1109huanqiu
|
১৩ সেপ্টেম্বর ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন জর্জ। তার বন্ধু বলেছেন, দু' বছর আগেই তার মস্তিষ্কে ক্যান্সার দেখা দেয়, তবে তার দোকানে তিনি মৃত্যুর দু'সপ্তাহ আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন।
জর্জের কাহিনী খুব উত্সাহের। তিনি অন্যকে নিজের জীবনী বলতেও পছন্দ করেন। ১৯৩৪ সালে জর্জ ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় মার্সেই শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্মরণ করে বলেন, তার পরিবারে কোনো দর্জি নেই। সবাই স্থপতি, আইনজীবী, ডাক্তার, শুধু তিনি ব্যতিক্রম। ১৫ বছর বয়স থেকেই তিনি দর্জির কাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, 'কেন আমি এ চাকরি বাছাই করেছি? কারণ আমি সুন্দর কাপড় পরতে পছন্দ করি'।
২৭ বছর বয়সে জর্জ তার সব সঞ্চিত অর্থ অর্থাত মোট ৪ হাজার ডলার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তখন তিনি তার মার্কিন বান্ধবীর বাসায় থাকেন। বান্ধবীর বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর তাকে প্রত্যাখ্যান করেন তার বান্ধবী। বান্ধবীর হিসেবের টাকাও ফেরত নিতে পারেন নি তিনি।
২০১০ সালে যখন তিনি ওয়াশিংটোন পোস্টে সাক্ষাতকার দেন, তখন তিনি স্মরণ করে বলেন, তখন আমি কোনো চাকরি খুঁজে পাই না। আমি একজন অভিবাসী, থাকার জায়গা নেই, স্নান করার জায়গা নেই, রাস্তায় শুয়ে থাকি। তখন আমার ওজন শুধুমাত্র ৩৫ কেজি।
পরে তিনি একটি বনডটকো নামের কোম্পানির দর্জির পদ অর্জন করেন। জর্জ খুব নোংরা এবং দুর্গন্ধযুক্ত কাপড় পরে কোম্পানির কার্যালয়ে যান। তখন ম্যানেজার বলেন, তাড়াতাড়ি এ ভবঘুরে লোককে বাইরে বহিস্কার করো! তবে কোম্পানির অন্য একজন ম্যাডাম তাকে অনেক সহানুভূতি দেখান এবং জর্জকে নিজের বাসায় আমন্ত্রণ জানান। ওই ম্যাডামের বাসায় জর্জ স্নান করেন এবং এ ম্যাডাম জর্জকে একটি চাকরিও দেন।
কয়েক মাস পর জর্জ সাশ্রয় করেন ৪শ' মার্কিন ডলার। তিনি এসব টাকা দিয়ে একটি ছোট ঘর ভাড়া করেন এবং একটি সেলাই মেশিন কিনে নিজের কাজ শুরু করেন। তিনি প্রতিদিন ভোর ৪ টা ৫টা পর্যন্ত কাজ করেন। খুব বেশি ক্লান্তি বোধ করলে তিনি মেঝেতে কিছুক্ষণ ঘুমান, তারপর আবার কাজ শুরু করেন।
হঠাত্ একদিন মার্কিন কংগ্রেসের এক সদস্য তার দোকানে প্রবেশ করেন এবং তার একজন ক্রেতা হন। জর্জের সেলাই কাজ সম্বন্ধে অনেক সন্তোষ হওয়ায় কংগ্রেসের এক সদস্য জর্জকে তখনকার যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জনসনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ১৯৬৩ সালের নভেম্বর মাসে, কেনেডি হত্যার পর লেন্ডন বি. জনসন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করেন। তখন থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের সম্পর্ক শুরু করেন জর্জ।
জর্জের সেলাইয়ের দোকান হোয়াইট হাউসের কাছে একটি রাস্তায় অবস্থিত। দোকানের নাম 'জর্জ দ্য প্যারিসের সেলাই দোকান'। দোকানে ঝুলানো বিভিন্ন মেয়াদের মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জর্জের ছবি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। সর্বশেষ ছবি তোলা হয়েছে গত বছরে। ছবিতে হোয়াইট হাউসে জর্জ ও ওবামা একসাথে দাঁড়িয়ে আছেন। দু'জনের মুখে মৃদুহাসি।
সব পরিচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে জর্জ সবচেয়ে পছন্দ করেন রোনাল্ড রিগান ও জর্জ ডাব্লিউ বুশকে। তিনি প্রশংসা করে বলেন, তারা সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে অমায়িক। রিগান কথা বলতে অনেক পছন্দ করেন। তিনি ও বুশ দু'জনই বস্ত্রের গুণগতমান উপভোগ করতে পারেন। রিগান আমাকে মিষ্টিও খাওয়ান।
জর্জের চোখে নিক্সন খুব বন্ধুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, নিক্সন সবসময় আমার খোঁজ খবর নেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রকে পছন্দ করি কি না এমন কথা জিজ্ঞেস করেন। কার্টার খুব কম কথা বলেন। ফোর্ড আমার ছোটখাটো ফিগার নিয়ে ঠাট্টা করেন।
জর্জ আরো বলেন, সবচেয়ে অবন্ধুত্বপূর্ণ হলো বিল ক্লিন্টন। ক্লিন্টনের দাবি অনেক বেশি, মানুষের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া খুব শান্ত এবং তিনি সবসময় অনেক অনেক ব্যস্ত, আমাকে উপেক্ষা করেন।
ফোর্ড জর্জকে অনেক পছন্দ করেন এবং সবসময় তার প্রশংসা করেন। ফোর্ড বলেন, যখন আমি কংগ্রেসে ছিলাম, তখন চেহারা আমার কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না। তবে যখন আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট হই, তখন আমাকে চেহারা এবং কাপড়-চোপড়ের ওপর গুরুত্ব দিতেই হয়। জর্জ আমাকে একজন প্রেসিডেন্টের মত দেখতে-এমন করে তৈরি করেছেন। আমার স্ত্রী সবসময় আমাকে বলেন, তুমি নিজের চেহারাকে আরো সুন্দর করবে। তাই আমি জর্জের কাছে সাহায্য নিয়েছি, জর্জের তৈরি কাপড় পরার পর আমার স্ত্রীও অনেক খুশি হয়েছেন।
২০১১ সালে প্রকাশিত এক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র 'যুক্তরাষ্ট্রের দর্জি: জর্জ দ্য প্যারিসের জীবনী'তে জর্জ বলেন, আমি অনেক বড় বড় লোকদের সেবা দিয়েছি, যেমন প্রেসিডেন্ট। আমি বলতে চাই, যদি আপনি নির্বাচনে জয়ী হতে চান, তাহলে আমার তৈরি কাপড় পরতে হবে। দেখেন, বুশ তো নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। কারণ তিনি আমার তৈরি কাপড় পরেন।
হয়তো আপনারা জানতে চান, জর্জকে দিয়ে একটি স্যুট তৈরি করতে কত টাকা লাগবে। এর মূল্য হলো ২৫০০ থেকে ৪৫০০ মার্কিন ডলার। জর্জের মতে, খুব দুঃখের ব্যাপার হলো এখন দর্জির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সেলাই এক ধরনের শিল্প, কিন্তু তার মৃত্যু হতে চলছে। তিনি আশা করেন, তরুণ-তরুণীরা এ শিল্পকে আবার পুনরুদ্ধার করবেন।
(ফেইফেই/টুটুল)