1028music
|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এ অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। এখন শুরু করছি আজকের 'সুরের ধারায়' অনুষ্ঠান। আপনাদের সাথে আছি আমি সুবর্ণা।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো চীনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চরের একজন বিখ্যাত গায়িকার সঙ্গে। তার নাম শিয়ে আন ছি।
১৯৭৭ সালের ১৩ মার্চ হংকংয়ে শিয়ে আন ছি জন্মগ্রহণ করেন। তার মামা-মামি গান খুব পছন্দ করে। তাদের প্রভাবে খুব ছোট থেকেই তিনি গানের প্রতি বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কিন্তু তখন তিনি শুধু ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত জানতেন। ছয় বছর বয়সে শিয়ে আন ছি পিয়ানো শিখতে শুরু করেন। পরে তিনিও গিটার বাজাতে শিখেছেন। বড় হওয়ার পর তিনি ক্রমে ক্রমে পপ সঙ্গীত সম্পর্কে জানেন এবং পপ সঙ্গীত খুব পছন্দ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তিনি বিভিন্ন গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর সিয়ে আন ছি পেশা হিসেবে পিয়ানো শিক্ষকের কাজ বেছে নেন। গান শিখানোর চেয়ে তিনি গান গাইতেই পছন্দ করতেন বেশি। সৌভাগ্যবসত তার সঙ্গীত প্রতিভা আবিষ্কৃত হয়।
২০০৫ সালে সিয়ে আন ছি তার প্রথম অ্যালবাম 'Kay one' প্রকাশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে একজন পেশাদর গায়িকা হিসেবে সঙ্গীত জীবন শুরু করেন। পরের বছর সিয়ে আন ছি অনেক অ্যালবাম প্রকাশ করেন এবং অনেক পুরস্কার পান।
হংকংয়ে বড় হওয়া সিয়ে আন ছি অনেক ক্যান্টোনিজ গান গেয়েছেন। হংকংয়ের জন্য তার গানগুলোতে বিশেষ ভাবাবেগ প্রকাশিত হয়েছে। হংকং সামাজের সমৃদ্ধি ও পরিবর্তন, শহরবাসীর জীবনধারা, আনন্দ-দুঃখ সবই তার ক্যান্টোনিজ গানে প্রতিফলিত হয়েছে। ক্যান্টোনিজ গান ছাড়া তার গাওয়া ম্যান্ডারিন গানগুলোও বেশ শ্রতিমধুর।
প্রিয়শ্রোতাবন্ধুরা, এখন আমরা একসঙ্গে সি আন ছি'র গাওয়া বেশ কিছু গান শুনবো। আজকের অনুষ্ঠানের প্রথম গানের নাম 'স্মৃতির আড়াল'। এই গানে বন্ধুর সাথে মৈত্রীময় সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। প্রেম থেকে বিচ্যুত হওয়ার পর আপনি কি প্রেমিককে পরিত্যাগ করার কথা ভুলে যাবেন। তখন আপনি কি আপনার বন্ধুর কাছে যাবেন? আপনারা কি এক সঙ্গে বসে কফি খেতে খেতে কথা বলবেন? চলুন গানটি শুনি।
বন্ধুরা, গানটি আপনারা কি পছন্দ করেছেন? আশা করি আপনাদের ভালো লাগেছে। পরের গানের নাম 'সুখের সম্ভাবনা'। এই গান আসলে দুঃখ এবং মুগ্ধতার গল্প। এ গানে বলা হয়েছে একটি ছেলে একটি মেয়েকে খুবই ভালোবাসে। মেয়েটির মন খারাপ হলে তাকে খুশি করার জন্য ছেলেটি বিভিন্ন উপায়ে আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করে। মেয়েটি তাকে এত ভালোবাসে না জেনেও ছেলেটি তার মন কোনো দিনই পরিবর্তন করে না। দুর্ভাগ্যবশতে ছেলেটি অসুস্থ পড়ে মারা যায়। ছেলেটির মনে আশা তার মৃত্যুর পর মেয়েটি সুখি জীবন গড়বে। গানটিতে মেয়েটির প্রতি ছেলেটির অকৃত্রিম ভালোবাসার কথাই তুলে ধরা হয়েছে। এখন আমরা একসঙ্গে গানটি শুনি।
প্রিয় শ্রোতা, পরের গানের নাম 'অশ্রুর নাম'। অশ্রু বা চোখের জলের কোনো নাম আছে? বিশেষ একজন বা বিশেষ স্মৃতি স্মরণ করে আপনার চোখ থেকে হয়তো অশ্রু ঝরে। এ গানে বলা হয়েছে, যখন তোমার কথা আমার মনে পড়ে তখন আমার ভীষণ দুঃখ লাগে। আমার দুচোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে। অতীতের যেসব সুন্দর সময় আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছি সেসব অদৃশ্য সময় আর ফিরবে না। আমার অশ্রুতে তোমার নাম লেখা রয়েছে। তোমার মনে কি আমার নাম লেখা আছে?
সুপ্রিয় বন্ধুরা, পরের গানের নাম 'মিস'। এ গানের নাম শুনেই বোঝা যায় এটি কাউকে মিস করা নিয়ে লেখা একটি গান। এগানে বলা হয়েছে, খুব দূরে গিয়ে তুমি কি ভালো আছো? তোমার জীবন সুখি নাকি মন খুশি? আমি তোমাকে খুবই মিস করি। তুমি ফিরে না আসায় আমার খুব দুঃখ হয়, একা লাগে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি একদিন তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে। তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করছি.......।
প্রিয় বন্ধুরা, এসব গান শুনে আপনাদের মন হয়েতো একটু ভারি হয়ে উঠেছে। তাহলে এখন আমরা আনন্দে পরিপূর্ণ একটি গান শুনি। এ গানের নাম 'Double Double'। এই গান সিয়ে আন ছি এবং চীনের তরুণ গায়িকা জি খে চুন য়ির একসঙ্গে গেয়েছেন। এই গানটি বাস্কেটবল প্রতিযোগিতার থিম সঙ্গীত। এগানে প্রকাশিত হয়েছে তরুণ জীবনের প্রাণশক্তি আর সুন্দর ভবিষ্যতের আশা। চলুন, আমরা এখন একসঙ্গে গানটি শুনি।
বন্ধুরা, এতগুলো ম্যান্ডারিন গান শোনার পর চলুন এখন আমরা সিয়ে আন ছি'র গাওয়া দু'টি ক্যান্টোনিজ গান শুনি। প্রথম গানের নাম 'চিয়ং উ ইয়ান'। চিয়ং উ ইয়ান হলো প্রাচীন চীনের একজন বিখ্যাত নারী। খুবই কুতসিত দেখতে বলে তাকে কেউ পছন্দ করে না। কিন্তু নিজের বুদ্ধি, জ্ঞান আর চেষ্টার মাধ্যমে একদিন ছি রাজ্যের রাণী হয়ে সবার সম্মান পান। এই গানের মাধ্যমে সিয়ে আন ছি প্রকাশ করতে চান, একজন নারীর রূপই মূল সৌন্দর্য নয়। প্রতিটি নারীর নিজেকে উন্নত মানসিকতা ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। যাতে ভবিষ্যত ভালো হয়।
শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের শেষ গানের নাম 'পুরোন রোড'। এই গানে হংকংয়ের একটি পুরোন রোডের সত্যি গল্প বলা হয়েছে। সেই পুরোন রোড খুব সমৃদ্ধি ও ব্যস্ত ছিলো এক সময়। কোনো লোক বিয়ে করলে সেখানে গিয়েই জিনিস-পত্র কিনতো। কিন্তু এক সময় শহর সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কারণে রোডটি ধ্বংস করতে হয়। সেই রোডের সঙ্গে অনেকের স্মৃতি ও আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু তা আর থাকবে না। আসলে আমাদের জীবন সেই রোডের মতই। অতীতের সাফল্য-সমৃদ্ধি একদিন পাশ কেটে চলে যাবে। নতুন জীবন শুরু করতে হবে। মনে একটু দুঃখ লাগলেও ইতিবাচক ও আশাবাদী মনোভাব নিয়ে জীবন গড়তে হয়। আচ্ছা এখন গানটি শুনি আমরা।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান তাহলে এখানেই শেষ করছি। আশা করছি আমাদের অনুষ্ঠানে প্রচারিত গানগুলো আপনারা পছন্দ করেন। শুনে ভালো লাগে। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন ও সুস্থ্য থাকুন। আবার কথা হবে। যাই চিয়ান। (তুহিনা/মান্না)