Web bengali.cri.cn   
পশু-পাখিকে রাষ্ট্রের জাতীয় প্রতীক হিসেবে নির্ধারণের বিচিত্র কারণ
  2015-11-16 19:03:28  cri

লোকেরা অনেক সময়ই কোনো পশু বা পাখির কিছু শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্যকে নিয়ে নিজেদের উত্সাহিত করে থাকে।

যদি একটি পশু বা পাখি একটি দেশ বা একটি জাতির প্রতীক হয়, তাহলে আপনার মনে কি কি বিষয় ভেসে উঠবে? এশিয়া উপ-মহাদেশের হাতি, না কি আফ্রিকার তৃণভূমির চিতাবাঘ, না কি আমেরিকার আকাশে ওড়া ঈগল?

কেউ কেউ বলেন, ব্রিটেনের প্রতীক হিসেবে অভিজাত সিংহের কথা বলতে হয়। আর কেউ কেউ মনে করেন, ষাঁড়ই হলো ব্রিটেনের প্রতীক।

সত্যি, কোনো পশু বা পাখিকে দেশের প্রতীক হিসেবে বাছাই করা খুব কঠিন এবং তা মাথা ব্যথার ব্যাপার।

আসলে আমরা ব্রিটেনের রাজকীয় ব্যাজ থেকে এই প্রশ্নের উত্তর পেতে পারি।

ব্রিটেনের রাজকীয় ব্যাজে দু'টি পশুর ছবি আছে। একটি হলো একশিংওয়ালা ঘোড়া, আর তা স্কটল্যান্ডের প্রতীক। আরেকটি হলো সিংহ, তা ইংল্যান্ডের প্রতীক।

মূলত একশিংওয়ালা এই ঘোড়া হলো গ্রীক ও ল্যাটিন পুরাণে বর্ণিত কাল্পনিক একশিংওয়ালা ঘোড়া।

এ পশু নির্ভেজাল, আনন্দ, গর্ব, স্বাধীন ও সাহসের প্রতীক। আর লোকেরা মনে করেন, এই পশুর মাথায় যে শিঙ, তা দিয়ে সব ধরনের রোগের চিকিত্সা করা যায়।

স্কটল্যান্ডের জনগণের কাছে এই পশুর আভিজাত্য এবং গুণাবলী দিয়ে নিজ জাতির প্রতিনিধিত্ব করা খুব ভালো একটি ব্যাপার।

আর আরবের লোককাহিনী 'আরব্য উপন্যাস'-এ লেখা আছে, এই একশিংওয়ালা ঘোড়া খুব শক্তিশালী এক ধরনের পশু। এ পশু মাংস খায় না। তবে তার একটি শক্তিশালী শত্রু আছে, তা হলো সিংহ।

উপন্যাসে এই ঘোড়ার শিং গাছে ঢুকে যায় এবং সিংহ তাকে হত্যা করে।

এই কাহিনী এখনকার ব্রিটিশদের কাছে একটু হাস্যকর এবং বিদ্রূপাত্মক। কারণ এখন ইংল্যান্ডের সরকারি প্রতীক হলো সিংহ।

আসলে পাশ্চাত্য দেশগুলোতে সিংহের ভাবমূর্তি দিয়ে নিজ দেশ বা রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করা দেশের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বলা হয়ে থাকে, সিংহ হলো সব পশুর রাজা। তাহলে বলা যায়, সব পাখির রাজা-ঈগল।

সিংহের মত ঈগলও পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে প্রতীক হিসেবে খুব বেশি ব্যবহার করা হয়। বলা হয়ে থাকে, 'ঈগলের মত উচ্চ আকাশে উড়ে বেড়াও'।

পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে উচ্চ আকাশে ঈগলের ওড়া, তার গতি এ সবকিছুরই বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে। আর ঈগলও পাশ্চাত্য দেশগুলোতে সবচেয়ে জনপ্রিয় পাখি

এবং সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বকারী পাখিদের অন্যতম।

রাশিয়া সবসময় রাষ্ট্রীয় ব্যাজ ও সরকারি প্রতীক হিসেবে দু'মাথার ঈগল ব্যবহার করে।

দু'মাথার ঈগলের ভাবমূর্তি বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য থেকে শুরু হয়। দেশের ভৌগলিক পরিবর্তন প্রতিফলনের জন্য বাইজান্টাইন রাজ্যসমূহ রোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহ্য এক মাথার ঈগলকে দু'মাথার ঈগলের ভাবমূর্তিতে পরিণত করে। মানে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশ অতিক্রম করে।এখন দু'মাথার ঈগল রাশিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রতীকের অন্যতম।

আর জার্মানিও ঈগলের খুব ভক্ত ও সমর্থক। শক্তি ও সাহসের প্রতিনিধিত্বকারী কালো বাজপাখি সবসময় জার্মানিদের সবচেয়ে পছন্দের প্রতীক। ইতিহাসে জার্মানিও দীর্ঘসময় ধরে দু'মাথার ঈগল নিজ দেশের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে।

এ ছাড়া স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে নেয়ার জন্য লড়াই করেছিল। ঈগলও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতীক।

বাল্ড ঈগল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী পাখি। তা হলো আমেরিকা মহাদেশের বিশেষ পাখি। এর চরিত্র খুব হিংস্র প্রকৃতির, শরীরও অনেক বড়।

আমেরিকা মহাদেশে থাকা রেড ইন্ডিয়ানরা বাল্ড ঈগলকে পবিত্র পাখি হিসেবে দেখেন।

আর কিছু কিছু রেড ইন্ডিয়ান এই ঈগলের পালককে পুরস্কার হিসেবে মনে করেন।

অনেকেই আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে পছন্দ করেন, তা হলো- যদিও বাল্ড ঈগল জন্মের সময় দেখতে অনেক কুত্সিত এবং অতি সাধারণ, তবে পাঁচ বছর পর তার মাথা ও লেজের পালক সাদা রং-এ পরিণত হয়। আর যখন এটি আকাশে ওড়ে তখন তা দেখতে ভীষণ সুন্দর ও চমত্কার।

আসলে বাল্ড ঈগল কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী পাখিতে পরিণত হয়েছে, এর অনেক কাহিনী আছে। কেউ কেউ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাল্ড ঈগল যুদ্ধের মাঠে আসে, তার কিচির মিচির শব্দ ঠিক যুদ্ধজয়ের সঙ্গেই সম্পর্কিত। তাই লোকেরা তার কিচির মিচির শব্দকে বলেন 'স্বাধীনতার শব্দ'।

তবে সব মার্কিন নাগরিক বাল্ড ঈগলের ভক্ত নন। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জনকদের মধ্যে একজন

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন স্পষ্টভাবেই বাল্ড ঈগলকে দেশটির প্রতিনিধিত্বকারী পাখি হিসেবে নির্ধারণের নিরোধিতা করেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই পাখিটি পচা মাংস খায়, এবং অন্য পশু-পাখির কাছ থেকে খাবার ডাকাতি করে। এটি খুব অভিজাত পাখি নয়, বরং এটি খুব অলস ও ভীরু প্রকৃতির। ফ্রাঙ্কলিন 'টার্কি'কে দেশের প্রতিনিধিত্বকারী পাখি হিসেবে নির্ধারণ করতে চাইতেন।

ফ্রাঙ্কলিনের মতে, দেশের প্রতিনিধিত্বকারী পশু বা পাখির বিষয়ে ভিন্ন মত থাকতেই পারে। যেমন কানাডায় বিবর (এক ধরণের লোমশ জন্তু, যা জলে ও স্থলে বাস করে) দেশটির প্রতিনিধিত্বকারী পশু। কারণ বিবর কানাডার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ছিল। ১৭ থেকে ১৮ শতাব্দীতে অনেক ইউরোপীয়রা বিবরের চামড়া দিয়ে টুপি বানাতেন। তাই অনেক লোকজনই সেসময় বিবরের ব্যবসা করেন।

এ ছাড়া বিবরের চরিত্র খুব স্নেহশীল, জলে ও স্থলে থাকতে পছন্দ করে, এছাড়া বিবরের সাঁতার কাটার ধরণও অনেক মজার।

তাই ২০ শতাব্দীর ৭০ দশকে কানাডা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বিবরকে দেশের প্রতীক হিসেবে নির্ধারণ করে।

তবে কানাডার কিছু কিছু নাগরিক বিবরকে পছন্দ করেন না। তাদের মতে, এ ছোট পশু একদম অভিজাত নয়। এটি শুধুই দাঁতে সমস্যা আছে এমন এক রকমের ইঁদুর। তারা সরকারের কাছে শক্তি ও সাহসের প্রতিনিধিত্বকারী পশু হিসেবে মেরুভল্লুককে দেশের প্রতীক হিসেবে নির্ধারণের দাবি জানান।

আসলে ইতিহাস থেকে জানা যায়, একটি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী পশু বা প্রাণী নিয়ে ভিন্ন লোকের ভিন্ন মতামত ছিলো এবং এখনও রয়েছে।

বর্তমান সমাজে দেশের প্রতিনিধিত্বকারী পশু বা প্রাণী বাছাই করা ইতোমধ্যেই দেশের সব জনগণের একটি উত্সবে পরিণত হয়েছে।

যাইহোক, প্রতীকের পাশাপাশি আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গোটা বিশ্বের উন্নয়নের সাথে সাথে নিজের উন্নয়ন করা এবং এ উন্নয়নের সঙ্গে দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে রক্ষা করা। ঐতিহ্য ও উন্নয়ন দু'টোই একটি দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।

(ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040