Web bengali.cri.cn   
চলুন জানি, বিশ্বনেতারা কোন ব্র্যান্ডের মোবাইলফোন ব্যবহার করছেন
  2015-11-02 16:20:50  cri


বর্তমানে মোবাইলফোন যেন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। খাবারের টেবিলে, বাসে, বাথরুমে, ঘুমানোর সময় এমনকি সবসময় মোবাইল ফোন আমাদের সাথেই থাকে। আপনি কি মোবাইলফোন ছাড়া বর্তমান জীবন কল্পনা করতে পারেন? আসলে মোবাইলফোন, বিশেষ করে স্মার্ট ফোন সত্যি আমাদের জীবনে অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে।

আসলে আমরা জানতে চাই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা কোন ধরনের ফোন ব্যবহার করেন? তারা ফোন বাছাইয়ের সময় কি কি উপাদান বিবেচনা করেন?

হ্যাঁ, সত্যি, তারা আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের মত করে ততটা স্বাধীনভাবে, ইচ্ছাকৃতভাবে ফোন বাছাই করতে পারেন না। কারণ তাদের ফোনে বিশেষ অনেক ব্যবস্থা থাকতে হয়।

ব্ল্যাকবেরি আগে বিশ্বের স্মার্ট ফোন বাজারের প্রধান ব্র্যান্ড ছিল। ২০০৬ সালে ব্ল্যাকবেরি ফোন মার্কিন বাজারে ৪৮ শতাংশ বাজার দখল করে। তখন যুক্তরাষ্ট্রে, প্রেসিডেন্ট থেকে সাধারণ লোকজন পর্যন্ত, অনেকেই ছিলেন ব্ল্যাকবেরির ভক্ত।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যাপলসহ অন্যান্য স্মার্টফোনের তুলনায় ব্ল্যাকবেরি ততটা জনপ্রিয় নয়। বিশ্ব বাজারে তার উপস্থিতিও অনেক কমে গেছে।

তবে ব্ল্যাকবেরি থেকে খুব সহজেই ই-মেইল পাঠানো এবং ইমেইল চেক করা যায়।সহজেই এই সেটের তথ্য হ্যাক করা যায় না। নেট নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে কিছু পাশ্চাত্য দেশের নেতারা ব্ল্যাকবেরি ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।

যেমন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হলেন ব্ল্যাকবেরির সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যবহারকারী।

ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বার বার এমন খবর প্রচার হয় যে, নিরাপত্তার কারণেই ওবামা বাধ্য হয়ে ব্ল্যাকবেরি ফোন ব্যবহার করবেন না।

২০১৪ সালের মার্চ মাসে একটি খবরে বলা হয়, হোয়াইটহাউস স্যামসাং ও এলজির স্মার্টফোন নিয়ে নিরাপত্তা পরীক্ষা করেছে। তবে এসব পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল এখনো জানা যায় নি। তাই এখন পর্যন্ত ওবামা ব্ল্যাকবেরি ছেড়ে দেন নি।

প্রায় ছয় মাসে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ওবামা বলেছিলেন, তিনি এখনো ব্ল্যাকবেরি ব্যবহার করছেন। তবে তাকে সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে ফোনে রেকর্ডিং-এর ব্যবস্থা আছে, আমি তা ব্যবহার করতে পারি না। তাই অনেক নতুন প্রযুক্তি উপভোগের সুযোগ আমি কখনই পাই নি। মূলত নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আসলে ওবামা ও ব্ল্যাকবেরির 'প্রেম' দীর্ঘদিনের। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ওবামার একটি ব্যক্তিগত ব্ল্যাকবেরি ফোন ছিলো। তখন ব্ল্যাকবেরি ফোনের প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে। যেন একটি মিনি কম্পিউটারের মত, তা থেকে ই-মেইল পাওয়া এবং পাঠানো যায়, ওয়েবসাইট ভিজিট করা যায়, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দেওয়া সব সেবা উপভোগ করা যায়। এ ফোনের মধ্য দিয়ে ওবামা ব্লগে লিখতে এবং বিভিন্ন তথ্য পেতে পারেন।

২০০৯ সালে যখন ওবামা মার্কিন প্রেসিডেন্ট হন, তখন নিজের ব্যক্তিগত ব্ল্যাকবেরি ফোন সঙ্গে রাখার জন্য তিনি বাধ্য হয়ে হোয়াইট হাউসের বিশেষ গুপ্তচরের সঙ্গে লড়াই করেন। ওবামা বলেন, তারা আমার হাত থেকে আমার প্রিয় ফোন নিতে চান। ওবামা চান, নিজের ফোন তিনি কাছে রাখবেন।

অবশেষে দু'পক্ষ একটি মতে পৌঁছান। তাহলো ওবামা অব্যাহতভাবে ব্ল্যাকবেরি ফোন ব্যবহার করতে পারবেন, তবে তার পুরনো ফোনে একটি বিশেষ তৈরি এবং বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা লাগানো লাগানো হবে। যাতে আড়িপাতা বা তার ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়া এড়ানো যায়।

রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্বন্ধে খুব ভালো জানেন। তিনি নিজেও অ্যাপল ফোনের ভক্ত। অনেক সংবাদের ছবিতে দেখা যায় তিনি অ্যাপল ফোন ব্যবহার করেন।

চিলির তথ্য মাধ্যমের খবরে প্রকাশ, সে দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট সেবাস্টিয়ান পিনেরার একটি ব্ল্যাকবেরি এবং একটি অ্যাপলের ফোন আছে। ফোন দু'টির বিশেষ প্রোগ্রাম ও সফ্টওয়ার আছে। নিরাপত্তার কারণেই প্রেসিডেন্ট ভবন ফোনের মডেল জানাতে অস্বীকার করেছে।

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্ডেজ কির্চনার টুইটারে অনেক জনপ্রিয়। তিনি প্রায়ই ফোন দিয়ে টুইটার ব্যবহার করেন? হ্যাঁ, তিনি আইফোন ব্যবহার করেন।

আর থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক শিনাওয়াত্রা মোবাইলফোন ব্যবহার করতে অনেক পছন্দ করেন।

তার ফেসবুকে একটি ছবি আছে। তার টেবিলে পাঁচটি ফোন আছে। এর মধ্যে একটি হলো আইফোন, আরেকটি হলো সাদা রং-এর নকিয়া লুমিয়া ৯২০।

আর লন্ডন অলিম্পিক গেমসের সময় তথ্য মাধ্যমের তোলা ছবি থেকে জানা যায়, ব্রিটেনের প্রিন্স উইলিয়াম আইফোন ব্যবহার করেন। আর তার ছোট ভাইও আইফোনের ভক্ত।

নিজের ফোন আছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দীর্ঘকাল ধরে এমন কথা অস্বীকার করেন।

অনেকেই জানেন যে, পুতিন আগে কেজিবি'র একজন বিশেষ গুপ্তচর ছিলেন। পুতিন মোবাইলফোনের ঝুঁকি স্পষ্টভাবে জানেন। ২০১০ সালে পুতিন বলেছিলেন, যদি তার কাছে ফোন থাকে, তাহলে তাতে সবসময় রিং হবে।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টেলিযোগাযোগ পদ্ধতি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পুতিন নিজের স্টাইলও পরিবর্তন করেছেন। ২০১২ সালে তথ্য মাধ্যমের তোলা ছবি থেকে জানা যায়, তখন তিনি রাশিয়ার নিজস্ব ব্র্যান্ডের জিপিএস মোবাইলফোন এমটিএস- গ্লোনাস ৯৪৫ ব্যবহার করেছিলেন।

এখন আমরা ফ্রান্সের কথা বলি। ২০১৩ সালে ফ্রান্স সরকার দেশটির উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ ফোন তৈরি করে। প্রতিটি ফোনের দাম প্রায় ৩৩০০ ইউরো।

তবে নিরাপদ পাসওয়ার্ডের কারণে ফোন করতে ৩০ সেকেন্ড সময় লাগবে। কিছু কিছু কর্মকর্তা মনে করেন তাতে অনেক অসুবিধা হয়, তাই তারা তা ব্যবহার করতে অপছন্দ করেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্ড শপথগ্রহণের পরও নিজের ব্যক্তিগত স্মার্টফোন ব্যবহার করেন।

আধুনিক যুগে মোবাইলফোন শুধুই একটি যোগাযোগের যন্ত্র নয়, বরং তার বিভিন্ন কাজ আছে। মাঝে মাঝে একটি দেশের নেতা মোবাইলফোনকে উপহার হিসেবে অন্য দেশের নেতাকে দেন।

যেমন ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার সময় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের চীনের উত্পাদিত মোবাইলফোন উপহার হিসেবে দেন।

এই বিশেষ রাষ্ট্রীয় উপহার হলো চীনের জেডটিই মোবাইফোন কোম্পানির ৪জি ফোন গ্রান্ড এস টু। এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ মোবাইলফোনের অন্যতম বলা যায়। তা চীনের মোবাইলফোন শিল্পের মানের প্রতিফলন।

আগে চীনের রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে সাধারণত রেশম, চীনামাটি, শিল্পকর্ম এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী জিনিস প্রদান করা হতো।

দেশের নিজস্ব ব্রান্ডের মোবাইলফোনকে রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে অন্য দেশের নেতাকে দেওয়া, তা ইতিহাসে প্রথম বারের মতো।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, তার মানে চীনের নেতা আশা করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের মোবাইলফোন জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

(ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040