Web bengali.cri.cn   
ভারতের সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবি 'বাহুবলী'র সফলতার কারণ
  2015-11-25 15:09:36  cri


সম্প্রতি ভারতের একটি চলচ্চিত্র সারা বিশ্বে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটিকে ভারতের 'সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচ্চিত্র' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এর নাম 'বাহুবলী: দ্য বিগিনিং'।

আর আপনারা কি জানেন, এ চলচ্চিত্র চলতি মাসে চীনের সিনেমা হলে প্রদর্শিত হবে। অনেক চীনা দর্শক এর জন্য অনেক খুশি এবং চলচ্চিত্রটি উপভোগের অপেক্ষায় রয়েছেন।

সম্প্রতি 'বাহুবলী' চলচ্চিত্রের বক্স অফিস ৬ বিলিয়ন রুপি ছাড়িয়েছে। অনেক বিদেশি বা ভারতীয় চলচ্চিত্র সম্পর্কে বেশি না জানা লোকেরা এ থেকে জানতে পেরেছেন যে, ভারতের চলচ্চিত্র বাজারে বলিউড ছাড়াও আরো অন্য অনেক বিখ্যাত আঞ্চলিক চলচ্চিত্রশিল্প রয়েছে।

এর কাহিনী এমন: মহান রাজা অমরেন্দ্র বাহুবলী (প্রভাস; দ্বৈত চরিত্র) ও রাণী দেবসেনা (অনুষ্কা শেঠি)-এর পুত্র শিবুডু'কে (প্রভাস) মহিষ্মতী রাজ্য থেকে বের করে দেবার পরে সে ঝর্ণার পাদদেশে অবস্থিত একটি গ্রামের আদিবাসী লোকজনের লালন-পালনে বড় হয়। তার অমিত শক্তি ও বীরত্বের কারণে তাকে বাহুবলী বলা হয়। সে বারংবার পর্বতে ও ঝর্ণার শীর্ষে আরোহণ করে এবং এক পর্যায়ে তার সাথে বীর নারী যোদ্ধা অবন্তিকা'র (তামান্না) দেখা হয়। সে অবন্তিকাকে ভালোবেসে ফেলে। অবন্তিকার কথায় শিবা মহিষ্মতী রাজ্যে যায়, যেখানে স্বৈরশাসক রাজা ভল্লালা দেব (রানা ডাগগুবাতি) ১০০-ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট তার নিজেরই একটি মূর্তি নির্মাণ করছে।

মহষ্মতী রাজ্যের সিংহাসনের প্রকৃত উত্তরাধিকারী শিবা পরবর্তীতে স্বৈরাচারী ভল্লালা দেবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।

তেলেগু ভাষার এ চলচ্চিত্রটির কাহিনী রচনা ও পরিচালনা করেছেন এস. এস. রাজামৌলি এবং প্রযোজনা করেছেন শবু ইয়ারলাগাড্ডা ও প্রসাদ দেবিনেনি। চলচ্চিত্রটি একই সাথে তেলেগু এবং তামিল ভাষায় নির্মিত হয়েছে, সেইসাথে হিন্দি, মালায়ালাম, ইংরেজি, ফরাসি ও জাপানিজ ভাষায় ডাবিং করা হয়েছে।

সিনেমাটির মুখ্য ভূমিকায় আছেন প্রভাস, রানা ডাগগুবাতি, অনুষ্কা শেঠি এবং তামান্না ভাটিয়া, নাসির ও রাময়া কৃষ্ণ।

কেন অনেকেই মনে করেন 'বাহুবলী' অনেক সফল? এর প্রধান কারণের মধ্যে রয়েছে- ছবির স্পেশাল ইফেক্টের জন্য কাজ করেছেন সারা বিশ্বের নামকরা ২৬টি ভিএফএক্স স্টুডিও ও বিভিন্ন দেশের ৬০০ গ্রাফিক আর্টিস্ট। ভারতে ছবির জন্য সর্বোচ্চ ২৪ ফুট উঁচু সেট তৈরি করা হয়েছিল। আর বাহুবলী'র জন্য বানানো হয়েছে ৪৫ ফুট উঁচু সেট। আর্ট, ডিজাইন ও ভিজুয়াল ইফেক্টের জন্য কাজ করেছেন প্রায় ৮০০ টেকনিশিয়ান। এদের বেশিরভাগই কোনও না কোনও সময় পুরস্কার পাওয়া। সাড়ে ৪ হাজার ভিএফএক্স শর্ট নেওয়া হয়েছে এ ছবির জন্য।

ছবির প্রি-প্রোডাকশনে কেটেছে এক বছর। এত দীর্ঘ সময় আর কোনও ভারতীয় ছবির জন্য লাগেনি। আর তৈরি করতে মোট সময় লেগেছে ৩ বছর। ছবির চরিত্র প্রভাসকে প্রতিদিন ৪০টি করে সেদ্ধ ডিম খেতে হয়েছে। এমনকি ছবির জন্য নিজের বিয়ে পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছেন তিনি! ছবির নায়ক প্রভাসের শরীরচর্চার জন্যই দেড় কোটি রুপির যন্ত্রপাতি কিনতে হয়েছে। চরিত্রদের মারামারি শেখাতে ভিয়েতনাম থেকেও মার্শাল আর্ট এক্সপার্ট নিয়ে আসা হয়েছিল।

তিন মাস ধরে বিশ্বে 'বাহুবলী'র বক্স অফিস ৬ বিলিয়ন রুপি ছাড়িয়েছে। তা হলো ভারতে প্রথম এত ভালো বক্স অফিস পাওয়া অহিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র। ভারতে চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞরা সাধারণত ১ বিলিয়ন রুপিকে একটি মানদণ্ড হিসেবে একটি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা যাচাই করেন। আর শুধু 'বাহুবলী'র হিন্দি সংস্করণই ১ বিলিয়ন রুপি বক্স অফিস ছাড়িয়েছে। এর আগে আমরা উল্লেখ করেছি যে, এ চলচ্চিত্রের বাজেট আড়াই বিলিয়ন রুপি। বলিউডে একটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের বাজেট সাধারণত ৫০ কোটি থেকে ১ বিলিয়ন রুপি। আর দক্ষিণ ভারতে তেলেগু ও তামিল ভাষার চলচ্চিত্রের বাজেট প্রতি চলচ্চিত্রে শুধু ১০ কোটি। তাই আমরা বুঝতে পারি বাহুবলী কত ব্যয়বহুল একটি চলচ্চিত্র।

বাহুবলীর জন্য লোকেরা ভারতের আঞ্চলিক চলচ্চিত্র নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করেছেন। আর দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্র সম্বন্ধে লোকজনের আগ্রহও বেড়েছে। ভারতের চলচ্চিত্রের সম্প্রদায় অনেক। বলিউড হলো ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্রশিল্প। আর এসব চলচ্চিত্র প্রধানত হিন্দি ভাষার। আর দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্রও ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্রাঙ্গন। তা প্রধানত চারটি ভাষার চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। তেলেগু, তামিল, কর্ণাটক ও মালায়ালম ভাষার। এর মধ্যে তেলেগু চলচ্চিত্রশিল্প অনেক বিখ্যাত।

আসলে ভারতে অনেক আঞ্চলিক চলচ্চিত্রশিল্প রয়েছে। যেমন-

ভোজপুরি চলচ্চিত্রশিল্প, বাংলা চলচ্চিত্রশিল্প, হিন্দি চলচ্চিত্রশিল্প (বলিউড), কানড়া চলচ্চিত্রশিল্প, কাশ্মিরী চলচ্চিত্রশিল্প, মালায়ালাম চলচ্চিত্রশিল্প, তামিল চলচ্চিত্রশিল্প, তেলেগু চলচ্চিত্রশিল্প, মারাঠি চলচ্চিত্রশিল্প, গুজরাটি চলচ্চিত্র শিল্প।

প্রতি বছর দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্রশিল্পগুলো বহু চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। এর মধ্যে অনেক চলচ্চিত্রই বলিউডের চলচ্চিত্রের পুনরায় ডাবিংকৃত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্রশিল্প ৫ শ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। এর মধ্যে তেলেগু, তামিল, কর্ণাটক ও মালায়ালম ভাষার চলচ্চিত্র অন্তত ১২০টি। তবে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ চারটি ভাষার জন্য চলচ্চিত্র পুরস্কার শুধুই একটি, তা হলো ১৯৫৩ সাল থেকে শুরু হওয়া 'দক্ষিণ ভারতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার'।

বাহুবলী সফল হওয়ায় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র মহলের দৃষ্টিও বলিউড থেকে দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্রে ফেরাতে শুরু হয়। ভারতের কিছু বড় বড় মিডিয়া সংস্থাও দক্ষিণ ভারতের চার ভাষার চলচ্চিত্রের জন্য বেশ কয়েকটি পুরস্কার স্থাপন করেছে, যাতে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও নির্মাতাদের পুরস্কার প্রদান করা যায়।

২০১৫ সালকে বলা যায় দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্রের প্রসারের বছর। বাহুবলীর বিরাট সাফল্য নিঃসন্দেহে আবার দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্র ভারত তথা সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে সুনাম অর্জন করতে পারবে। (ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040