1026huanqiu
|
বন্ধুরা, এখন তাহলে আমরা নোবেল পুরস্কার ২০১৫ সম্পর্কে জানবো, কেমন?
এ বছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছেন জাপানের তাকাকি কাজিতা ও কানাডার আর্থার বি. ম্যাকডোনাল্ড।
রহস্যময় মৌলিক কণা নিউট্রিনোর হেঁয়ালির পর্দা আবিষ্কারের জন্য তারা এ পুরস্কার পান।
রসায়নে নোবেল পেয়েছেন সুইডেনের টমাস লিনডল, যুক্তরাষ্ট্রের পল মডরিচ ও তুর্কি বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের অপর নাগরিক আজিজ সানজার।
ডিএনএ ক্ষয়ে গেলে শরীরের কোষগুলো কিভাবে সেটা মেরামত বা পুনরুদ্ধার করে, তা আবিষ্কারের জন্য তারা এ পুরস্কার পান।
চিকিত্সা বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন আয়ারল্যান্ডের উইলিয়াম সি ক্যাম্পেল, জাপানের সাতোশি ওমুরা ও চীনের ইউইউ তু।
পরজীবী সৃষ্ট রোগ নিরাময়ের চিকিত্সাপদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য তারা এ পুরস্কার পান।
ক্যাম্পবেল ও ওমুরা কেঁচো ক্রিমি সৃষ্ট রোগ প্রতিকারের নতুন চিকিত্সাপদ্ধতি আবিষ্কার করেন এবং ইউইউ তু ম্যালেরিয়ার নতুন চিকিত্সাপদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন বেলারুশের সুয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ।
লেখাকে বর্তমান সময়ের দুঃখবেদনা ও সাহসিকতার স্মারক করে তোলার জন্য তিনি এ পুরস্কার পান।
শান্তিতে নোবেল পেয়েছে তিউনিসিয়ার ন্যাশনাল ডায়ালগ কোয়ার্টেট। ২০১১ সালে তিউনিসিয়ার স্বৈরশাসনবিরোধী গণবিপ্লবের পর দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সফল সংলাপ আয়োজনের জন্য এ পুরস্কারটি প্রদান করা হয়।
এর অন্তর্ভুক্ত চারটি সংগঠন হলো, তিউনিসিয়ান জেনারেল লেবার ইউনিয়ন, তিউনিসিয়ান এমপ্লয়ার্স ইউনিয়ন, তিউনিসিয়ান হিউম্যান রাইটস লিগ ও তিউনিসিয়ান অর্ডার অব লইয়ার্স।
অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের অ্যাঙ্গাস ডিটন। ব্যয়, দারিদ্র ও জনকল্যাণ বিষয়ে গবেষণার জন্য তিনি মূলত এ পুরস্কারটি লাভ করেন।
ইউইউ তু বা তু ইউইউ ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চীনের একজন বিখ্যাত চিকিত্সা বিজ্ঞানী । তিনি ওষুধ আবিষ্কার করে লাখ লাখ মানুষকে ম্যালেরিয়া রোগে প্রাণ হারানো থেকে বাঁচান।
আসলে সময়ের কারণে আমরা প্রত্যেক পুরস্কার বিজয়ী সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে পারছি না। অবশ্য আপনারা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন তথ্য মাধ্যম থেকে এ সম্পর্কিত কিছু তথ্য পেয়েছেন।
আমরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সবাইকে আমাদের অন্তরের গভীর থেকে জানাই শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন। তাদের প্রচেষ্টায় আরো উন্নত হচ্ছে আমাদের এ পৃথিবী।
এখন আমরা নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে বেশ কিছু আশ্চর্যজনক ঘটনার কথা উল্লেখ করবো।
প্রথমেই আমরা দু:খজনক একটি ঘটনা তুলে ধরবো।
রাল্ফ স্টেইম্যান ২০১১ সালে চিকিত্সা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। এ খবরটি জানানোর জন্য পুরস্কার প্রদান কমিটি রাল্ফ স্টেইম্যানকে ফোন করেন। তবে তারা বুঝতে পারে না, কেন রাল্ফ ফোন ধরেন না। আসলে খুব দুঃখজনক ঘটনা হলো পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের তিন দিন আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
একটি বিষয় আমার কাছে খুব আশ্চর্যের মনে হয়, তা হলো 'আমি ঠিক তোমার কাছেই, তবে তুমি জানো না'। হ্যাঁ 'নোবেল পুরস্কার এসেছে, অথচ আপনি তিন দিন আগেই চলে গেছেন এ পৃথিবী ছেড়ে'।
আমরা সবাই জানি, নোবেল পুরস্কার হলো বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সবচেয়ে উচ্চ শ্রেণির পুরস্কার। যদি কেউ আপনাকে জানান যে, আপনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাহলে আপনি কি করবেন? সাধারণ লোকেরা হয়তো সে মুহূর্তে দিশেহারা হয়ে যাবেন।তারপর অতি সুন্দর কাপড় পরে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন, তাই না? তবে বিশ্বে সত্যি এমন বিশেষ এবং অনন্য মানুষ আছেন, তিনি এমন পুরস্কারকে পরোয়া করেন না।
ফ্রান্সের বিখ্যাত সাহিত্যিক, উপন্যাসিক, নাট্যকার জ্যঁ পল সার্ত্রে এমন একজন অনন্য ব্যক্তি।
যখন তিনি জানেন যে, তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তখনই তিনি এক বিবৃতির মাধ্যমে এ পুরস্কার গ্রহণ করতে অস্বীকার করার কথা ঘোষণা করেন। তার যুক্তি অতি সহজ, তিনি সারা জীবন কোনো সরকারি পুরস্কার গ্রহণ করেন নি। তা হলো তার নীতি।
আমরা সবাই জানি, বিজ্ঞানীরা অনেক ব্যস্ত থাকেন। তবে এমন একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আছেন, তিনি এত ব্যস্ত যে, নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করার সময়ও তার নেই।
১৯০১ সালে 'এক্স-রে'র উদ্ভাবনকারী জার্মান বিজ্ঞানী ইউলহেল্ম রোতজেন একটি চিঠি পান, চিঠিতে তাকে সুইডেনের স্টকহোমে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানানো হয়। আপনারা জানেন, প্রফেসর রোতজেন কি করেছেন? তিনি তার লেখা চিঠিতে লিখেছেন, স্টকহোম অনেক দূর, পুরস্কার গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের কাছে ছুটি নিতে হয়। খুব ঝামেলা হয় আমার কাছে। প্লিজ আমাকে পুরস্কার ও পদক চিঠির মাধ্যমে পাঠাবেন।
তারপর সুইডেনের জবাব হলো, পদক পাঠানো সম্ভব নয়, প্লিজ একবার আসুন। বাধ্য হয়ে রোতজেন স্টকহোমে আসেন। পুরস্কার ও পদক পাওয়ার পর পরই তিনি আবার জার্মানিতে ফিরে যান। পুরস্কারের পর নিয়মিত আলোচনা সভায় তিনিও অংশ নেন নি।
বর্তমানে সমাজে মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। খাবারের টেবিলে, বাসে, বাথরুমে, ঘুমানোর সময় এমনকি সবসময় মোবাইল ফোন আমাদের সাথেই থাকে। আপনি কি মোবাইলফোন ছাড়া বর্তমান জীবন কল্পনা করতে পারেন?
তবে আমাদের বিশ্বে সত্যি এমন লোক আছেন, তার যথেষ্ট টাকা আছে, তবুও তিনি মোবাইলফোন কোনোভাবেই ব্যবহার করেন না। ২০১৩ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর পিটার হিগ্স এমন একজন মানুষ। তিনি এখন পর্যন্ত মোবাইলফোন ব্যবহার করেন না। এর ফলে পুরস্কার কমিটি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেও পারেন না। আপনারা কি জানেন, অবশেষ তিনি প্রতিবেশীর অভিনন্দন থেকে জানতে পান যে, তিনি সে বছরের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
আরেকজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অনেক বেচারা। তিনি হলেন ১৯৯৫ সালের অর্থনীতিতে পুরস্কারের বিজয়ী রবার্ট লুকাস। ১৯৮৯ সালেই তার সাবেক স্ত্রী অনুমান করতে পারেন যে, লুকাস কোনো এক দিন নোবেল পুরস্কার পাবেন। তাই যখন তারা বিবাহবিচ্ছেদ করছেন, তখন তার সাবেক স্ত্রী একটি দাবি জানান যে, যদি লুকাস ১৯৯৫ সালের আগেই নোবেল পুরস্কার পান, তাহলে তাকে অর্ধেক পুরস্কার দিতে হবে। তা তখন লুকাসের কাছে যেন একটি হাসির গল্পের মত, তাই লুকাস এ দাবি গ্রহণ করেন। কে জানে, ১৯৯৫ সালে লুকাস সত্যি নোবেল পুরস্কার পান। লুকাস বাধ্য হয়ে আগের চুক্তি অনুযায়ী সাবেক স্ত্রীকে অর্ধেক পুরস্কার প্রদান করেন। যদিও তিনি তা শেয়ার করতে চান নি। (ফেইফেই/টুটুল)