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে; এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমরা যখন যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, প্রতিদিন প্রচুর হাসতে হবে। হাসির কোনো কারণ নেই? তবুও হাসুন।
পরামর্শ পাঁচ: নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের চীনে আরও একটি কথা প্রচলিত আছে, আর তা হলো, 'দীর্ঘজীবন চাইলে বেশি বেশি পায়চারি করুন'। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশেও নিশ্চয় এ ধরণের কথা প্রচলিত আছে। আসলে এখানে পায়চারি বা হাঁটা বলতে শরীরচর্চাকে বোঝানো হয়েছে। নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের শরীর সুন্দর ও সুঠাম রাখে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরচর্চা হিসেবে পায়চারি করা, আস্তে দৌড়ানো, থাইজি মুষ্টিযুদ্ধ, শরীরগঠনমূলক ব্যায়াম ও ইউগা ইত্যাদি ভালো।
পরামর্শ ছয়: ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
ধূমপান আমাদের শরীরের কোনো উপকার করে না; শুধু অপকারই করে। বাংলাদেশের একজন নামকরা চিকিত্সককে একবার টিভিতে বলতে শুনেছিলাম যে, ধূমপানের ফলে পায়ের নখ থেকে শুরু করে মাথার চুল পর্যন্ত হেন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেই যা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। গবেষণায় প্রমাণিত যে, ধূমপানের সময় শরীরের স্বাভাবিক রক্তচলাচল বাঁধাগ্রস্ত হয়। তাই ধূমপায়ী মানুষ সহজেই হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তা ছাড়া, যারা ধূমপান করেন, তাদের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। পরোক্ষ ধূমপানের কথাও আজকাল বেশ বলা হচ্ছে। সরাসরি ধূমপান না-করেও, আশেপাশের মানুষের মুখ থেকে নির্গত ধোঁয়া শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করাকে বলে পরোক্ষ ধূমপান। পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিও কম নয়। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, পরোক্ষ ধূমপানের ফলে বিশেষ করে শিশুরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক বলেছেন: 'যেসব পিতামাতা নিজ শিশুসন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেন, তাদের উচিত ধূমপান পুরোপুরি ত্যাগ করা।"
পরামর্শ সাত: প্রতিদিন এক কাপ দই খান।
দইয়ের মধ্যে সমৃদ্ধ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন এ ই ও সি ছাড়াও শরীরের জন্য উপকারী বিভিন্ন উপাদান থাকে। দই শরীরের ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করে। দই মানুষের বার্ধক্যকে বিলম্বিত করতে পারে। আর দই খাওয়ার সবচে ভালো সময় হচ্ছে রাতের খাবারের আধ ঘন্টা থেকে দুই ঘন্টার মধ্যে। অতএব নিয়ম করে প্রতিদিন দই খান।
পরামর্শ আট: প্রতিদিন এক কাপ সবুজ চা বা গ্রিন টি খান।
সবুজ চা বা গ্রিন টি-র মধ্যে সমৃদ্ধ ভিটামিন সি ও অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। এসব উপাদান উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ক্যান্সারসহ অনেক রোগের প্রতিরোধে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে যাদের পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে বা যাদের পেটে ব্যথা হয় তাদের সবুজ চা না খাওয়া উচিত বলে চিকিত্সকেরা বলে থাকেন।
পরামর্শ নয়: প্রতিদিন অন্তত একটি কমলা খান।
সব ফলের মধ্যে কমলার মধ্যে ভিটামিনের পরিমাণ সবচে বেশি থাকে। এ ফল আমাদের শরীরের জন্য বেশ ভাল। শরীরের ক্ষতিকারক পদার্থ নির্মূলে কমলার ভূমিকা স্বীকৃত। কমলা ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
পরামর্শ দশ: সময়মত ঘুমান, রাত জাগবেন না
তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে খুব ভোরে জেগে ওঠার অভ্যাস একজন মানুষকে স্বাস্থ্যবান রাখে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আধুনিক সমাজে আমাদের অনেকেরই রাত জাগার বদভ্যাস গড়ে উঠেছে। আর স্বাভাবিকভাবেই এ অভ্যাসের কারণে আমাদের অনেককেই প্রতিনিয়ত নানান সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। কেউ কেউ তো শেষ পর্যন্ত ইনসোম্নিয়া বা নিন্দ্রাহীনতায় ভুগছেন। সুতরাং, দেরিতে না-ঘুমানোর সংকল্প করুন এবং তা মনে রাখার চেষ্টা করুন।
(ওয়াং হাইমান/আলিম)