1101jiankang
|
বিষয়টি নিয়ে গবেষণাও কম হয়নি। গবেষকরা জানতে চেয়েছেন কোন পরিবেশে বসবাস করলে আমাদের শরীর ও মন তুলনামূলকভাবে বেশি সুস্থ থাকে। আমরা আজকের স্বাস্থ্য ও জীবন অনুষ্ঠান সে সব গবেষণা যেসব তথ্য উঠে এসেছে, মূলত সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
পার্কের কাছাকাছি বাসস্থান থাকা ভাল
যে-কোনো পার্ক বা উদ্যানের কাছাকাছি বসবাস করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। পার্ক বা উদ্যানে প্রচুর সবুজ গাছপালা থাকে এবং এ ধরনের জায়গার বায়ুর গুণগত মানও তুলনামূলকভাবে ভাল থাকে। তা ছাড়া, পার্ক বা উদ্যান এলাকায় কোলাহলও কম থাকে। জাপানি গবেষকরা বলছেন, উদ্যানের কাছাকাছি থাকলে মানুষের শরীরের রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ে। বিশেষ করে সংক্রামক রোগ থেকে বাঁচতে উদ্যানের কাছাকাছি বসবাস করা যেতে পারে। গবেষকরা বলছেন, শহর পরিকল্পকদের উচিত নতুন আবাসিক এলাকায় প্রচুর সবুজ এলাকা রাখা বা সম্ভব হলে একটি উদ্যান গড়ে তোলা।
সমুদ্রের কাছাকাছি বসবাস করা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল
ইউরোপের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষণা অনুসারে, সমুদ্রের কাছাকাছি অঞ্চলে বাস করা স্বাস্থ্যের জন্য তুলনামূলকভাবে ভাল। কারণ, সমুদ্রের কাছাকাছি থাকলে মানুষের মন-মেজাজ সাধারণত ভাল থাকে। সমুদ্রের কাছাকাছি থাকলে বেলাভূমিতে হাঁটাহাঁটি করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। বিশেষ করে সমুদ্রের গর্জন মানুষের মনকে প্রশান্ত করে তুলতে সক্ষম বলেও গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। আরেকটি কথা, সমুদ্রের কাছাকাছি অঞ্চলের বায়ুর গুণগত মানও তুলনামূলকভাবে ভাল থাকে। সাধারণত এ ধরনের এলাকায় রাসায়নিক দূষণের মাত্রা কম থাকে।
শহরের মূল সড়ক থেকে দূরে থাকা ভাল
শহরের মূল সড়কের কাছাকাছি অঞ্চলে যারা বসবাস করেন, তারা একটা বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন। তারা ঘর থেকে বের হয়েই যাতায়াতের জন্য যানবাহন পেয়ে যান। যাদের নিজেদের গাড়ি আছে, তারাও যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুবিধা পান। কারণ, তাদেরকে অলিগলি অতিক্রম করে মূল রাস্তায় উঠতে হয় না। কিন্তু তাদেরকে কয়েকটি সমস্যাও মোকাবিলা করতে হয়। প্রথমেই বলতে হবে শব্দদূষণের কথা। এ ছাড়াও আছে গাড়ির ধোয়া থেকে সৃষ্ট দূষণ।
গবেষকরা বলছেন, হৃদরোগীদের শহরের মূল সড়কের কাছাকাছি থাকা উচিত নয়। কারণ, যেসব হৃদরোগী মূল সড়কের পাশে বসবাস করেন, তাদের পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে মারা যাওয়ার আশঙ্কা যারা মূল সড়ক থেকে দূরে থাকেন তাদের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি। প্রশ্ন হচ্ছে: যাদের বাসস্থান মূল সড়কের ওপরে বা কাছাকাছি অঞ্চলে অবস্থিত, তারা কী করবেন? শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে তারা দিনের বেলা ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে পারেন। চাইলে জানালায় শব্দ-প্রতিরোধক গ্লাস লাগানো যেতে পারে। আর গাড়ি ধোঁয়া থেকে বাঁচতে জানালার আশেপাশে টবে উদ্ভদ চাষ করা যেতে পারে।
যাদের বাসস্থান মূল সড়কের কাছে, তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতেও পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রতিদিন আদা, পিয়াজ, বেগুন, কালো ছত্রাক, ভূট্টা ও ওট জাতীয় খাবার বেশি খেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। কারণ, এ ধরনের খাবার অতিরিক্ত রক্তচাপ কমাতে এবং রক্তনালীর সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
অফিস ও বাসস্থানের মধ্যে দূরত্ব কম থাকা ভাল
প্রিয় শ্রোতা, আপনার অফিস ও বাসস্থানের মধ্যে দূরত্ব কি খুব বেশি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অফিস ও বাসস্থানের মধ্যে দূরত্ব বেশি হলে ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেড়ে যায়। কারণ, দূরত্ব বেশি হওয়ায় ঘর থেকে অনেক আগে বের হতে হয়। তাড়াহুড়া করে অনেকেই সকালের নাস্তাটা ভালভাবে করেন না বা একেবারেই করেন না। ঘুম থেকে উঠেই কোনোরকমে কাপড় গায়ে দিয়ে ছুট লাগান অফিসের পথে। এই অভ্যাসটা খুবই খারাপ। কারণ, নাস্তা হচ্ছে দিনের সবচে' গুরুত্বপূর্ণ খাবার। এটা বাদ দেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর বলে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। আরেকটি কথা, যাদের বাসা অফিস থেকে বেশি দূরে, তাদের উচিত যথাসম্ভব পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা। নিজের গাড়ি চালিয়ে প্রতিদিন অফিসে যাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়।
বিমানবন্দর ও রেলস্টেশনের কাছাকাছি বসবাসকারীদের স্থুলকায় হবার আশঙ্কা বেশি
সুইজারল্যান্ডের একটি জরিপ অনুসারে, বিমানবন্দর ও রেলস্টেশনের কাছাকাছি যারা বসবাস করেন, তাদের স্থূলকায় হবার আশঙ্কা বেশি থাকে। শব্দদূষণ তাদের শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ৫১৫৬ জনের ওপর জরিপ চালিয়ে বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, কর্কশ শব্দের মাত্রা মাত্র ৫ ডেসিবল বৃদ্ধি পেলে, মানুষের কোমরের মাপ গড়ে ১.৫ সেন্টিমিটার বাড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। সুতরাং, যারা বিমানবন্দর ও রেলস্টেশনের কাছাকাছি অঞ্চলে থাকেন, তাদের উচিত ঘরকে শব্দ-প্রতিরোধ করতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা।
ফাস্ট ফুডের দোকানের কাছাকাছি বাসস্থান না-থাকাই ভাল
মার্কিন মিশিগান গণ-স্বাস্থ্য কলেজের এক জরিপ অনুসারে, ফাস্ট ফুডের দোকানের কাছাকাছি যারা বসবাস করেন, তাদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেড়ে যায়। আসলে ফাস্ট ফুড ও স্থুলতার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। আর স্থুলতা স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ায়। ফাস্ট ফুডের দোকান কাছাকাছি থাকলে, ফাস্ট ফুড খাওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে। অবশ্য যারা লোভ সামলাতে পারেন, তাদের জন্য কোনো সমস্যা নেই।
(ওয়াং হাইমান/আলিম)