Web bengali.cri.cn   
চীন-দক্ষিণ কোরিয়া সৃজনশীল শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠা করবে
  2015-11-27 14:41:17  cri

৩১ অক্টোবর চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং দক্ষিণ কোরিয়ায় আনুষ্ঠানিক সফর করেছেন। সফরে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা গুরুত্বপূর্ণভাবে সৃজনশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা জোরদারের নতুন কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন। এতে সৃজনশীল সহযোগিতার মাধ্যমে দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করা এবং যৌথভাবে অর্থনীতির নতুন প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতাকারী দেশগুলোর মধ্যে চীন অন্যতম। পশ্চিম উপকূলের নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিতে ২০১৪ সালে চীন-দক্ষিণ কোরিয়া সৃজনশীল শিল্পপার্ক প্রকল্প শুরু করে এবং চীন-দক্ষিণ কোরিয়া স্থানীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতার দৃষ্টান্তমূলক প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা চালিয়েছে ছিং তাও শহর। এক বছর ধরে সৃজনশীল পার্কের নির্মাণকাজ ধারাবাহিকভাবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, আনুষঙ্গিক সেবা অব্যাহতভাবে বাড়ছে এবং স্বাস্থ্য খাতের সহযোগিতার ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।

২৬ বছর আগে, শান তোং প্রদেশের প্রথম দক্ষিণ কোরীয় পুঁজি বিনিয়োগকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিং তাও-এ প্রতিষ্ঠা করে এবং ছিং তাও ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা শুরু করে। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া ছিংতাওয়ের বৃহত্তম বৈদেশিক পুঁজির উত্স এবং তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছিংতাও ও দক্ষিণ কোরিয়ার আমদানি-রপ্তানির মোট পরিমাণ ছিল ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। ছিং তাও মোট ১৫২৫ কোটি মার্কিন ডলারের দক্ষিণ কোরীয় পুঁজি ব্যবহার করেছে। এই পরিমাণ চীনের ব্যবহৃত দক্ষিণ কোরীয় পুঁজির ২৫.৫ শতাংশ। ছিং তাও-এ দক্ষিণ কোরিয়া প্রায় ১১ হাজার প্রকল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। ছিং তাও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা অঞ্চলের পুঁজি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত ব্যুরোর উপপ্রধান পান ওয়েই বলেন, ছিং তাও ও দক্ষিণ কোরিয়া ভৌগোলিকভাবে কাছাকাছি, সাংস্কৃতিক সম্পদের পরিমাণও একই রকম হওয়ায় দু'পক্ষের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা চালানো সহজ। তিনি বলেন,

ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী ছিং তাও দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে কাছে। তাপমাত্রা ও জলবায়ু দক্ষিণ কোরিয়ার মতো; দ্বিতীয়ত, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যেও মিল রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া সবচেয়ে বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করেছে ছিং তাও শহরে; এ ছাড়া পরিবহন ব্যবস্থাও সহজ। বর্তমানে ছিং তাও থেকে দক্ষিণ কোরিয়াগামী ফ্লাইট খুবই সুবিধাজনক। চতুর্থত, মেধাশক্তি সুবিধা, বিশেষ করে ছিং তাও ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে যোগাযোগ বেশি।

২০১৪ সালের অগাস্টে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতাদের 'হাতে হাত রেখে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি' ভবিষ্যতমুখী কৌশলগত আর্থ-বাণিজ্যিক ও শিল্প সহযোগিতা সম্প্রসারণের উদ্যোগ শুরু হয়। এতে চীন-দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করার জন্য সৃজনশীল শিল্পপার্ক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এটি ছিং তাওয়ের পশ্চিম উপকূলে নতুন অর্থনৈতিক এলাকা প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে। শিল্পপার্ক ছিং তাও চীন-জার্মান ইকোপার্কের পাশে অবস্থিত। এ পার্কের মোট আয়তন ১৭.৪ বর্গকিলোমিটার। প্রথম পর্যায়ের ৩.৭৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায় চীন-দক্ষিণ কোরিয়া বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। ছিং তাও চীন-দক্ষিণ কোরিয়া পার্ক সহযোগিতা উন্নয়ন লিমিটেড কোম্পানির মহাপরিচালক পাও জেন ইউয়ু বলেছেন, পুরো পার্কের দুটো কর্ম সংক্রান্ত এলাকা আছে। এ কাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ও সহযোগিতা সেবা। পাও জেন ইউয়ু বলেন,

পার্কের মাঝখানে একটি পাহাড় আছে। পাহাড়ের উত্তর দিকে হাই-এন্ড শিল্পাঞ্চল। দক্ষিণ দিকে রয়েছে হাই-এন্ড উত্পাদনমুখী শিল্পাঞ্চল। এখানে আমরা বিশেষ করে জীবন ও স্বাস্থ্য শিল্প সংক্রান্ত কাজ করবো। বর্তমানে আমরা ভালোভাবে পরিবেশ এবং সহায়ক স্থাপনার পরিকল্পনা করছি, তারপর শিল্পের পজিশনিং ও স্থানভেদে শিল্পের বণ্টন কাজ করব। এর ভিত্তিতে দক্ষিণ কোরীয় প্রকল্পের পরিচর্যা ও আমদানি জোরদার করবো।

আগের ছিং তাও ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও শিল্প ক্ষেত্রে দু'পক্ষের সহযোগিতা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। পরিষেবা শিল্পে সহযোগিতা কম ছিল। বিশেষ করে উন্নত ও নতুন প্রযুক্তির সহযোগিতায় খুবই কম ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'দেশের শিল্পচেন সংযুক্ত হওয়ায় চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার যোগাযোগ বেড়েছে। পান ওয়েই মনে করেন, এ ধরনের প্রাধান্য দু'দেশের সৃজনশীল শিল্পে সহযোগিতার জন্য পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন,

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়নের বেশ কিছু উজ্জ্বল দিক রয়েছে। চীনেরও আছে। দু'দেশের উজ্জ্বল বিষয়গুলোকে পরস্পর সংযুক্ত করা যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো কোনো প্রযুক্তি সরাসরি চীনে ব্যবহার করা যায়। দেশটির বেশ কিছু প্রযুক্তি থাকলেও তার বাজারটা তুলনামূলকভাবে ছোট, সম্প্রসারণ করা সহজ নয়। বর্তমানে চীনের অর্থনৈতিক শক্তি তুলনামূলকভাবে অনেক বড়। কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি কিছু বিশেষ প্রযুক্তিগত দিক বিবেচনা করে সম্প্রসারণ করতে চাইলে, তা বেশ কাজে লাগবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ছিং তাও চীন-দক্ষিণ কোরিয়া সৃজনশীল শিল্পপার্কের পাঁচটি কর্মকাণ্ড রয়েছে। এক, বাণিজ্যিক সুবিধাকরণ কেন্দ্র হিসেবে চীন-দক্ষিণ কোরিয়া সৃজনশীল সহযোগিতা চালানো। দুই, স্বাস্থ্য, শিল্প ও সামুদ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নকে কেন্দ্র করে চীন-দক্ষিণ কোরিয়া নতুন শিল্পাঞ্চল তৈরি করা। তিন, মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানো ও সুবিধা দেওয়া। চার, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার উত্কৃষ্ট সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে পুঁজি করে চীন-দক্ষিণ কোরিয়া সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়ানো, ইতিবাচকভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন, অ্যানিমেশন, সৃজনশীল ডিজাইন এবং সম্মেলন ও প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের সহযোগিতা চালানো। পাঁচ, সবুজায়নকে ভিত্তি করে উন্নত জীবনযাপন পদ্ধতি অবলম্বনে চীন-দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবেশবান্ধব নগরায়ন করা। মহা পরিচালক পাও জেন ইউয়ু'র ব্যাখ্যা অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ায় আগাম পরিচিতিমূলক সেমিনারের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় পার্কটির কিছু জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে এবং স্বাস্থ্য ও চিকিত্সা শিল্পের সহযোগিতায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। পাও জেন ইউয়ু বলেন,

বর্তমানে তুলনামূলকভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নসেই ডেন্টাল হাসপাতাল প্রকল্পটি খুবই উন্নত। দন্ত চিকিত্‌সার ক্ষেত্র এ প্রতিষ্ঠানটি নেতৃত্ব দিচ্ছে। পরবর্তীতে শিল্পপার্কে এ প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করা হবে। চীন হার্ডওয়্যার প্ল্যাটফর্মও প্রতিষ্ঠা করবে। এ ছাড়া আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার কিউংপুক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সুন ছুন হিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়, দ্যাগু'র কয়েকটি চিকিত্সা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বর্তমানে প্লাস্টিক সার্জারি ও দাঁতের চিকিত্সাসহ হাই-এন্ড প্রকল্পে সহযোগিতা করা হবে। আমরা চীন-দক্ষিণ কোরিয়া স্বাস্থ্য ও চিকিত্সা সেবার প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা করছি।

চীন-দক্ষিণ কোরিয়া সৃজনশীল শিল্পপার্ক চালুর পর দেশটির সরকারি বিভাগ ও সংস্থা, বাণিজ্য সমিতি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। চলতি বছরের ২১ অক্টোবর ছিং তাও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা অঞ্চলের প্রশাসন কমিটি দক্ষিণ কোরিয়ার ভূমি ও হাউজিং করপোরেশন (এলএইচ)-এর সঙ্গে 'যৌথভাবে চীন-দক্ষিণ কোরিয়া কম্পোজিট মেট্রো প্রকল্পের সহযোগিতা উন্নত করার চুক্তি' স্বাক্ষর করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন নগর উন্নয়নের পরিকল্পনা অনুযায়ী সবুজায়নকে ভিত্তি করে বসবাস ও কর্মসংস্থানের উপযুক্ত আধুনিক প্রতিষ্ঠা করা হবে। ছিং তাও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক অঞ্চলের দক্ষিণ কোরিয়ায় সহযোগিতা বিভাগের প্রধান চিন মিং তোং বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশসহ সফটওয়্যার শিল্পে দক্ষিণ কোরীয় প্রতিষ্ঠানের চাহিদা বেড়েছে। ফলে শিল্পপার্কের অনেক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শিল্পপার্কে সরকারের পক্ষ থেকে অর্থায়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত সমর্থনসহ প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারলে তা দু'পক্ষের উন্নতি নিশ্চিত করবে। চিন মিং তোং বলেন,

হার্ডওয়্যার শিল্পে কোরীয় প্রতিষ্ঠানের সুনাম রয়েছে। কোনো কোনো দক্ষিণ কোরীয় শিল্পপতি নিজেদের সন্তানদের চীনে লেখাপড়া করাতে চান। কিন্তু দক্ষিণ কোরীয় প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যারের উপরও গুরুত্ব দেয়। আমরা নীতি ও আইনগত ব্যবস্থা সুসংহত করছি, আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করছি। একটি স্বচ্ছ ও মানসম্পন্ন ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে তাদের চিন্তা দূর করছি এবং সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি তারা এখানে পুঁজি বিনিয়োগ করবে।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040