1113yin
|
এবারের সম্মেলনটি 'ভারত-আফ্রিকা ফোরাম শীর্ষ সম্মেলন'-এর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সম্মেলন। ভারত ছাড়া আফ্রিকার ৫৪টি দেশের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ৪১টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারের শীর্ষ নেতা। এদের মধ্য উল্লেখযোগ্য হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা, জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট, আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবার্ট মুগাবে, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ বুহারি এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করছেন।
ভাষণে মোদি বলেছেন, ভারত ও আফ্রিকার মধ্যে গভীর ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগও ঘনিষ্ঠ। বর্তমানে দু'পক্ষ বিরাট 'ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড'-এর অধিকারী। দুই অঞ্চলের সহযোগিতার সুপ্ত শক্তিও রয়েছে। মোদি বলেছেন, ভারত আফ্রিকার সমৃদ্ধি ও একীকরণে সহায়তা দিতে চায়। তিনি বলেন,
আফ্রিকা অঞ্চলকে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক অংশীদারে পরিণত করার জন্য আমরা আরো চেষ্টা করব এবং একটি সমৃদ্ধ, সম্পূর্ণ ও সংহতির আফ্রিকা প্রতিষ্ঠায় আপনাদের ইচ্ছাকে সমর্থন করব। আমরা কায়রো থেকে কেপটাউন পর্যন্ত, মারাকেশ থেকে মোম্বাসা পর্যন্ত; অবকাঠামো, বিদ্যুত্, কৃষি ও সেচকাজ উন্নয়ন করতে, আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদের মান বাড়াতে এবং আফ্রিকায় শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠায় সাহায্য দেব।
মোদি প্রতিশ্রুতি দেন যে, আগামী ৫ বছরে ভারত আফ্রিকার দেশগুলোকে নতুন দফার ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অল্প সুদের ঋণ সহায়তা দেবে, যাতে অবকাঠামো, গণপরিবহন, দূষণমুক্ত জ্বালানি সম্পদ, কৃষি ও নির্মাণ শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নে তা ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া ভারত আফ্রিকার জন্য ৬০ কোটি মার্কিন ডলারের সাহায্য দেবে। এর মধ্যে ১০ কোটি ভারত-আফ্রিকা উন্নয়ন তহবিলে বরাদ্দ দেওয়া হবে, ১ কোটি মার্কিন ডলার ভারত-আফ্রিকা স্বাস্থ্য তহবিলে বরাদ্দ দেওয়া হবে। ২০০৮ সালে প্রথম 'ভারত আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলন' আয়োজন করার পর থেকে, ভারত আফ্রিকার জন্য ৭৪০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ এবং ১২০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য দিয়েছে।
অর্থনৈতিক ও সহযোগিতা উন্নয়ন ছাড়া, মোদি জাতিসংঘে সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদিতে সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ভারতের জলবায়ু পরিকল্পনা জোরদার করেছেন। মোদি বলেন,
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভারত ও আফ্রিকা দু'অঞ্চলই অনেক চেষ্টা করেছে। এক্ষেত্রে ২০২২ সালে ১৭৫ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুত্ উত্পাদনের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করবে ভারত। ২০৩০ সালে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ ২০০৫ সালের তুলনায় ৩৩-৩৫ শতাংশ কমাবো। এ ছাড়া আমরা আশা করছি আফ্রিকার সঙ্গে দূষণমুক্ত জ্বালানি সম্পদ, টেকসই পরিবেশগত উন্নয়ন, গণ-পরিবহন এবং অভিযোজিত কৃষি জলবায়ুসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা গভীরতর করতে চাই।
অংশগ্রহণকারী আফ্রিকান দেশগুলোর নেতারা এবারের শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে ভারত-আফ্রিকার ঐতিহাসিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক জোরদার করা, একে অপরের সহযোগিতার মাত্রা বাড়ানো, শিক্ষা আদান-প্রদান ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ জোরদার এবং দারিদ্র্য ও বৈষম্য বিমোচনের আশা প্রকাশ করেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা বলেন,
বর্তমানে ভারত-আফ্রিকার সম্পর্ক দু'পক্ষের উন্নয়ন জোরদারের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। এবারের শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্যের মতো, ভারত-আফ্রিকা অংশীদারিত্বের সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্য হলো একটি গতিশীল ও পরিবর্তিত উন্নয়নসূচি প্রণয়ন করা। আমাদের নির্ধারিত সহযোগিতামূলক ক্ষেত্রে নতুন যুগান্তকারী পয়েন্ট খুঁজে বের করতে হবে, যাতে আমাদের দুই অঞ্চলের জনগণ উন্নত জীবনযাপন করতে পারে।
উল্লেখ্য, ভারত-আফ্রিকা শীর্ষ নেতাদের সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আফ্রিকার বেশ কিছু নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বিভিন্ন পক্ষ জাতিসংঘের সংস্কার জোরদার করা, সন্ত্রাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বাণিজ্যিক ও পুঁজি বিনিয়োগের সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
(প্রেমা/তৌহিদ)